ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইউক্রেনে আরও আগ্রাসী রাশিয়া


প্রকাশ: 17/04/2022


Thumbnail

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো। এরপর গত কিছুদিন যাবৎ রুশ বাহিনী হামলা কিছুটা কমিয়ে দিলেও তা আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ মস্কোভা ডুবির পর থেকে ইউক্রেনে আক্রমণ বাড়িয়েছে মস্কো। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ পূর্ব ইউক্রেন ছাড়াও রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে রাশিয়া। 

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ মিকোলিভ এবং খেরসন অঞ্চলের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হয়ে উঠছে। এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেন সেনাবাহিনীর দক্ষিণ অপারেশনাল কমান্ড বলেন, গত কয়েক দিন ধরে ইউক্রেনের দক্ষিণ অঞ্চল ক্রমশ প্রতিকূল আগ্রাসনের মুখে পড়েছে। ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর এই কমান্ডার বলেন, রুশ বাহিনী অঞ্চলে দৃঢ় অবস্থান নিতে এবং অবস্থান ধরে রাখতে মরিয়া। বিশ্বের সবথেকে ‘নির্লজ্জ সেনারা’ এটা করতে বেসামরিক নাগরিকদের তাড়া করছে। কিছু অঞ্চলে স্নাইপারের উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার কৃষ্ণসাগরে ডুবে যায় রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ মস্কোভা। রাশিয়া বলেছে, জাহাজটিতে আগুন লাগে। পরে সেটি তীরের দিকে টেনে নেওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। তবে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ বলছে, জাহাজটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল তারা।

এদিকে, ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলকে পুরোপুরি দখলে নেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। রাশিয়া বলছে, রুশ সেনারা ইউক্রেনের অন্যতম প্রধান এই বন্দরনগরীর শহুরে এলাকা দখলে নিয়েছে। শহরটির একটি ইস্পাত কারখানার ভেতরে এখনও ইউক্রেনের যোদ্ধাদের একটি ছোট দল রয়ে গেছে। ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের এই দলটিকে আত্মসমর্পণের আল্টিমেটাম দিয়েছে মস্কো। এমনকি আত্মসমর্পণ করা যোদ্ধাদের জীবন রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে দেশটি। 

রাশিয়া জানিয়েছে, মারিউপোল এখন প্রায় তাদের দখলে। তাই যদি সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে ইউক্রেন সেনারা আত্মসমর্পণ করেন, তবে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে মস্কো। রাশিয়া আরও জানিয়েছে, মারিউপোলের আঝোভাস্তাল স্টিলওয়ার্কস এলাকায় কিছুটা জায়গা ইউক্রেনের সেনাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রতি আধা ঘণ্টা অন্তর আত্মসমর্পণের আহ্বান মারিউপোলে প্রচার করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে রাশিয়া। রুশ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আত্মসমর্পণের জন্য কিয়েভের আদেশের অপেক্ষা করার দরকার নেই। সিদ্ধান্ত এবার ইউক্রেন সেনাদের নিজেদেরই দিতে হবে।

যদিও ইউক্রেনের বন্দর নগর মারিউপোলের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য রাশিয়া নয়, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছেন এইডেন এসলিন নামের এক ব্রিটিশ সেনা। তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে দায়িত্ব পালন করেছেন। রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির এক ভিডিওতে মারিউপোল পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন ওই ব্রিটিশ সেনা। গত সপ্তাহে ইউক্রেনের নৌবাহিনীর সঙ্গে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন এসলিন। 

বন্দী ব্রিটিশ সেনা এসলিন বলেন, ২০১৮ সালে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সে সময় মনে হয়েছিল তিনি ভালোর পক্ষে আছেন। কিন্তু মারিউপোলের পরিস্থিতি চোখ খুলে দিয়েছে। তিনি সেনা কমান্ডারদের শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন, তবে কমান্ডাররা তাতে রাজি হননি। কারণ, কিয়েভ তাঁদের মারিউপোলেই রাখতে চেয়েছিল।

ভিডিওতে এসলিনকে বলতে শোনা যায়, মারিউপোলের পরিস্থিতি ভয়াবহ। এ রকম পরিস্থিতি এড়ানো যেত, যদি ইউক্রেন বাহিনী মারিউপোল ছেড়ে চলে যেত। কিন্তু তাদের মারিউপোলেই থাকতে হয়েছে। আর এমন সিদ্ধান্তের পেছনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বড় ভূমিকা ছিল। জেলেনস্কি ইউক্রেন বাহিনীকে মারিউপোল ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি।

অন্যদিকে, পশ্চিমা দেশগুলোর পাঠানো অস্ত্রের চালান নিয়ে ইউক্রেইনে নামার আগেই একটি সামরিক বিমান গুলি করে ভূপাতিত করার দাবি করছে রাশিয়া। বন্দরনগরী ওডেসার কাছে ইউক্রেইনের ওই বিমানটি রুশ আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটের হামলার মুখে পড়ে বলে শনিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কনাশেনকভকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে রুশ বার্তা সংস্থা তাস।

মস্কোর এ দাবি সত্য কিনা, তা যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়েছে কিনা, তাও পরিষ্কার হওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭