ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনের পর জাতীয় সরকারের ‘মূলা’


প্রকাশ: 08/04/2022


Thumbnail

বিএনপির কয়েকজন নেতা বলছিলেন যে, নির্বাচনকালীন সরকার একটি জাতীয় সরকার হতে পারে, জাতীয় সরকারের প্রধান হবেন একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি। অন্যদিকে, জেএসডির আ স ম আব্দুর রব দেশের সংকটের জন্য জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন, একই দাবি জানিয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ আরো কয়েকজন। কিন্তু এখন বিএনপি নেতারা অন্য সুরে কথা বলছেন। বিএনপি বলছেন যে, জাতীয় সরকার নির্বাচনের আগে না নির্বাচনের পরে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। হঠাৎ করে নির্বাচন পরবর্তী সরকার জাতীয় সরকার, এই বক্তব্য বিএনপি সামনে নিয়ে এসেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় সরকারের ‘মূলা’ ঝুলিয়ে বিএনপি অনেকগুলো ফায়দা হাসিল করতে চায়। সেজন্যই নির্বাচন পরবর্তী সরকার জাতীয় সরকার হবে, এরকম ঘোষণা দিতে চাচ্ছে। এটি বিএনপি'র কৌশলগত অবস্থান। বিএনপি নেতারা এখন বলছেন যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আর নির্বাচনের পরে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সরকার। নির্বাচনের পরে কেন জাতীয় সরকার গঠিত হবে, এই বক্তব্যের ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেছে যে, এর পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক অনেকগুলো কারণ।

প্রথমত, বিরোধী দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো কোন ব্যক্তি নেই। বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনের জন্য অযোগ্য, তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না, প্রধানমন্ত্রী নয়ই। দু'টি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। অন্যদিকে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অবস্থা আরো খারাপ। তিনি একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত, আরেকটি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত। তিনি লন্ডনে পলাতক, তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এড়িয়ে তিনি লন্ডনে জীবনযাপন করছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিও প্রার্থী হতে পারবেন না। এর বাইরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মত যোগ্যতাসম্পন্ন আর কোন নেতা এই মুহূর্তে নেই। আর প্রধানমন্ত্রীর পদ কে পাবেন, এ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা থেকেই বিএনপি জাতীয় সরকারের দাবি আনছে। বাংলাদেশসহ সব দেশই একজন নেতাকে দেখতে চায়, যেই নেতার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে, যদি বিএনপি বা বিএনপি দলীয় জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে কে প্রধানমন্ত্রী হবে? এরকম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মত ব্যক্তি এখন এই মুহূর্তে বিএনপি বা অন্য কোনো বিরোধী দল নেই। বিরোধী দলে যে নেতারা আছেন সেই নেতারা কেউই পরিপূর্ণ জাতীয় নেতা নন এবং জাতীয় নেতা হিসেবে এই মুহূর্তে তাদের আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। আর এই কারণেই কৌশলগতভাবে তারা জাতীয় সরকারের দাবি উপস্থাপন করছেন।

দ্বিতীয়ত, জাতীয় সরকারের দাবি উপস্থাপন করে তারা ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে ভেড়াতে চাইছে, তাদের জন্য এক ধরনের টোপ হিসেবে এটি কাজ করবে যে টোপে তারা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন এবং নির্বাচন করবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নির্বাচনে জোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে জাতীয় পার্টি এবং জামায়াত এখনও বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে একটি ভারসাম্যের বিন্দু। প্রকাশ্যে জামায়াতকে নিতে পারছে না বিএনপি কিন্তু গোপনে জামায়াতের সঙ্গে তারা আছে। এখন অন্যান্য ছোট ছোট রাজনৈতিক দলকে যদি জাতীয় সরকারের মুলা দেখিয়ে নিতে পারে তাহলে সেটি তাদের জন্য একটি বড় ধরনের প্রাপ্তি হবে।

তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারা দেখাতে চায় যে বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রতিহিংসাপরায়ণ হবেনা, সকলকে নিয়ে দেশ চালাবে, হিংসা এবং প্রতিশোধের সংস্কৃতি থাকে তারা বেরিয়ে আসবে। এ কারণে তারা জাতীয় সংসদ জাতীয় সরকারের প্রস্তাবকে সামনে আনছে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, আগে তো নির্বাচনে বিএনপিকে যেতে হবে এবং সেই নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী হতে হবে। তারপর তো সরকার গঠনের প্রশ্নটি আসবে। এই নির্বাচনে যদি বিএনপি বিজয়ী না হয় তাহলে জাতীয় সরকারের প্রসঙ্গ অবান্তর এবং অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে। বিএনপি আসলে নির্বাচনে হুল হওয়ার মতো শক্তি আছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। বারবার বিএনপি বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক চমক আনার চেষ্টা করে নিজেরাই বিভ্রান্তি, ধাঁধার মধ্যে পড়েছে। জাতীয় সরকার বিএনপির তেমনি একটি বিভ্রান্তি বলে অনেকে মনে করেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭