তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি আর ভাবি আমরা কত অসহায়। আমাদের এই অসহায় অবস্থা হয়তো কারও কারও আনন্দের। আমার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখার সময় পাশ থেকে কেউ যেন জিজ্ঞেস করে: কি দেখো ? এমনি মধুরভাবে সেই উচ্চারণ - আমি সেই স্মৃতিকে বুকে নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে আরও দেখি। মনে পড়ে অনেক কিছু। মনে পড়ে বঙ্গবন্ধুর কথা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার কথা। মনে পড়ে ফেসবুকের অনেক কমেন্ট। বাংলাদেশ কি তবে নেতৃত্বের সংকটে ? নিজেকে প্রশ্ন করি বারবার। কারণ একটি মহল মনে করে বাংলাদশের সকল সংকটের মুলে নেতৃত্বের অভাব। চাই বঙ্গবন্ধুর মতো শক্তিশালী নেতা যার কণ্ঠস্বর হ্যামিলনের বাঁশিয়ালাকে হার মানায়। আমি ফিরে যাই ১৯৭১ সালের দিনগুলিতে। সেদিন সাড়ে সাত কোটি মানুষের ঋদয় ছুঁয়ে গিয়েছিলো তার রেসকোর্স ময়দানের ভাষণ। আজ আমাদের অনেক মিডিয়া আছে কিন্তু নেই সেই বজ্র কণ্ঠ। নেই সেই জোরালো ভাষণ -তোমরা দাবায় রাখতে পারবানা।
এসব ভাবতে ভাবতে আমি আজ ফিরে এলাম এই লেখায়। গতকাল দুপুর বেলা থেকে মনটা খারাপ। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে আরেক দফা অপেক্ষা। এবার জুন নয় ডিসেম্বর হবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন। রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে কিছু মালামাল আসতে পারছে না বলে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন পিছিয়ে যাচ্ছে। এই মনখারাপ নিয়ে নির্ঘুম রাত কেটেছে। এই সময় একজন বঙ্গবন্ধু বলতে পারতেন তোমরা দাবায় রাখতে পারবেনা। তিনি আজ নেই তাই হয়তো আমাদেরকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আমরা শুনছি পদ্মা সেতুর মূল কাজ প্রায় ১০০ ভাগ শেষ হয়েছে। হয়তো কিছু ফিনিশিং টাস্ক বা বাতি লাগানোর প্রয়োজন। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে আমরা সতর্কভাবে এমাসেই পদ্মা সেতু চালু করতে পারি কিন্তু! পারি , একশত বার পারি ! প্রয়োজন সদিচ্ছার। রাতে বন্ধ রেখে দিনের বেলায় পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল করতে পারে !
আমি এখন কারও রূপ দেখছিনা আমি দেখছি জনদুর্ভোগ।
সেই দুর্ভোগ দেখছি সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে দাঁড়িয়ে। এখানে এক দুর্বিষহ পরিস্থিতি। মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে কাজে যাবে। এখানে একটি ফুট ওভার ব্রিজ আছে। সেটার একদিকে প্রস্রাব খানা বানিয়েছে কিছু বিবেক হীন মানুষ। এখানে নেই এসকালতর। সেটি লাগানো বা সেটির অর্থ সংকুলান যে একেবারে কঠিন তা নয় কিন্তু। এখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর একটি কলেজ সিটি কলেজ। গতকাল একটি লাইব্রেরির বই ভুল করে ব্যাংকার এটিএম এর উপর রেখে এসেছিলাম। সেটা আনতেই আমি সাইন্স ল্যাবরেটরির মোড়ে। সবদিকে যানজট। আমি নির্বোধের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি জনদুর্ভোগ। আমার কোনো শক্তি নেই , কণ্ঠ নেই জোরালোভাবে বলি এভাবে চলতে পারে না। কেবল আমারই নেই কি? এদেশের কারোই নেই সেই শক্তি যা ছিল বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে। আমরাই তাকে টুঙ্গিপাড়া রেখে এসেছি। আমাদের কিছু লোভী মানুষ সেজন্য দায়ী।
বইটা আনতে ব্যাংক এর সমানে গিয়ে দেখলাম সিঁড়ির দুইপাশে অনেক মা-বোন। হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। কেউ আবার কোরান শরীফ পড়ছেন। আমি ব্যাংকের দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম ওনারা কারা? দারোয়ান বললো ওনারা ওই সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মায়েরা। ওনারা এসেছেন মেয়েকে নিয়ে এবং এখানে অপেক্ষা করবেন ক্লাস শেষ হবে তার পর মেয়েকে নিয়ে চলে যাবেন। কি এক কঠিন সমস্যা। শহরের বখাটেদের হাতে আমরা জিম্মি। কেউ নেই ওই বখাটেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করবার। এইতো গেলো সেদিন স্ত্রীর একটি সমস্যা নিয়ে কথা বলতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলাম। ঠিক বংশাল থানার সামনেই ছিনতাইকারী পেছন থেকে টানদিয়ে সকাল সাড়ে দশটায় নিয়ে গেলো আমারি পাশে বসা সোনার চেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এক অধ্যাপককে বললাম। তার ভাব খানা এতো কিছুইনা। যখন থানায় গেলাম কেস করতে তখন ওই ছিনতাইকারীদের সম্পর্কে জানলাম পুলিশ অফিসারদের কাছ থেকে। তারা অসহায় ! তারা ধরে আনে আর কোর্ট জামিন দিয়ে দেয়। একজন বললো আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা ক্লাস না নিয়ে বেতন নিয়ে যাচ্ছে সেখানে এই মাদকাসক্ত ছিনতাইকারী কেবল পেটের দায়ে এরকম চুরি করছে।আমার সহকর্মীর এই কথা যে মিথ্যে তা আমি অস্বীকার করতে পারি না।
আমরা অনেকেই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি কিভাবে আমাদের সম্পদ ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে একটি মহল।
ঢাকার যানজট নিমিষেই সমাধান করা যায়। মাননীয় এক সাংসদ সেদিন পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলছিলেন মেগাপ্রকল্পগুলো শেষ হলে যানজটের সমাধান হয়ে যাবে। আমার পাশে যিনি ওই বক্তৃতা শুনছিলেন তিনি বললেন -কোনোদিন হবে না। মিথ্যে আশা দেয়া রাজনীতিবিদের কাজ। আমি তাকিয়ে তার মুখখানা দেখি।হয়তো তিনি সত্যি কথাটা বলছেন।
করোনার ভয়াবহতা আমরা ভুলে গেছি। আমরা আবার গাড়ির দোকানে যাচ্ছি। ঐ যে বখাটে ছেলেটা, ওই যে দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারি কর্মকর্তা, ওই যে মাস্তান তাদের হাতে আমরা জিম্মি। মাস্তানরা কোরোনাকালে হাউমাউ করে কেঁদেছে।আর বলেছে যদি বাঁচি আমি ভালো হয়ে যাবো।সকলেই সকলের শপথ ভেঙে আবার নিপিড়ন, ফাঁকি দেয়া , নির্যাতন , ভয় দেখানো কাজে নেমেছি। আবার শুরু হয়েছে যুদ্ধ , লুটপাট সবকিছু। আমরা যে পশু তার প্রমান রাখছি প্রতিদিন। আর তাই পত্রিকার পাতা ভরে যায় দুঃসংবাদে। আমাদের নেতা নেই। তাই আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে ফিরি। আমাদের মুক্তি নেই যে মুক্তির স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন। আমাদের স্বাধীনতা নেই যে স্বাধীনতার স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখিয়েছেন। আমরা বন্দি এক জটিল নেতৃত্ব সংকটের জালে।রোজাদার মানুষ দিনের শেষে মুক্তি চায়।আল্লাহ যেন তাদের ডাকে সাড়া দেন। সকাল বেলা উঠে যেন সে দেখতে পায় সব ভালো হয়ে গেছে। আমীন !