ইনসাইড বাংলাদেশ

ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বাড়ায় বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি


প্রকাশ: 13/04/2022


Thumbnail

ঢাকা শহরে প্রতিনিয়ত যে হারে মানুষ বাড়ছে, তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানির ব্যবহার। গরম শুরু হওয়ার পর থেকে সেই চাহিদা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। অতিরিক্ত গরম এবং রোজায় পানি খরচ হচ্ছে বেশি। একবারের জায়গায় দুই বার গোসল বা খাওয়ার পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়াসহ নানা কাজে পানির ব্যবহার হচ্ছে। অনেকে নানাভাবে পানির অপচয় করছেন। পানি সরবরাহকারী সরকারি সংস্থা ঢাকা ওয়াসা বর্ধিত এ পানির চাহিদা মেটাতে আস্থা রাখছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর। ফলে বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন। চাহিদা বাড়ার ফলে বসানো হচ্ছে গভীর নলকূপও। জানা গিয়েছে, এখন ওয়াসা দিনে যে পরিমাণ পানি সরবরাহ করছে তার ৬৬ শতাংশই মাটির নিচ থেকে তোলা হচ্ছে। 

ওয়াসা জানাচ্ছে, গত এক যুগে পানির চাহিদা মেটাতে গভীর নলকূপের সংখ্যাও বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তারপরও পানির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সংস্থাটি। 

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস থেকে ব্যবহার বাড়াতে না পারলে ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়বে। এ কারণে ওয়াসাকে মাটির নিচের পানির ওপর চাপ কমাতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে ভূ-উপরিস্থ পানি পরিশোধন করে সরবরাহে। পাশাপাশি বৃষ্টির পানি ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে।

তবে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসীম এ খানের দাবি, রাজধানীতে পানি সরবরাহে ভূ-উপরিস্থ উৎসে জোর দেওয়া হচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ৭০ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।

ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, এক যুগ আগেও ঢাকায় পানি সরবরাহে বেশ ঘাটতি ছিল। তখন দিনে পানি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৮৮ কোটি লিটার। পরে পানি সরবরাহ দ্রুত ও বহুমুখী করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় ওয়াসা। এই পদক্ষেপে তারা গভীর নলকূপ স্থাপনে বেশি গুরুত্ব দেয়। এখন নগরে গভীর নলকূপের সংখ্যা ৯০৬টি। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আরও অন্তত ২০টি নলকূপ স্থাপনের কাজ চলছে।

জানা যায়, ২০১৪ সালে সাভারের ভাকুর্তায় ৫৭২ কোটি টাকা খরচ করে একসঙ্গে ৪৬টি গভীর নলকূপ বসায় ঢাকা ওয়াসা। এ নিয়ে তখন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এখন ১৫ কোটি লিটার পানি উত্তোলনে সক্ষম এই প্রকল্পের পানি ঢাকার মিরপুরে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে প্রতিদিন ১৫ কোটি লিটার সরবরাহের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। ফলে মিরপুর এলাকায় পানি সংকট তীব্র হয়েছে।

এদিকে মহাখালী, বনানী, গুলশান ঢাকা ওয়াসার জোন-৫ এর আওতাধীন। ২০১৯ সালে এই এলাকাগুলোতে পানির তীব্র সংকট ছিল। তখন এই জোনের বিভিন্ন স্থানে একসঙ্গে আটটি নতুন নলকূপ স্থাপনে অনুমোদন দেয় ওয়াসা। এর মধ্যে মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইপিএইচ) সংলগ্ন মন্দির গলিতে একটি নলকূপ স্থাপন করা হয়। এই কূপ থেকে আড়াই হাজার গ্রাহককে ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু দিনে কী পরিমাণ পানি এই পাম্প থেকে ওঠানো হচ্ছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দেশের বিভিন্ন এলাকার এক হাজার ২৭২টি কূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির বাড়া-কমা পর্যবেক্ষণ করে। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, ঢাকায় ১৯৯০ সালে ১৩০টি গভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলন করা হতো। তখন পানি পাওয়া যেত সাড়ে ২২ মিটার নিচ থেকে। ২০০৫ সালে নলকূপের সংখ্যা বেড়ে হয় ৪২৩, পানির স্তর নামে ৫৪ মিটারে। ২০২২ সালে এসে নলকূপের সংখ্যা ৯শ ছাড়িয়ে গেছে। আর পানির স্তর নেমেছে অন্তত ৮০ মিটারে।

ভূর্গভস্থ পানি অফুরন্ত নয় জানিয়ে ওয়াটার এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা শহরে বিপজ্জনভাবে ভূর্গভস্থ পানি কমে যাচ্ছে। ওয়াসাকে নদীর পানি ব্যবহারের পাশাপাশি বৃষ্টির পানি ব্যবহার বাড়াতে হবে। বৃষ্টির পানি সবচেয়ে বিশুদ্ধ। এটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, এখন কলকারখানার বর্জ্যের কারণে নদী-নালা, খাল-বিল, হ্রদ, পুকুর, ঝরনা, প্রভৃতির পানি (সার্ফেস ওয়াটার) দূষিত হচ্ছে। বিশেষ করে গাজীপুরের কলকারখানা থেকে সার্ফেস ওয়াটারে দূষণ বেশি ছড়ায়। এ দূষণের কারণেও পানি দূষিত হচ্ছে এবং স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।

এদিকে, মেঘনা নদীর পানি পরিশোধন করে রাজধানীতে সরবরাহ করতে ৯ বছর আগে সোয়া পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছিল ওয়াসা। তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পরও এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪৫ শতাংশ। এখন এই প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয়েছে আট হাজার কোটি টাকা। শোধনাগার ও পানির লাইনের নির্মাণকাজ শেষে কবে নাগাদ মেঘনা নদীর পানি ঢাকাবাসী পাবে সেটি নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

পদ্মা নদীর পানি রাজধানীতে সরবরাহ করতে তিন হাজার ৬৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু শোধনাগার থেকে পানি রাজধানীতে নিতে সরবরাহ লাইনই স্থাপন করেনি ওয়াসা। এতে শোধনাগারের সক্ষমতার প্রায় ৫০ শতাংশই অব্যবহৃত থাকছে দুই বছরের বেশি সময় ধরে। ফলে নির্ধারিত সময়ে ভূ-উপরিস্থ পানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না ওয়াসা।

জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাছের খান গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা শহরে চাহিদার ৮০ শতাংশ পানি ভূর্গভস্থ থেকে মেটায় ওয়াসা। এতে প্রতিবছর পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এভাবে কমতে থাকলে ভূমিকম্পসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক ঝুঁকি বাড়তে থাকবে। তাই ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে ওয়াসাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭