ইনসাইড থট

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসক নামকরণ কেন?


প্রকাশ: 15/04/2022


Thumbnail

সম্প্রতিকালে ক্ষুদ্র একটি আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে- কেন “জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়” এবং কেন জেলার অধীক্ষক “জেলা প্রশাসক”।সরকার যদি হয় সেবা প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠান, তবে কিভাবে জেলা প্রশাসক নিজেকে শাসক মনে করেন। করোনার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমলাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং রাজনীতিবিদেরকে দূরে রেখেছেন বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন।এই দায়িত্ব পালনের সুযোগটাকে হাতে পেয়ে সরকারি কর্মকর্তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এবং পরিনিতিতে আমরা লক্ষ্য করেছি অনেক দুর্ঘটনা যা একান্তভাবে কারো কাম্য হতে পারে না।

সম্প্রতিকালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমলারা প্রভাব খাটাতে চেষ্টা করছে।তারা একটি সমন্বিত নিয়োগ বিধি তৈরিতে আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেছে। সেখানে কিছু ভালো নেই আমি বলছিনা তবে যেভাবে আমলারা বিষয়টিকে নিয়েছিলেন সেটা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আশা করেনি।  তেমনি তারা ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে গুচ্ছ পদ্ধতি বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকা পালন করছেন।  এই পদ্ধতির একটি ভালো দিক শিক্ষার্থীদের একটি আবেদন ও একটি পরীক্ষা যথেষ্ট। সেটা বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার বাইরে গিয়ে পরীক্ষা নিয়েছে।  আমার মনে হয় এখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বাধীনভাবে চলতে দেয়া যেতে পারে।  সরকার যেখানে গুরুত্ব দিতে পারে সেটা হলো শিক্ষকরা যেন বিবেকহীন না হয়ে যান। বেতন নেবেন কিন্তু ক্লাস নেবেন না কিংবা গবেষণা করবেন না- সেটা যেন না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে ৯-৫ তা হাজিরা দিয়ে সৃজনশীল কাজ করানো যাবে না।তাদের স্বাধীনতা থাকতে হবে। তবে সেই স্বাধীনতা যেন ক্লাস ফাঁকিতে পরিনিত না হয়।

একটি আলোচনা থেকে জেনেছি আমাদের শিক্ষকরা শিক্ষার মান উন্নয়নে বাধা। আমি সেটিকে বিশ্বাস করেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখছি আমলাদেরকে পিএইচডি ডিগ্রী দেয়ার প্রবণতা। আর আমলারা এখন সুযোগ খুঁজছেন কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়া যায়।আর সেই আকাংখা থেকে একটি পরিস্থিতি তৈরী করছেন ওই মহল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদেরকে সহযোগিতা না করে কিভাবে বেকায়দায় ফেলা যায় সেটাই আমলারা করছেন।

এখন জেলা পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আর জেলা প্রশাসক যেহেতু জেলার বড়লাট বা বাহাদুর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কেও নিজের আওতাভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান মনে করেন। এবং সেখানে তিনি কতৃত্ব খাটাতে চাইবেন। এভাবে যদি আমলারা ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমলারা একটু বেশি কতৃত্ব খাটাতে চান। এখানে সরকার নজরদারি বাড়াতে পারে যাতে আমলাদের দৌরাত্ম কোনো স্থান না করতে পারে।

পূর্ববর্তী আলোচনায় ফিরে যাই।  সেটা হলো জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসক পদের নেতিবাচক দিক।আমরা লক্ষ্য করছি আমাদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার এখন ব্যাপকভাবে জন প্রশাসনে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। কারণ তাদের মর্যাদাটা আমলাদের নিচেয়। অনুরূপভাবে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার কথা তারাও প্রশাসনে ঢুকছে। ফলে শিক্ষকতার পেশায় যাদের আসার কথা তারা শিক্ষকতা করতে চাইছেন না। শিক্ষকরা নিজেদের অবস্থান নির্ণয় করেন পাসপোর্টের রং থেকে। একজন কনস্টেবল এর পাসপোর্ট লাল আর দেশে সেবার মহান ব্রত নিয়ে আমজনতার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পান সবুজ পাসপোর্ট। এখন একজন সরকারি কলেজ শিক্ষক পিএইচডি করবার জন্য তিনটি ইনক্রিমেন্ট পান আর সেই সময় একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ঘন্টার পর ঘন্টা পিএইচডির জন্য ইনক্রিমেন্ট পেতে সভা করেন। যেন করুনার পাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

ফেসবুকের পাতায় শিক্ষা ছুটির করুন কাহিনী আমার শুনতে পাই। সেখানে আমলাদের মতো উপাচার্যরা নিষ্ঠুর হয়ে উঠেন। সেখানে আছে দলীয় রাজনীতি নীল সবুজ হলুদ সাদা রঙের প্রভাব।

অনেকেই একটি চূড়ান্ত মন্তব্য করে থাকেন -দেশের ক্ষমতা নষ্টদের হাতে। কেবল বঙ্গবন্ধু কন্যা সৎ হলে দেশ কি ভালো থাকে? এইতো কদিন আগে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে শংকা। জাতি তাকিয়ে আছে একটি মহেন্দ্র ক্ষণের অপেক্ষায়। যেভাবে বঙ্গবন্ধুর মুখের দিকে ১৯৭১ সালে তাকিয়ে ছিল কখন বলবেন -বাংলাদেশ আজ থেকে স্বাধীন। তেমনিভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখে তাকিয়ে তিনি কখন বলবেন আজ থেকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন প্রাণের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে।

আমাদের আমলারা এতো দক্ষ যে তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে ছবক দেন কিন্তু তারা প্রকল্পের মান এবং প্রকল্পের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে একেবারেই অদক্ষ। ওনারা কিভাবে নিজের ঘর নিজের বাড়ি নিজের সন্তানকে সুন্দর বানাবেন সেই চিরায়ত চেষ্টাতে আজকের যুগেও ব্যস্ত। আর তাই মন্ত্রণালয়ের নাম রেখেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় এবং পদের নাম রেখেছেন জেলা প্রশাসক।  সেখানে অস্ট্রেলিয়া মন্ত্রণালয়ের নাম রেখেছে সার্ভিসেস অফ অস্ট্রেলিয়া।

দেশকে সঠিক পথে নিতে রাজনীতিবিদের সঙ্গে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের সম্পর্ক থাকতে হবে। সেই সম্পর্ক যদি দূরের সম্পর্ক হয় যেমনটি লন্ডন-কলিকাতা কিংবা ইসলামাবাদ-ঢাকা ছিল তেমনটি হয়ে যায় তবে উন্নয়ন টেকসই হবে না।

ডাক্তার, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা সকলে সেবার ব্রত নিয়ে জনগণের মাঝে থাকবেন। সেটা যদি সম্ভব হয় এবং আমলারা যদি প্রশাসক হিসাবে আবির্ভুত না হয়ে সেবকের ভূমিকায় থাকেন তবেই উন্নয়ন হবে দ্রুত, টেকসই এবং জনকল্যাণমূলক।

আমাদের সকলের মাঝে যেন সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সেবার মনোভাব জাগে সেজন্য শিক্ষাকে আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে।  আমরা ভোট ও ভাতের আলোচনা অনেক করেছি। এখন সেই আলোচনা করে কোনো লাভ নেই। এখন কিভাবে যথাযথ শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় সেটাই আমাদেরকে ভাবতে হবে। আমরা যেন সতর্ক থাকি। সম্প্রতি টিপ, হিজাব, কিংবা নামাজের জায়গা নিয়ে যে উত্তাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে সেটা যাতে কোনো ভাবে আমাদের অগ্রযাত্রায় বাধা না হয়ে দাঁড়ায় সেটাও মনে রাখতে হবে। করোনার পরে সারা বিশ্ব এক অস্থিরতায় ভুগছে। সেই অস্থিরতায় নিজেদেরকে মনে রাখতে হবে "অন্যদের অধিকার আছে, মর্যাদা আছে।"


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭