ইনসাইড বাংলাদেশ

যেসব ইস্যুতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দুই মেরুতে


প্রকাশ: 13/04/2022


Thumbnail

এখন বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাকে তুলনা করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশটি। আর এরকম একটি পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন রকম মেগা প্রজেক্ট করার কারণে, বৈদেশিক ঋণ এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে। আর এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটতে পারে বলে সুশীল সমাজে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণের জন্য তাগিদ দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার তার কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে বৈঠকে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, বাংলাদেশের সাথে শ্রীলঙ্কার কোনভাবেই তুলনা করা যেতে পারে না এবং যারা এটা করছে তাদের দুরভিসন্ধি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এটিও বলেছেন যে, বাংলাদেশ কখনোই ঋণখেলাপি হয়নি এবং ভবিষ্যতে হবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরপরই গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আমলারা এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এই সংবাদ সম্মেলনে আমলাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার যে পার্থক্য, সেটি তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ কখনোই শ্রীলঙ্কা হবে না। 

শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন অনেক ভালো। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ঋণের হার এবং ঋণ পরিশোধের হার ইত্যাদি সবকিছু শ্রীলঙ্কার উপরে। তবে বাংলাদেশ কখনোই শ্রীলঙ্কা হবে না এর পিছনে কতগুলো ব্যবহারিক কারণও রয়েছে এবং এই ব্যবহারিক কারণগুলোকে যদি আমরা দৃষ্টিপাত না করি তাহলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা ভুল হিসেব-নিকেশ আমরা বারবার করতেই থাকবো। বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে কিছু কিছু বিষয় আছে যেটা দুই মেরুতে এবং যেই বৈপরীত্বের জন্য বাংলাদেশ কখনোই শ্রীলঙ্কা হবে না এর মধ্যে রয়েছে,

১. জাতিগত বিভক্তি: শ্রীলঙ্কার মধ্যে তীব্র জাতিগত বিভক্তি রয়েছে এবং সেখানে সিংহলিদের এক ধরনের আধিপত্য রয়েছে। তামিলদের সঙ্গে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ এবং হত্যাযজ্ঞের পর শ্রীলঙ্কার যে আপাত ঐক্য, সেই ঐক্যটি আসলে এক ধরনের মেকি ঐক্য বলেই অনেকে মনে করছেন। শ্রীলঙ্কা একটি বিভক্ত জাতি। সে তুলনায় বাংলাদেশ জাতিগতভাবে এক ঐক্যবদ্ধ জাতি। আমরা শুধু জাতীয়তাবাদের থেকে নয়, ধর্মীয় দিক থেকেও আমরা বিভক্ত মুক্ত একটা দেশ এবং এই রাষ্ট্রের ঐক্যের সূত্রগুলো আমাদের ভাষা, ধর্ম এবং সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে প্রথিত। কাজেই জাতিগত বিভক্তিহীন একটি দেশ কখনো জাতিগত বিভক্ত একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে না এবং জাতিগত বিভক্ত একটি রাষ্ট্রের পরিণতি কখনোই ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি বহন করবে না।

২. বড় বড় শিল্প ও ব্যবসায়িক গ্রুপ: বাংলাদেশের যে শক্তিশালী বেসরকারি খাত রয়েছে এবং বড় বড় শিল্প পরিবার, ব্যবসাহিক গ্রুপ তৈরি হয়েছে যেটি শ্রীলঙ্কায় তৈরি হতে পারে নাই। এই শক্তিশালী বেসরকারি খাত দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা এবং এগিয়ে নেবে তাদের নিজেদের স্বার্থেই। সেজন্যই বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার পার্থক্য অনেক ব্যাপক। 

৩. শক্তিশালী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প: বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এই শক্তিশালী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। যেটা শ্রীলঙ্কাতে কখনোই ছিল না। 

৪. অভিবাসীদের রেমিটেন্স: অভিবাসীদের রেমিটেন্সে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার থেকে অনেক এগিয়ে। শ্রীলঙ্কার অনেক অভিবাসীরাই প্রাণের টান অনুভব করেন না। তারা শ্রীলঙ্কায় টাকা পাঠান নি। বরং শ্রীলঙ্কায় তাদের যে আত্মীয়-স্বজন আছে তাদেরকে অন্য দেশে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি তা নয়। বাংলাদেশের অভিবাসীরা দেশের টানে, মাটির টানে দেশে ফিরে আসে। এটি আমাদের একটি বড় ধরনের ইতিবাচক অবস্থান। যে কারণে বাংলাদেশ কখনোই শ্রীলঙ্কার মতো হবে না।

৫. অভ্যন্তরীণ বাজার: বাংলাদেশের শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ বাজার আছে। বাংলাদেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা আছে এবং এই অভ্যন্তরীণ বাজারের কারণে আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বেসরকারি খাতগুলো উৎপাদন করতে থাকবে এবং অর্থনীতিতে একটি গতি প্রবাহ থাকবে। যেটি শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে কম ছিল। শ্রীলঙ্কার অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল আমদানিনির্ভর। এটি তাদের জন্য একটি বড় ধরনের ক্ষতের কারণ ছিল। আর এ কারণেই বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দুই মেরুদে অবস্থান করা দেশ। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার তুলনা করাটাই অবান্তর। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭