ইনসাইড গ্রাউন্ড

আসলেই কি বলির পাঁঠা ডমিঙ্গো?


প্রকাশ: 07/04/2022


Thumbnail

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন রাসেল ডমিঙ্গো। এই দায়িত্ব পালনকালে প্রশংসার থেকে সমালোচনাই কুড়িয়েছেন বেশি। বাংলাদেশ দলের ধারাবাহিক খারাপ পারফরমেন্স তার দিকেই আঙ্গুল তুলতে বাধ্য করছিল সবাইকে। এমনকি বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকায় সফরে যাওয়ার আগে কোচ হিসেবে রাসেল ডমিঙ্গোর অবস্থান ছিল নড়বড়ে। প্রোটিয়া এই কোচ তো সাংবাদিকদের থেকে সরাসরি প্রশ্ন পেয়েছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা কী আপনার শেষ সফর?’ যদিও সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন ডমিঙ্গো। তার ওপর দলের সঙ্গে জেমি সিডন্স টাইগারদের কোচিং প্যানেলে যোগ দেওয়াতে অনেকে ডমিঙ্গোর শেষ দেখে ফেলেছিলেন। অনেকের ধারণাই ছিল ডমিঙ্গোর বিদায় হলে হয়তো জেমি সিডন্সই হবেন টাইগারদের হেড কোচ। কিন্তু সম্প্রতি বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের একটি মন্তব্যে এই সংশয় দূর হয়েছে। বিশেষ করে রাসেল ডমিঙ্গোর স্থানটা পাকাপোক্ত হয়েছে। কিন্তু আসলে কি রাসেল ডমিঙ্গো এতই ভালো কোচ? তাকেই কি সব সময় আসলেই বলির পাঁঠা বানানো হয়?

মূলত দক্ষিণ আফ্রিকায় ঐতিহাসিক ওয়ানডে সিরিজ জেতায় ডমিঙ্গোর অবস্থান আবার জোরালো হয়। তবে সর্বশেষ ডারবান টেস্টে বাংলাদেশ হেরে যায় ২২০ রানের ব্যবধানে। আর এত বড় ব্যবধানে হারা পরও ডমিঙ্গোর অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এবার অবশ্য কোচ নয়, দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তো সরাসরি বললেন, ‘খারাপ পারফরম্যান্সের পর আমরা শুধু শুধু ডমিঙ্গোকে বলির পাঁঠা বানানোর চেষ্টা করি।’ তার অর্থ দাঁড়ায় খারাপ খেলার জন্য শুধু বাংলাদেশের খেলোয়াড়দেরই দায় রয়েছে। কোচের কিছুই দায় নেই?

এই ডমিঙ্গোর ছায়াতলে বাংলাদেশ দল হেরেছে একের পর এক ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হারের পর নিউজিল্যান্ডেও বিধ্বস্ত হয়ে এসেছে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। এমনকি শ্রীলঙ্কায় এক ম্যাচে ড্র করার পর অন্যটিতে হারতে হয়েছে মুমিনুল বাহিনীর। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের হতশ্রী পারফরমেন্স মনে রাখবে সবাই। এই অবস্থায় যখনই বাংলাদেশ দল দেশের বাইরে বা হোম কন্ডিশনে কোনো একটি ম্যাচ জেতে তখনই রাসেল ডমিঙ্গোর কদর বাড়ে। আর পেছনের সব কথা ভুলে যাওয়া হয়। 

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। তবে সিরিজের প্রথম টেস্টে চারদিন ভালো খেলেও পঞ্চম দিন নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ভয়াবহ ব্যাটিং ব্যর্থতায় লজ্জার হার দেখতে হয়। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫৩ রানে অলআউট হতে হয়। এই আউট হওয়া দেখে হাসছিলেন রাসেল ডমিঙ্গো। আর কাঁদছিল পুরো দেশ। এরপরও বাংলাদেশের এমন হারে দলের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো পাশে পেলেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনকে। ক্রিকেট ভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে বিসিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার মনে হয়, যেকোনো খারাপ পারফরম্যান্সের পর আমরা অযথা ডমিঙ্গোকে বলির পাঁঠা বানানোর চেষ্টা করি। সব ক্রিকেটার কি ডমিঙ্গোর কথা শোনে? আমি জানতে চাই, ক্রিকেটাররা কি সত্যিই শোনে তারা (কোচরা) কী বলতে চায়?’

বিসিবি প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, ‘যেসব ক্রিকেটার ডমিঙ্গোর কথা শোনে তারা ঠিকই উন্নতি করছে। আমি লিখে দিতে পারি, যদি ১৫ জন ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলি, অন্তত ১১ জন বলবে ডমিঙ্গো দুর্দান্ত কোচ। দুই-তিনজন হয়তো আছে যারা ভিন্ন কথা বলবে। তারা কোচের কথা শোনে না। যারা কোচের কথা শোনে না, তাদেরকে জিজ্ঞেস করে লাভ কী? যারা কোচের সঙ্গে কাজ করছে, তাদের কথা শুনতে হবে। যখন তারা ফিরবে তখন কোচের সামনে সবার সঙ্গে বসে সব কিছু সমাধান করব। ’

ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের খারাপ খেলার পেছনে যেমন ক্রিকেটারদের দায় আছে, তেমনি দায় রয়েছে কোচেরও। একটি কোচ যে শুধু দলের ভালো পারফরমেন্সের দায় নেবে আর খারাপ হলে তার দায় নেবে না তা হতে পারে না। একজন কোচকে দলের সব বিষয়ে নজর রাখতে হবে। তাই বিসিবি প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যে ডমিঙ্গোকে আরও জবাবদিহিতার উর্ধ্বে উঠিয়ে দিতে পারে। তাই ব্যর্থতার দায়ভার সবার নেওয়া উচিত। এখানে কাউকে বলির পাঁঠা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে হয় না। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭