ইনসাইড আর্টিকেল

সাম্প্রদায়িকতার হাতছানিতে বিবর্ণ বৈশাখ


প্রকাশ: 14/04/2022


Thumbnail

১৯৪৭ এ ভারত বিভক্তির ২৪ বছর পর দ্বিজাতি তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে সকল ধর্মের লোকেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জন্ম হয় ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশের। অত্যন্ত আধুনিক, প্রগতিশীল, সাম্য, সমতা, সকলের জন্য ন্যায়বিচার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে যাত্রা শুরু করে এই দেশটি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়েই শুরু হয় বাংলাদেশের উল্টো পথে যাত্রা, যা আজও থামেনি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও কিছু মানুষ যেমন সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদর্শন ও চিন্তা-চেতনা থেকে মুক্ত হতে পারেনি তেমনি কিছু মানুষ এই সাম্প্রদায়িকতাকে আষ্টে-পিষ্টে জড়িয়ে আছে। ক্লান্তিহীন সমাজে ঘৃণার চাষবাদ করছে। তারাই বারবার ধর্মের দোহাই দিয়ে নিপীড়ন করেছে চিরকালের চেনা প্রতিবেশী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে, খুন করেছে, নির্বাসন দিয়েছে প্রগতিশীল লেখক ও শিল্পীকে। অপমান করছে নিজের সংস্কৃতিকে। জ্বালিয়ে দিতে উদ্ধত হয় চিরচেনা সম্প্রীতির সমাজ।

এমনই এক সময়ে দীর্ঘ দুই বছরের করোনা মহামারী কটিয়ে আবারও বাংলার প্রাণের উৎসব, বর্ষবরণ উৎসব পালন করছে বাংলাদেশের মানুষ। এবার নতুন বছরকে বরণ করার জন্য সারাদেশ গ্রহণ করেছে নানা ধরনের প্রস্তুতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে শুরু করে, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নানা ধরনের আল্পনা এবং রং-তুলির আচড়ে সাজিয়ে তুলেছে তাদের ক্যম্পাস। দীর্ঘ দুই বছর পর রমনার বটমূল সেজেছে তার আপন সাজে। মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে, হবে হাজারো প্রাণের মিলনমেলা। কিন্তু এই মিলনমেলাতেও রয়েছে সাম্প্রদায়িকতার কালো ছায়া। এই বর্ষবরণ উৎসব, যেটা বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব। এই উৎসব সকল ধর্মের, সকল বর্ণের। কিন্তু এই উৎসবকে ঘিরেই সাম্প্রদায়িক মৌলবাদীদের যত তৎপড়তা। 

বাংলা নববর্ষ আমাদের জাতীয়তাবোধ ও চেতনাকে শাণিত করে। বর্ষবরণের উৎসবে এ চেতনাকে নস্যাৎ করার জন্য স্বাধীনতার আগে ও পরে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। চেতনায় আঘাত করা হয়েছে বার বার। বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক শক্তির কোনো অপচেষ্টাই সফল হয়নি। বাঙালি জাতি নববর্ষকে ধারণ করেছে তাদের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হিসেবে। কিন্তু এই অনুষঙ্গই আজ হুঁমকির সম্মুখীন। সাম্প্রদায়িকতার কালো ছায়া পুরাে জাতিকে ঢেকে ফেলার পায়তারায় লিপ্ত। বর্ষবরণ উৎসবকে ঘিরে সম্প্রদায়িক মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীর হুঁমকি তারই প্রমাণ। এরা বাঙালি জাতির এই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অংশগ্রহণমূলক এই অনুষ্ঠানকে নষ্ট করতে চায়। মূলদত ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ই এই বর্ষবরণ। মৌলবাদ ও ধর্মীয় জঙ্গিবাদের উত্থানের বিরুদ্ধে বাঙালির শাশ্বত অবস্থান জানিয়ে দেওয়াই এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পহেলা বৈশাখ কোনো ধর্মীয় উৎসব নয়। এটি বাঙালির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব। আশির দশক থেকে স্বৈরাচারদের মদদে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানের উপর ধর্মের রঙ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে বাঙালি বারবারই কুসংস্কার, গোঁড়ামি উপেক্ষা করে সার্বজনীন এই উৎসব পালন করে আসছে। বাঙালি জাতি পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ঐক্যবদ্ধ হয়, বাংলাদেশের জাতিসত্তাকে সমুন্নত রাখে। এই সর্বজনীন জাতীয় উৎসবকে সুশৃঙ্খলভাবে উদ্যাপন করতে হবে জাতীয় ঐক্যকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে।

সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এমনভাবে এই পহেলা বৈশাখকে টার্গেটে রূপান্তর করেছে যে, তারা যেকোনো মূল্যই এই বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসবকে বন্ধ করতে চায়। শুধু এই বিষয়ই নয়, টিপ কাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের কি হয়েছে তা জাতি দেখেছে। নওগাঁয় হিজাব পড়কে কেন্দ্র করে বা বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের ঘটনা সবই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িকতার উজ্জল উদাহরণ। সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদর্শন ও চিন্তা-চেতনা থেকে মুক্ত হতে পারেনি এরাই এই সমাজে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করছে। তারই উদাহরণ বর্ষবরণ উৎসবকেও একটি নির্দিষ্ট ধর্মের বানানো অপচেষ্টা। এই সাম্প্রদায়িকতার হাতছানিতেই পালিত হচ্ছে বিবর্ণ পহেলা বৈশাখ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭