ইনসাইড থট

রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রুতা বা বন্ধুত্ব নাই


প্রকাশ: 15/04/2022


Thumbnail

রাজনীতি সম্পর্কে জানেন এমন লোক নয়, সাধারণ লোকজনও এখন জানেন আসলে স্থায়ী কোনো বন্ধুত্ব নাই, শত্রুতাও নাই। যেটা স্থায়ী রূপ আছে সেটা হচ্ছে স্বার্থ। অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে যদি বিচার করা হয় কোন দলের সাথে কতটুকু সম্পর্ক হবে, এটা নির্ভর করে যার যার স্বার্থের উপর। ঠিক ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রেও তাই, প্রতিবেশী রাজনীতির ক্ষেত্রেও তাই। এইজন্য দেখা যায় যে, অনেকে সাহায্য এবং বন্ধুত্বকে গুলিয়ে ফেলেন। অনেক সময় অর্থনৈতিক কারণে একটি দেশ আরেকটি দেশের থেকে সুবিধাজনকভাবে অবশ্যই অর্থনৈতিক সাহায্য গ্রহণ করে, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও তাই করে। কিন্তু এর দ্বারা স্বাভাবিকভাবে বোঝায় না যে তাতে বন্ধুত্ব হয়ে গেল এবং বিপদের সময় যেহেতু ভালো ব্যবসা আছে, অর্থনৈতিক অনেক শক্তি আছে এই কারণে আরেকজনের পাশে সে দাঁড়াবে। এটা কখনো কোনো দেশেই হয় নাই এবং হবেও না। এর মধ্যেও আবার রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে চলতে হবে, কিভাবে চলবে এটি চিন্তা করতে হবে। আমাদের একটি মৌলিক প্রশ্ন যদি আমরা বুঝতে পারি তাহলে এটা বোঝা সহজ হবে। সেটি হচ্ছে যে, একজন রাজনীতিবিদ অর্থই কিন্তু একজন রাষ্ট্রনায়ক না। এর ভিতরে অনেক পার্থক্য। একজন রাষ্ট্রনায়কই রাষ্ট্রের প্রতিটি জিনিস তাৎক্ষণিক, কিছুদিন পরে কি হবে, ভবিষ্যতে কি হবে, একজন একমাত্র দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যদি রাষ্ট্রনায়ক দেশ পরিচালনা করেন তার পক্ষেই এটা বোঝা সম্ভব। বুঝলে সুবিধা কি? সুবিধা হচ্ছে এই যে, তাহলে তিনি যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেন সেই পদক্ষেপগুলো অনেকে যারা তার বিরোধিতা করছে, তারা ঐ পদক্ষেপের অর্থ যখন ভালো করে বুঝতে পারে তখন আর তিনি সেই জায়গায় নাই। রাষ্ট্রনায়ক ইতিমধ্যে কিভাবে দেশ পরিচালনা করবেন অথবা কিভাবে বন্ধুত্ব রাখবেন, কিভাবে কার সাথে কি সম্পর্ক হবে সেই পথে কিন্তু ইতিমধ্যে পরিবর্তন করেছেন। অতএব এখানে আমি সরাসরি বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়েই এখন বলছি।

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এখন সবচেয়ে বড় শক্তি কি? অবশ্যই বড় শক্তি যেটা আমরা সকলেই জানি যে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এক-এগারোতে তা প্রমাণ দিয়েছেন। যেমন- রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার পিতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে চা খেয়ে, একসাথে চুঙ্গা (তাঁর ভাষায় তখনকার দিনে) ফুঁকিয়ে রাজনীতি শুরু করে একটি স্বাধীন দেশ আমাদেরকে তিনি উপহার দিতে পেরেছিলেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে তাঁর এইরকম যোগাযোগ ছিল, এইরকম শক্তি ছিল। কিন্তু তখন পাকিস্তানের কারাগারে এবং মৃত্যুর দুয়ারে যেকোনো সময় বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলবে এটাই ছিল তখন স্বাভাবিক ঘটনা। তবুও আমাদের যাদের মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য হয়েছে, আমরা কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নামেই যুদ্ধ করেছি। তখন বঙ্গবন্ধুর নামটাই শুধু। কারণ উনাকে জীবিত পাবো, তারপর দেশ স্বাধীন হবে, কবে হবে সেটা তো জানিনা। তারপর সেখান থেকে উনি ফিরে আসবেন এটা তখন কারও মাথায় সেভাবে আসে নাই, আসা সম্ভব ছিল না। তারপরে তাকে হত্যা করার পরে ২১ বছর অপরাজনীতি চললো। তারপর তার কন্যা আসলেন। মাত্র ত্রিশের কোঠায় তার বয়স। কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে তিনি মনে করেন যে, ত্রিশের কোটা পর্যন্ত সমস্তটাই তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সাহচর্য পিতা-মাতা দ্বারা। যার জন্য তিনি বড় মেয়ে হওয়ার কারণে তার বয়স যাই হোক না কেন পিতার সাথে কথা বলেছেন, মায়ের সাথে কথা বলেছেন। যার জন্য একটা কঠিন সময় দেখা গেল যে, তখনকার দিনে ইডেন কলেজে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন যেখানে তার দলীয় সমর্থন ২০ শতাংশ ছিল কিনা আমাদের সন্দেহ আছে। কারণ, তখন আমরা ছাত্র রাজনীতিতে বেশ সক্রিয়।

এই যে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা, তার আসল ক্ষমতা হচ্ছে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর যে দূরদর্শিতা সেটি। এই দূরদর্শিতার সাথে যোগ হয়েছে, এই যে তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে তার সম্পর্ক কখনোই ফিকে হতে দিচ্ছেন না, দূরে চলে যাওয়া তো দূরের কথা। মাঝে মাঝে আমরা সকলেই লক্ষ্য করি, তিনি এই কঠিন সময়ে এবং সাধারণ সময়েও (সব জায়গায় যাওয়া তো তার পক্ষে সম্ভব না) কিন্তু এই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এইবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশের সম্পূর্ণ ব্যবহার যদি করে থাকে তিনিই করেছেন। তার উদ্দেশ্য কি? তার প্রধান স্বত্বভোগী কারা? প্রধান স্বত্বভোগী আমি বলবো রাষ্ট্রনায়ক শেখা হাসিনা তাঁর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। তিনি এই কমিউনিটি ক্লিনিক করেছেন যেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সাথে তার যোগাযোগ যেন নিয়মিত থাকে। আমি কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। একটা কথা না বলে পারছি না, অবাক হয়ে যাই। আমি এমন কোন দিন নাই যেদিন চিঠি পাই না যে, কমিউনিটি ক্লিনিকের নাম শেখ হাসিনা ক্লিনিক দেয়া যায় না? তাদেরকে উত্তরও দেই না কারণ এটা বুঝানো সম্ভব না। এর উত্তরই বা কি দিব। নেত্রী তাঁর নামের জন্য এটা করেননি। সাধারণ জনগণ এই কমিউনিটি ক্লিনিকে যখন পা দেয়, তারা মনে করে যে তারা নেত্রীর বাড়িতে পা দিয়েছে। এই যে একটা মানসিক সংযোগ তিনি স্থাপন করতে পেরেছেন এটা আমরা অনেকেই সারা জীবন কেন, তিনটা জীবন পেলেও এটা সম্ভব না। এটা একজনের দ্বারাই সম্ভব এবং সবসময় আসেনা এরকম লোক। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন যেরকম আছে, সেজন্য সাধারণ লোকজনও আজকাল বলে বার বার দরকার শেখ হাসিনার সরকার। তাঁরা কিন্তু বুঝেই বলে।

আওয়ামী লীগ চলে আসলে নেত্রীর দ্বারা (যে যেখানেই আছে যত বড় বড় কথাই বলুক না কেন)। কারণ, তার বড় যোগ্যতা হচ্ছে তিনি যেকোনো কর্মীকেই দিয়ে ভালোভাবে কাজ আদায় করে নিতে পারেন। এই ক্ষমতাটা তাঁর আছে। এই ক্ষমতা যদি না থাকতো তাহলে সবসময় তিনি সব জায়গায় যোগ্য লোক পেয়েছেন, এটা বললে সঠিক বলা হবেনা। কিন্তু যোগ্য কাজটি তো করেছেন। তার মানে হচ্ছে, তাকে যে লোকই দেওয়া হোক না কেন, তাকে দিয়ে তিনি সঠিক কাজ করতে সক্ষম। এই কারণেই তিনি আন্তর্জাতিকভাবে কাদের সাথে কখন কিভাবে যোগাযোগ রাখতে হবে, প্রতিবেশীর সাথে কিভাবে যোগাযোগ রাখতে হবে, দেশের রাজনৈতিক দলের সাথে কিভাবে যোগাযোগ রাখতে হবে, প্রতিটি বিষয়ে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার একটি রোডম্যাপ আছে এবং বুঝা যায় যে তিনি রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করছেন। অবশ্য তখন বুঝা যায় না, তাঁর কাজ আমরা পরে দেখে বুঝি। যখন কোন কাজ হচ্ছে তখন কিন্তু আমরা বুঝিনা, আমরা তখন একেকটা নিয়ে লাফালাফি করি। হঠাৎ দেখা যায় ১৫ দিন পরে বা তিন সপ্তাহ পরে সেই ইস্যু নেই আরেকটা ইস্যু এসে গেছে, আবার কিছুদিন পরে। যেমন বিরোধী দল থেকে একজন বলল যে, যদি পুলিশ গুলি না করে তাহলে আমরা এখনই সরকার পরিবর্তন করে দিব। তাঁদের বলা উচিৎ ছিল বরং পুলিশকে শুধু ওই চুরিচামারি এসব ঠেকানোর দায়িত্ব দেওয়া হোক, আমরা তাহলে পারবো। আরে যারা আন্দোলন করে তাঁরা কখনো এমন ভয় পায়না। বঙ্গবন্ধুকে তো একাধিকবার মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছে, নেত্রীকে কতবার কত কাছে থেকে গুলি করেছে। আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে আছেন। কই তারা তো তখন এটা বলেন নাই যে, পুলিশ সরাইতে হবে, এটা-ওটা করতে হবে। এখন একমাত্র তাঁরা দাবি করতে পারে নেত্রীকে যে, আপনি একটা বিরোধী দলও করে দেন। তাছাড়া তো বাংলাদেশে যে যত কথাই বলুক না কেন, এটা বাস্তবিক সত্য যে রাজনৈতিক শত্রু-মিত্র নেত্রী সঠিকভাবেই চিনেন এবং সঠিকভাবেই শত্রু দিয়েও মিত্রের কাজ করার যদি কেউ ক্ষমতা রাখেন তিনি হচ্ছেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। যার জন্যে অনেকে যখন পাগলের মতো প্রলাপ বলে যে, অমুক দেশের সাথে অর্থনৈতিক তুলনা চলে, তমুক দেশের সাথে। নাম এইজন্য বললাম না যে, যারা এসমস্ত কথা বলে তাদের প্রতি আমার সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধও নাই যে ওসব দেশের নাম উচ্চারণ করার কোন প্রয়োজন আছে। বরং নাম উচ্চারণ করলে তাঁদের একটু দাম বাড়বে যে, আমরা একটা ইস্যু। হিসাব কিছুই না, বাংলাদেশ যে গতিতে এগিয়ে চলেছে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সেই গতিতেই চলবে।

একটি কথা বলে শেষ করবো যে, সাম্প্রতিককালের নিউরোসার্জন এবং ফিজিওলজিস্টরা মিলে এখন আবিষ্কার করেছে যেটা আগে আমরা যে ডিমেনশিয়া বা মানুষ ভুলে যায় এইসব রোগের কোন চিকিৎসা ছিল না, এখনো নাই। কিন্তু একটা জিনিস নতুন আবিষ্কৃত হয়েছে যে, যিনি নিয়মিত লেখাপড়া করেন এবং কাজের মধ্যে থাকেন তাদের এই ধরণের রোগের সম্ভাবনা খুবই কম। তাই নেত্রী মতো বেশি কাজের ভিতর থাকা এবং তিনি তো ফাইল কোনদিনও সম্পূর্ণ না পড়ে সই করেন না। অর্থাৎ পড়ার মধ্যে আছেন, এর মধ্যে আবার সুযোগ পেলে বইও লেখেন। আবার তাঁর নিজস্ব বক্তৃতার অধিকাংশ সময় যেই একটু ড্রাফট করে দিক না কেন, তিনি নিজে তাঁর সমস্ত বক্তব্য আবার দেখেন। এমনকি তাঁর বক্তৃতার সময় আমি তার পাশে বসে দেখেছি তিনি পরিবর্তনও করতেন। অর্থাৎ তাঁর মস্তিষ্ক সবসময় তিনি সক্রিয় রাখতেন। এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, যারা এরকম সক্রিয় রাখেন তাদের কর্মক্ষমতা অনেকদিন পর্যন্ত চলে। আর বঙ্গবন্ধুর ফ্যামিলিতে বঙ্গবন্ধুর এবং তার পরিবারকে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ষড়যন্ত্রকারীরা হত্যা করেছে। তাই তাঁর পিতা-মাতা থেকে শুরু করে যাদেরই দেখা যায় আল্লার রহমতে সকলেই দীর্ঘজীবী হয়েছেন। তাঁর দাদা পর্যন্ত দেখা যায় সেই যুগে তিনি কতটুকু চিন্তা করতেন, তিনি রাজনীতিতে কত কত গভীর গভীর কথা বলেছেন যেটা অনেক দার্শনিকও চিন্তা করে বলতে পারেনা। তাই বিশ্বাস করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আল্লাহর রহমতে দীর্ঘজীবী হবেন, রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকবেন এবং আমরাও সামনের দিকে এগিয়ে যাব। আমাদের শত্রুও থাকবে, মিত্রও থাকবে তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭