পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাংলা কলেজে ‘ছাত্রলীগ কর্মীদের’ হামলার শিকার হয়েছেন বাংলা কলেজ সাংবাদিক সমিতির (বাকসাস) সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক নয়া শতাব্দীর সহ-সম্পাদক জাফর ইকবাল- এমন অভিযোগ উঠেছে। এসময় কলেজ যুব থিয়েটারের সম্পাদক ও বাকসাস’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমানের ওপরও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।
হামলার শিকার এই দুজন জানান, মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে কলেজ ক্যাম্পাসে এ হামলায় প্রত্যক্ষ অংশ নেন- পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের (শিক্ষাবর্ষ: ২০১৬-১৭) শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী (শিক্ষাবর্ষ: ২০১৭-১৮) বিজয় মাহিদ, মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের (শিক্ষাবর্ষ: ২০১৬-১৭) শিক্ষার্থী মিথুন হালদার আকাশ ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের (শিক্ষাবর্ষ: ২০১৫-১৬) শিক্ষার্থী সুজন মিয়া। তারা প্রত্যেকেই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মী।
জানতে চাইলে আতিকুর রাহিম বলেন, সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়াই কলেজের বিভিন্ন সংগঠনের দায়িত্বশীলদের ওপর ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীদের এরকম হামলার বিষয়টি দুঃখজনক। সামান্য ফেসবুক গ্রুপকে কেন্দ্র করে যারা এ ধরণের অপকর্ম করতে পারে তারা ছাত্রলীগের সোনালী অর্জনগুলোকে নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে বলে মনে হচ্ছে। এ ধরনের কর্মীদের প্রতি সিনিয়রদের সতর্ক থাকা উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কলেজটিতে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় ভিন্ন গোষ্ঠী অনুপ্রবেশ করে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ক্যাম্পাসে প্রতিনিয়ত বিশৃঙ্খলা করে যাচ্ছে। যারা বিশৃঙ্খলা করে ছাত্রলীগে তাদের স্থান নেই। এদের শক্ত হাতে দমন করা হবে।
আরেক নেতা বলেন, সিনিয়র নেতৃবৃন্দের আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তারা আদৌ ছাত্রলীগের কর্মীরা কিনা সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হবে। অনেক অছাত্র ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রলীগের নাম দিয়ে সুযোগ হাসিলের চেষ্টা করছে, ঘটনা এমনও হতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিকটিম সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে বাংলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি এবং সিনিয়র ছাত্রনেতা তোফাজ্জল হোসেন পলাশের সাথে ‘বাংলা কলেজ পরিবার’ নামক ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিনশিপ বিষয়ে কথা বলার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের নিউজ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম রাহুল ও অন্যান্য সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, এর আগেও সম্প্রতি কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী দ্বারা বাকসাস’র দুজন নেতা হামলার শিকার হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। পরে ‘এমন আর হবে না’ বলে বিষয়টি মিটমাট করেছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খান।
ঘটনার বিষয়ে বাকসাস সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল বলেন, আমি মূলত বিকেলে কলেজের নির্মাণাধীন ভবনের নিউজ সংগ্রহ করতে যাই। অনেকদিন ধরে ভবনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এর পাশাপাশি কলেজের একটি ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিনশিপের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে আমরা ছাত্রলীগ নেতা পলাশ ভাইয়ের সাথে কথা বলি। এক পর্যায়ে পলাশ ভাই নামাজে চলে যান এবং এর কিছুক্ষণ পর লাঠিসোটা দিয়ে আতিক ভাইয়ের ওপর হামলা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে মিটমাটের চেষ্টা করা হলে পেছন থেকে চার-পাঁচ জন লাঠি দিয়ে আমার ওপর হামলা করে।
জাফর বলেন, এটি সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার বিরুদ্ধে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া এই ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে ছাত্রলীগ নামধারী এসকল দুর্বৃত্তদের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে বাংলা কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ফেরদৌসী খান’কে ফোন দিলে তিনি বলেন, এখন মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে ঝামেলা আছে। ১৮ তারিখ তাদের নিয়ে বসে বিষয়টা মিটমাট করবো।