ইনসাইড বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কা ইস্যুতে সরব আমলারা


প্রকাশ: 12/04/2022


Thumbnail

গতকাল প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যারা বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করেছে তাদের কঠোর সমালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেন যে, তিনি পত্রিকা পড়ে দেশ চালান না। যারা বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করছে তারা ইচ্ছে করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরপরই আজ চার আমলা সংবাদ সম্মেলন করে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনার কঠোর সমালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের নেতৃত্বে প্রেস ব্রিফিংয়ে আমলাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, প্রধানমন্ত্রীর সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

ওই সংবাদ সম্মেলনে ড. আহমদ কায়কাউস স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে সঙ্গে তুলনা করা দুঃখজনক এবং লজ্জাকর। ওই সংবাদ সম্মেলনে ইআরডি সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার ঋণ পরিশোধের তুলনামূলক হার উপস্থাপন করে বলেন যে, বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক ভালো। একই সংবাদ সম্মেলনে অর্থসচিব গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন যে, বাংলাদেশের যে ফরেন রিজার্ভ রয়েছে সেই ফরেন রিজার্ভ পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার সম্মিলিত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের দ্বিগুণেরও বেশি। এই সংবাদ সম্মেলনের কোন বক্তব্যই অসত্য নয়, কোন বক্তব্যই খণ্ডনযোগ্য নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, একটি রাজনৈতিক সরকারের আমলারা ঘটা করে এরকম সংবাদ সম্মেলন করলেন কেন? এই সংবাদ সম্মেলন কেন মন্ত্রীরা করলেন না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গত কিছুদিন ধরেই সরকারের মধ্যে আমলাতন্ত্রের প্রভাব এবং প্রতিপত্তি নিয়ে কথাবার্তা বলা হচ্ছে। এমনকি সংসদে বিরোধী দলের নেতারাও অভিযোগ করেছেন যে, এখন আমলারাই দেশ চালাচ্ছেন, রাজনীতিবিদরা এখন সাইড লাইনে বসে আছেন, রাজনীতিবিদদের কোন ক্ষমতা নেই। আর একই সঙ্গে কোন কোন সরকারি দলের প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরাও আমলাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকের ক্ষমতা নিয়েও সমালোচনা করেছিলেন। কিছুদিন হলো আমলাদের দৃশ্যমান তৎপরতা অনেক কম ছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ইস্যুতে আমলারা যেন আবার রাজনীতির মাঠের কর্তৃত্ব দখল করলেন। প্রশ্ন উঠেছে যে, বাংলাদেশ সরকার পরিচালনার রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান হলেন মন্ত্রীগণ এবং মন্ত্রণালয়ের বিষয়াদি সম্বন্ধে মন্ত্রীরাই জানাবেন। তাহলে কেন ইআরডি সচিব বা অর্থসচিবকে কথা বলতে হবে? ইআরডি সচিব বা অর্থসচিব কথা না বলে বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী কেন কথা বললেন না?

অবশ্য অর্থমন্ত্রী দুদিন কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার তুলনাকে অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার তুলনার বিষয়টিকে নাকচ করে দিয়েছেন একনেকের বৈঠকে। তারপর আমলারা হঠাৎ করে সরব হলেন কেন? বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আমলাদের এই ধরণের ঐক্যবদ্ধ সংবাদ সম্মেলন বেশকিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাহলে কি আমলারা প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য এই কথাগুলো বলেছেন? নাকি আমলারাই আসল খবর জানেন, মন্ত্রীরা সাইডলাইনে বসে আছেন -সেজন্যই কথা গুলো বলা হচ্ছে। অথবা আমলারা এই ঘটনাকে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের একটা সুযোগ হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন এবং এই সুযোগটাকে তারা হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না। নির্বাচনের দুই বছরেরও কম সময়ের আগে রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করা উচিত বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। সে কারণেই এ ধরনের রাজনৈতিক বিতর্কে আমলারা নয়, বরং সামনের সারিতে রাজনীতিবিদদেরই মানুষ দেখতে চায়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭