ইনসাইড টক

'যতক্ষণ ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ না হবে ততক্ষণ সন্ত্রাস বন্ধ হবে না'


প্রকাশ: 13/04/2022


Thumbnail

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাস বন্ধ হবে না। এই হুঁমকি সন্ত্রাস, নির্যাতন, লাঞ্চনা, ভিন্ন মত, ভিন্ন জীবনে যারা বিশ্বাসী বা বাঙালি সংস্কৃতির মতো যা কিছু সবকিছুই হুঁমকির মধ্যেই থাকবে। 

অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার রায়, নববর্ষে জঙ্গি হামলার আশঙ্কাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় শাহরিয়ার কবির এসব কথা বলেন। পাঠকদের জন্য শাহরিয়ার কবির এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর প্রধান বার্তা সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান।

শাহরিয়ার কবির বলেন, রমনার বটমূলে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা যেমন জেগেছে, গোটা সমাজেরই তো মৌলবাদীকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ জেগেছে। শুধু রমনার বটমূলে নয়, সারাদেশেই এটি হয়েছে। এটি তো খুবই উদ্বেগের। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা ঢুকে গেছে। সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এই মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক অপশক্তি তো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশাসনের সহযোগিতা পাচ্ছে। হ্যাঁ, বোমা হামলা হয়তো আগের মতো হচ্ছে না। কিন্তু তাদের যে বক্তব্যগুলো, এই যে সাম্প্রতিককালে যেসব ঘটনাগুলো ঘটলো। নওগাঁর স্কুলে কিংবা গোলাপগঞ্জের স্কুলে কিংবা মুন্সিগঞ্জের স্কুলে, এখানে লতা সমদ্দার এগুলাে কোনোটাই তো স্বস্তিদায়ক ঘটনা নয়।

তিনি বলেন, সবগুলো ঘটনাই তো আমাদের উদ্বেগ এবং ক্ষোভের বিষয়। এগুলো বাড়ছে তো। এখানে যে অপরাধীরা নববর্ষের বিরুদ্ধে হুঁমকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? যে মোল্লা ধর্মীয় সমাবেশে ফতোয়া দিলো যে হিন্দু মেয়েদের শাঁখা-সিঁদুর পড়তে দেওয়া হবে না, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? তাহলে এই হুঁমকিগুলো বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। এখানে নববর্ষের জন্য হুঁমকি নয়, এই হুঁমকি সমস্ত বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর, বঙ্গবন্ধুর দর্শনের ওপর। এটি বিচ্ছিন্নভাবে কোনো হুঁমকি নয়। এটি শুধু ছায়ানটের অনুষ্ঠানের হুঁমকি নয়, আমরা তো দেখছি সর্বত্রই হুঁমকি। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাস বন্ধ হবে না। এই হুঁমকি সন্ত্রাস, নির্যাতন, লাঞ্চনা, ভিন্ন মত, ভিন্ন জীবনে যারা বিশ্বাসী বা বাঙালি সংস্কৃতির মতো যা কিছু সবকিছুই হুঁমকির মধ্যেই থাকবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলায় ৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশের বিষয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, এই হত্যা মামলায় যাদের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে তারা আসলে মাঠ পর্যায়ের জঙ্গি। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন সাঈদিকে এই মামলায় কেনো আসামী করা হলো না। সে তো পার্লামেন্টেও বলেছে, প্ররোচিত হয়ে এই ছেলেগুলো এই কাজ করেছে। এই মামলার তো প্রধান আসামী হওয়া উচিত দেলোয়ার হোসেন সাঈদির। দেরিতে হলেও আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। অনেক দেরিতে হলেও রায় এসেছে। মাঠ পর্যায়ের ৪ জন জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, এই মামলার বিষয়ে আমি প্রথম থেকেই বলছি, এই মামলার এক নাম্বার আসামী হবে যে হুকুমের আসামী দেলোয়ার হোসেন সাঈদি। যে পার্লামেন্টে বলেছে, হুমায়ুন আজাদের বই বের করবার পর তার জন্য ব্ল্যাসফেমি আইন পাশ করতে হবে এবং হুমায়ুন আজাদকে শাস্তি দিতে হবে। ব্ল্যাসফেমি আইন অর্থ মৃত্যুদণ্ড। সেটার দণ্ড তার অনুসারীরা কার্যকর করেছে। কাজেই তার অনুসারীদেরকে আপনি শাস্তি দেবেন, আর সাঈদিকে বহাল তবিয়তে কারাগারে রেখে দেবেন, সেটা তো হতে পারে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭