গত ২ মাস ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম উধ্ধগতি থাকেলেও রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে তা আবার কমতে দেখা গেছে। কিন্তু রমজান মাস শুরু হতে না হতেই আবার দাম বাড়তে থাকে। বিশেষ করে রোজায় ইফতারে ব্যবহার্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া শুরু করে। এর মধ্যে উল্লেখ হলো বেগুন, শসা, লেবু, ধনেপাতা। গত দুই সপ্তাহে একাধিকবার ওঠানামা করেছে এসব পণ্যের দাম।
রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে এসমস্ত খাদ্যপণ্যের দাম একাধিকবার ওঠানামা করেছে। রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে যে দামে বাজারে বেগুন, শসা, লেবু, ধনেপাতা ও পেঁয়াজ বিক্রি হতো, রোজার দুই দিন আগে হঠাৎ প্রতিটি পণ্যের দাম কেজি/হালিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার এই পাঁচটি খাদ্যপণ্যই কেজি/হালিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে।
রোজা শুরুর আগে বেগুনের দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। সেই বেগুন রোজা শুরুর দুই দিন আগে (১ এপ্রিল) বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আবার রমজান মাস শুরুর ৫ দিনের মাথায় এসে গতকাল বেগুনের দর ছিল মানভেদে প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। একইভাবে ডিম, মুরগি ও গরুর মাংসের দামও গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিন দফা ওঠানামা করেছে।
কাচাঁবাজারের এমন অবস্থা দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করছে সাধারণ ভোক্তাগণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে সরকারের সঠিক তদারকির ঘাটতি থাকায় এমনটি ঘটেছে। তাঁরা বলছেন, রোজাকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে কিছু ব্যবসায়ী অন্যায় সুযোগ নিয়েছেন। প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন ক্রেতারাও। রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর বড় বাজারে গতকাল সবজি কিনতে আসা মাহামুদ বলেন, রোজা শুরুর আগে লোকজন বেশি করে নিত্যপণ্য কেনা শুরু করায় সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরাও বাড়তি দাম নিয়েছেন। সরকারের কঠোর নজরদারি থাকলে এমন ঘটনা কমে আসবে।
যেসব সবজির দাম রোজা শুরুর আগে হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল, সেসব সবজি কেজিতে আগের চেয়ে ১০ থেকে ৩০ টাকা কম দামে গতকাল বিক্রি করতে দেখা যায়। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট, কল্যাণপুরের নতুন বাজার ও কারওয়ান বাজারে গতকাল প্রতি কেজি শসা ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। যদিও রোজা শুরুর আগে ও পরের দুই দিন মানভেদে প্রতি কেজি শসার দাম ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর রোজার এক সপ্তাহ আগে শসার কেজি ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকা।
রোজাকে কেন্দ্র করে কেজিতে অন্তত ৩০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হওয়া ধনেপাতা গতকাল বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। রোজার এক সপ্তাহ আগে এই দামেই বিক্রি হয়েছিল ধনেপাতা। আর রোজা শুরুর আগে ও পরের দুই দিন ধনেপাতা বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। দাম কমেছে টমেটোরও। গতকাল এই সবজির প্রতি কেজি দর ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আর রোজার আগের দুই দিন দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।
বাড়তি দামের দিক থেকে সব সবজিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল লেবুর। মানভেদে প্রতি হালিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া লেবু রোজার আগে ও পরের দুই দিন বিক্রি হয়েছিল ৭০ থেকে ১০০ টাকায়। গতকাল মানভেদে মাঝারি আকারের লেবুর হালি ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকা। এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা কমে আগের ২৫ থেকে ৩০ টাকায় ফিরে গেছে।
ক্রেতাদের জন্য স্বস্তির খবর হচ্ছে, চিনি, ছোলা ও বেসনের দাম কিছুটা কমেছে। খোলা চিনির দাম কেজিতে ৪ টাকা কমে গতকাল ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে কল্যাণপুরের নতুন বাজার ও কারওয়ান বাজারে। একইভাবে ছোলার দাম কেজিতে ৫ টাকা কমে এখন ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইফতারি তৈরির উপকরণ বেসন (বুটের ডালের তৈরি) গতকাল বিক্রি হয়েছিল ১১০ টাকা কেজি। রোজার শুরুর আগে দাম ছিল ১২০ টাকা।
এ ছাড়া চায়না রসুন ১১০ টাকা ও আদা ৯০ টাকা কেজি দরে গতকাল বিক্রি হয়েছে। মোটা ও চিকন চালের দামে কোনো পরিবর্তন না থাকলেও নিম্নবিত্তের প্রয়োজনের তালিকার শীর্ষে থাকা বিআর-২৮ চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা কমে ৫০ টাকা হয়েছে।
এদিকে সরকার নির্ধারিত নতুন দামের ভোজ্যতেল বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে এখনো বেশির ভাগ দোকানে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কিছু দোকানে প্যাকেটজাত (পলিথিনে) এক লিটারের সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। দাম ১৬০ টাকা। সরকার নির্ধারিত দামের মধ্যে শুধু পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। দাম ৭৬০ টাকা।
মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট বাজার ও কল্যাণপুরের নতুন বাজারে গতকাল গরুর মাংসের কেজি ছিল ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা। যদিও রোজার শুরুর আগের দিন এই দুই বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয় ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি। রোজার এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৬২০ থেকে ৬৫০ টাকায়।
গরুর মাংসের পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগি, সোনালিকা (কক) মুরগি ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কমেছে। গতকাল ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। রোজা শুরুর এক দিন আগে বিক্রি হয়েছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। এ ছাড়া ৩০০-৩২০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া সোনালিকা মুরগি গতকাল ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর হালিতে ১ থেকে ২ টাকা কমে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি গতকাল হয়েছে ৩৪ টাকায়।
গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, অল্প সময়ের ব্যবধানে সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্যের দামে বারবার ওঠানামা প্রমাণ করে ব্যবসায়ীরা অন্যায় সুযোগ নিচ্ছেন। এতে বোঝা যায়, সঠিক তদারকির অভাব আছে। এসব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোও তৎপর হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।