ইনসাইড পলিটিক্স

'ভূতের মুখে রাম নাম'


প্রকাশ: 17/04/2022


Thumbnail

'ভূতের মুখে রাম নাম' বাগধারাটি নিজের স্বভাবের বিরুদ্ধে কথা বলা বা কাজ করা বুঝায়। এটি স্ববিরোধী অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ। একশ্রেণির লোক বিশ্বাস করেন রামের নাম নিলে ভূত পালিয়ে যায়। আর সেই ভূতই যদি রামের নাম জপে তাহলে বিষয়টি কী ভয়ানক তা সহজে অনুমান করা যায়। এমনটিই হয়েছে দেশের কথিত বিরোধী দল বিএনপি’র ক্ষেত্রে। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দুর্নীতি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। রিজভীর এই মন্তব্য এক প্রকার হাস্যরসাত্মকের যোগান দিয়েছে। কারণ বিএনপি'র শীর্ষ দুই নেতাই দুর্নীতিগ্রস্ত। বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামি। সরকারের অনুকম্পায় তিনি নিজ বাসায় দিন যাপন করছেন এবং তার পুত্র তারেক জিয়া লন্ডনে পলাতক রয়েছেন। এরকম বাস্তবতায় বিএনপি'র দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ। এ ব্যাপারেও বিএনপি'র কোনো ব্যাখ্যা নেই। 

বিএনপি’র শাসনামলের তথ্য দেখলে লক্ষ্য করা যায় যে, বাংলাদেশ ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল টানা পাঁচ বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এ সময় বিএনপি দাবি করেছিল যে, অন্য কোনো দেশ বাংলাদেশ থেকে বেশি দুর্নীতি করেনি। সে কারণেই বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন! অথচ বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিভিন্ন দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে বহির্বিশ্বে লজ্জাজনক এক পরিচিতি পায় বাংলাদেশ। দেশে ব্যাপকভাবে দুর্নীতির কারণে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স (সিপিআই)-এ বাংলাদেশে পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বের মধ্যে প্রথম হয়েছিল। সেখান থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অনেক পাল্টেছে। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা ৫ বছর বাংলাদেশ, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। পরে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অবস্থান পিছিয়েছে। আর বিশ্বের কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আগের বছর বাংলাদেশ ১৪৮তম দেশ থেকে এই বছর হয়েছে ১৪৭ তম। 

বিএনপি দুর্নীতির দোকান খুলেন বসেছিল দেশে। বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের করা দুর্নীতিগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো, তারেক ও মামুনের মানি লন্ডারিং, নাইকো দুর্নীতি কেলেঙ্কারি, কোকোর সিমেন্সের দুর্নীতি, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি, বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি, গ্যাটকো দুর্নীতি, নাইকো দুর্নীতি। এসমস্ত দুর্নীতিগুলোর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি, বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি, গ্যাটকো দুর্নীতি, নাইকো দুর্নীতি আদালতে  বিচারাধীন রয়েছে। এতো কিছুর পরও বিএনপি'র মুখে দুর্নীতি বিরোধী কথাগুলো কেমন যেনো বেমানান। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি এতো পরিমাণে দুর্নীতি আসক্তি ছিল যে, এটা আন্তর্জাতিক দুর্নীতির রুপ ধারণ করেছিল। যেকারণে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইও তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিল। বিএনপি’র দুর্নীতির ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি ডেবরা লাপ্রিভেট গ্রিফিথ ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সুতরাং বিএনপি যে একটি দুর্নীর্তিপরায়ণ সরকার ছিল এবং এখনো একটি দুর্নীর্তিপরায়ণ দল আছে সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বিএনপি’র দুর্নীতি যখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তখন দুর্নীতি নিয়ে দলটির কথা বলাকে 'ভূতের মুখে রাম নাম' এর সামিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭