ইনসাইড বাংলাদেশ

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মার্কিন প্রীতি কি সরকারের অবস্থান?


প্রকাশ: 07/04/2022


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন মার্কিন মুলুকে। ওয়াশিংটনে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই  বৈঠকের পর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতায় গদগদ হয়েছেন এবং তিনি এমনসব কথাবার্তা বলেছেন যাতে সরকারের বিভিন্ন মহল বিব্রত। তিনি বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে আশ্রয় দিয়েছিল যখন তিনি রাষ্ট্রহীন ছিলেন। এজন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছেন। এছাড়াও তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর দেখে মনে হলো যে, এরশাদ আমলের বা বেগম খালেদা জিয়ার আমলের কোন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করছে। যে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের বা রাষ্ট্রদূতদের খুশি করাই ছিল বাংলাদেশের সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ এবং তারা মনে করতেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যদি খুশি না রাখা যায় তাহলে পরে হয়তো ক্ষমতাই চলে যাবে। এমনকি মার্কিন রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং সরকার প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাত করতেন এমনভাবে যেন তিনি এদেশের প্রভু। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই অবস্থান থেকে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বাংলাদেশ নির্ভরশীল নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রভু নয়, পার্টনার এমন একটি বোধ তৈরি করেন। এরকম অবস্থায় চলছিল গত ১৪ বছর।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশকিছু ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগের কৌশল গ্রহণ করে। বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়নি। এছাড়াও র‍্যাবের ৭ জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলার কৌশল নিয়েছে। যদিও এই চাপ বাংলাদেশের জন্য কোন বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় ছিলো না। কারণ, বাংলাদেশ এখন আর আগের অবস্থানে নেই, বাংলাদেশে এখন আত্মনির্ভরশীল জাতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ খুব বেশি নির্ভরশীল নয়। কিন্তু এরকম পরিস্থিতির মধ্যেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে অনেকটাই নতজানু হলেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঋণ প্রকাশ করলেন, তিনি কীভাবে ঋণী সেটা জানালেন। পাশাপাশি তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নীতি-কৌশলের প্রশংসা করলেন। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সবচেয়ে আপত্তিকর বিষয় ছিলো যে, বিএনপি যেন নির্বাচনে আসে সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তদারকি।

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশের নির্বাচন কিভাবে হবে, কোন দল নির্বাচন করবে, কোন দল নির্বাচন করবে না, সেটি একান্তই আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ জানানোর এখতিয়ার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে কে দিলো? কারণ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সবসময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ব্যাপারে বিদেশী হস্তক্ষেপের নিন্দা করেন এবং তিনি কখনই এটাকে প্রশ্রয় দেন না, সমর্থন করেন না। বাংলাদেশের নির্বাচন কিভাবে হবে সেটি বাংলাদেশের জনগণ, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশের সরকার এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলি ঠিক করবে। এরকম বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী বহুবার করেছেন। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য কেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য কি সরকারের বক্তব্য? সরকার কি চাপে পড়ে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুগ্রহ চাইছে নাকি এটি স্রেফ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অবস্থান? এটি বাংলাদেশের স্বার্থেই পরিষ্কার হওয়া দরকার যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মার্কিন প্রীতি আসলে সরকারের অবস্থান কিনা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭