ইনসাইড টক

আমাদের সিনেমায় গল্প নেই: পুলক অনিল


প্রকাশ: 09/04/2022


Thumbnail

পুলক অনিল, শোবিজ অঙ্গনের বেশ পরিচিত মুখ। যিনি কাজ করেন পর্দার পেছনে। বর্তমানে তিনি দেশের অন্যতম বিজ্ঞাপনী সংস্থা  'অ্যাডকম'এ ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োজিত আছেন। পাশাপাশি গত চার বছর ধরে তিনি ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পের ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু তাই নয়, ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পের নাটকে যতগুলো গান আমরা দেখেছি, সবগুলো গানই তার লেখা। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারের ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসারও তিনিই ছিলেন।


নানামুখী প্রতিভার অধকারী এই মানুষটির সাথে সমসাময়িক নানান বিষয় নিয়েই কথা হলো বাংলা ইনসাইডারের । জানালেন তাঁর বর্তমান ব্যস্ততাসহ নানা কথা।

বাংলা ইনসাইডার:
বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করার পাশাপাশি কবিতা লিখা নিয়ে বেশ ব্যস্ত আপনি। কবিতা লিখার সাথে যুক্ত হলেন কবে থেকে?

পুলক অনিল: আমার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ পায় ২০১৪। যেটির নাম ছিলো 'আমার তখন কান্না পাচ্ছিলো খুব'। এরপর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা লিখেছি। এরপর অবশ্য তেমনভাবে আর কবিতা লিখিনি। পরবর্তীতে দুইটি উপন্যাস লিখেছি। যেগুলো ২০১৫ ও ২০১৬ তে। এর মাঝে ২০১৬ তে লেখা উপন্যাসটি রকমারির টপ টুয়েন্টিতে ছিলো। এরপর আসলে নানা ব্যস্ততার কারণে তেমনভাবে কবিতা ও উপন্যাস লিখা হয়নি। তবে আশা করছি ২০২৩ এ কবিতা ও উপন্যাস নিয়ে দর্শকদের কাছে হাজির হবো।

বাংলা ইনসাইডার:  প্রথমবার যখন ক্লোজআপ কাছে আসার গল্পের ক্রিয়েটিভ হেড হিসেবে দায়িত্ব নিলেন, তখন প্রথম চ্যালেঞ্জটা কী ছিল?

পুলক অনিল: প্রথমত আমরা যেটা চেয়েছিলাম, সেটা হচ্ছে আগের বছর দর্শকদের কাছ থেকে যে পরিমাণ গল্প আমাদের কাছে এসেছিল, তার চেয়ে অন্তত দশ পার্সেন্ট গল্প বেশি আসুক। যাতে আমাদের কাছে আরও কোয়ালিটি স্টোরি আসে এবং এজন্য টেলিভিশন কমার্শিয়ালটা এমনভাবে বানানো হয়েছিল যাতে সেটা মানুষের মনে নাড়া দেয়। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আমাদেরই গল্পে একটা চমৎকার টিভিসি নির্মাণ করলেন এবং তার ফলশ্রুতিতে অংশগ্রহণ বেড়েছিল। আমাদের টার্গেট ছিল আগের বছরের চেয়ে লেখার পরিমাণ দশ পার্সেন্ট বাড়ানো, আল্লাহর রহমতে সেটা ডাবল হয়ে গিয়েছিল।

দ্বিতীয় টার্গেট যেটা ছিল, সেটা হচ্ছে ফরম্যাটে পরিবর্তন আনা। কাছে আসার গল্পটা ধীরে ধীরে রেগুলার নাটকের মতো হয়ে যাচ্ছিল। সেখান থেকে আমরা ঠিক করি যে এটার দৈর্ঘ্যকে শর্টফিল্মে নামিয়ে আনব। সেই জায়গা থেকে আমরা ফিল্মমেকার, আরও এক্সপেরিয়েন্সড মেকার, বা ভিন্নধর্মী নির্মাতা যারা আছেন, তাদেরকে এনে ভিন্নতা আনতে চাচ্ছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় অনম বিশ্বাস, রায়হান রাফী, শঙখ দাসগুপ্ত, অমিতাভ রেজার মতো নির্মাতারা কাছে আসার গল্প নিয়ে কাজ করেছেন। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল আমরা প্রোডাকশন ভ্যালুটা বদলে ফেলব। নানা লিমিটেশনের মধ্যে থেকে আমাদেরকে কাজ করতে হয়। কিন্তু গল্পগুলোর যথাযথ ট্রিটমেন্ট যাতে আমরা দিতে পারি, সেজন্যেই এত আয়োজন।



বাংলা ইনসাইডার: বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করার পাশাপাশি আপনি একজন কবি, গানও লেখেন। কাছে আসার গল্পের গত তিন সিজনের নয়টি গান আপনার লেখা। গান লেখার সময় কোন বিষয়টিকে প্রাধাণ্য দেন আপনি?

পুলক অনিল: আমি আসলে ক্যাম্পেইনের থিম লক হওয়ার পরে গান লিখি। এধরণের গানগুলো লিখতে আমার খুব বেশি সময় লাগে না। ক্যাম্পেইনের থিমটা জানার কারণেই সময়টা কম লাগে।

বাংলা ইনসাইডার: নিজেকে কোন পরিচয়ে দেখতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে? গীতিকার, কবি, নাকি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্মী?

পুলক অনিল: আমি দুপুর বারোটার দিকে অফিসে ঢুকি। তখন থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত আমি বিজ্ঞাপনকর্মী। রাত দশটা থেকে ঘুমানোর আগে পর্যন্ত আমি কবি। কবি হিসেবে আমার এক ধরণের সামাজিক পরিচয় আছে, সেটা আমি উপভোগ করি। যারা আমাকে কবি মনে করেন, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। নিজেকে নিজে কবি বললে তো কবি হবো না আমি, আমাকে মানুষের কবি বলতে হবে।

বাংলা ইনসাইডার: বিজ্ঞাপনী সংস্থায় যুক্ত হওয়ার পিছনের গল্পটা কী?

পুলক অনিল: বিজ্ঞাপনী সংস্থায় যুক্ত হওয়াটা আমার হুট করেই। আমার গুরু প্রয়াত রাসেল অনিল আর আমি পত্রিকায় কাজ করতাম। ভাই প্রথম জিঙ্গেল লিখা শুরু করলে আমিও তাঁর সাথে লিখা শুরু করি। এরপর সিনেমায় গান, জিঙ্গেল লিখে কোনভাবে জীবন কাটাই।



২০০৭ সালে আমি প্রথম বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরি শুরু করি। বিজ্ঞাপনী সংস্থা 'দুই শালিক'কে আমার প্রথম কর্মজীবন শুরু। আসলে সত্য কথা বলতে শুরু দিকে আমার বিজ্ঞাপনী সংস্থায় বিভিন্ন বিষয় মানিয়ে নেয়া কষ্ট হতো কেননা আমিতো ভেতরে ভেতরে কবি। এমনো অবস্থা হয়েছে যে আমার দুইবার চাকরি চলে যেতে নিয়ে ছিলো শুধু মাত্র সব কিছু মানিয়ে না নিতে পারার কারণে। যাক সব কিছু মিলিয়ে একবছর পর মানিয়ে নিতে পেরেছি।

বাংলা ইনসাইডার: দেশের বিজ্ঞাপনের মান কতটা ভালো হচ্ছে বলে আপনি মনে করে?

পুলক অনিল: দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশের সবচেয়ে ভালো চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা কিংবা অনেক ক্রিয়েটিভ মানুষই বিজ্ঞাপনের সাথে যুক্ত আছে কিংবা ছিলেন। কেননা বিজ্ঞাপনে টাকা আছে, সিকিউরিটি আছে। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে বিজ্ঞাপন ইজ অল আবাউট সেলিং প্রোডাক্ট। সেই জায়গা থেকে আমাদের দেশে অনেক ভালো মানের বিজ্ঞাপন হচ্ছে। তাঁর মানে যে বাজে কাজ হচ্ছে না তা না। অবশ্যই হচ্ছে! তবে তাঁর সংখ্যা কম।

বাংলা ইনসাইডার: বর্তমান ব্যস্ততা?

পুলক অনিল: বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করার পাশাপাশি গত কয়েক বছরে বেশ কিছু ছবির স্ক্রিপ্ট লিখেছি। পাশাপাশি সিনেমার গানও লিখেছি। এরমাঝে আরেফিন শুভর 'নূর' ছবির স্ক্রিপ্ট আমার লিখা। পাশাপাশি আরও কিছু নতুন ছবির গল্প ও গান লিখার কথা চলছে। আলাপ- আলোচনা চলছে। ঈদের পর সব ফাইনাল হবে। 


বাংলা ইনসাইডার:
আমাদের দেশের সিনেমা নিয়ে আপনার মতামত কি?

পুলক অনিল: আমাদের দেশের সিনেমার সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস হলো সিনেমায় গল্প নেই। আমাদের দেশে অনেক ভালো নির্মাতা আছে কিন্তু ভালো স্ক্রিপ্ট রাইটার নাই। একেবারে যে নাই তা বলবো না। যারা আছে তাঁরা সবাই বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করে। কারণ তাঁরা সিনেমা থেকে বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট লিখে বেশী টাকা পায়। সুতরাং সব কিছু মিলিয়ে যদি সিনেমা নির্মাণ করা যায় থাহলে অবশ্যই আরও ভালো মানের ছবি নির্মাণ হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭