ইনসাইড ইকোনমি

দিশেহারা মানুষ


প্রকাশ: 06/04/2022


Thumbnail

রোজা আসলেই দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়া এখন যেনো একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। যথারীতি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে বাজারে। বিশেষ করে রোজায় ব্যবহার্য পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। ইফতার এবং সেহরীতে যে পণ্যগুলো বেশি ব্যবহৃত হয় সেই পণ্যগুলোরই দাম ধরাছোয়ার বাইরে। দিনের ব্যবধানে দাম বাড়ছে এসব পণ্যের। কাল যেটা ৮০ টাকা, আজ সেটা ১২০ টাকা। অবস্থা চিত্রে মনে হচ্ছে এই দেশে বাজার মনিটরিং এর কেউ নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগই কার্যত সফল হচ্ছে না। মুনাফা লুটছেন ব্যবসায়ীরা, ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ মানুষের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিঃশ্বাস উঠেছে। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

রমজানের আগে ভোজ্যতেলসহ বেশকিছু পণ্যের শুল্ক কমানো, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাক্সফোর্স গঠন, কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্যবিক্রি এবং কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হয়। পবিত্র রমজান মাসে দেশের রোজাদারগণ পণ্যের জন্য যেন ভোগান্তিতে না পড়েন সে জন্যই এত উদ্যোগ। কিন্তু রোজায় কোনো পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। রমজান মাসে বাজারে যেন প্রতিটি পণ্যের মূল্যে আগুন লেগেছে। এক হালি লেবুর দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখতে এফবিসিসিআইকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দেশের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তারা কেউ কথা রাখেননি। সংগঠনটির পক্ষ থেকে ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করেও লাভ হয়নি।

রমজান শুরুর আগেই ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি সরকারের হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। বাজার থেকে ভোজ্যতেল উধাও হয়ে যায়। তবে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে দ্রব্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও রোজা শুরুর পর থেকেই নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সব নিত্যপণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মজুত, বাজারে সরবরাহ ও দাম পর্যালোচনা করে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে ১৭ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে উপদেষ্টা ও বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষকে সভাপতি করে ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ বিষয়ক এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের এই পদক্ষেপের পরও রোজায় ব্যবহার্য পণ্যের দাম কিছুতেই নাগালের মধ্যে আসছে না। 

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারসংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয়হীনতার কারণে দ্রব্যমূল্যে এই অরাজকতা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও করোনার সংক্রমণ কমার পর হঠাৎ করে চাহিদা বৃদ্ধি ও সরবরাহ সংকটের কারণে আন্তর্জাতিকসহ দেশীয় বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। রমজানকে ঘিরে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতায় পণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। অন্যদিকে তথ্যের অভাব বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির পথে বড় ধরনের বাধা তৈরি করছে। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির পরও জাতীয় সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির দাবি, ভোজ্যতেলসহ অন্য নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীলতার কারণে দেশে তেলের দাম বেড়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের যথাযথ এবং সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে দাম কমে আসতে শুরু করেছে। অবশ্য গতকাল এ নিয়ে সংসদে ক্ষোভের মুখে পড়েন বাণিজ্যমন্ত্রী। 

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে সাধারণ মানুষ বলছেন, দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা দাম বাড়েনি বা নিয়ন্ত্রণে আছে, এসব ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আসছে না পণ্যমূল্য। বাজার জুড়েই অস্বস্তি ও দীর্ঘশ্বাস। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে উদ্যোগ আছে, কিন্তু সুফল মিলছে না। তাই ভোক্তা স্বার্থ সুরক্ষায় আরো নতুন কৌশল গ্রহণ করা দরকার বলে তারা মনে করেন। এখন দিশেহারা মানুষের একটাই প্রশ্ন, আদৌও নিত্য পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে আসবে কি? 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭