ইনসাইড পলিটিক্স

অগোছালো বিএনপি


প্রকাশ: 18/04/2022


Thumbnail

গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছিলেন  “শক্তিশালী বিরোধী দল আমরা পাচ্ছি না।” প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেছিলেন, ‘অতি অল্প সময়ের মধ্যে’ প্রধানমন্ত্রী শক্তিশালী বিরোধী দল দেখতে পাবেন। সপ্তাহের মধ্যেই সে কথার প্রমাণ রাখলো দলটি। তবে শক্তিশালী হিসেবে নয় বরং এক অগোছালো বিএনপি'র বাস্তব চিত্র দেখল দেশবাসী। আগামী ২০ এপ্রিল রাজনীতিবিদদের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে তা আবার বাতিল করেছে বিএনপি। কেন ইফতার মাহফিল বাতিল করা হয়েছে-এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, এ বিষয়ে কিছু বলার থাকলে দলের মুখপাত্র হিসেবে মহাসচিব বলবেন। আমার কোনো মন্তব্য নেই। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হয়েও যখন এ ধরনের কথা বলেন তখন এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, দল হিসেবে বিএনপি’র মধ্যে কোন ঐক্য নেই, আছে চরম অগোছালো একটি অবস্থা।

শুধু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এই ঘটনাই নয়। গত শুক্রবার সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির সম্মেলনে আগেই দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং আহত হন প্রায় ১০ জন নেতাকর্মী। সম্মেলনের দায়িত্বে থাকা বিএনপি’র ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ পরিস্থিতি সামাল না দিয়ে কৌশলে সম্মেলন থেকে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাষ্য ‘অতি অল্প সময়ের মধ্যে’ প্রধানমন্ত্রী শক্তিশালী বিরোধী দল দেখতে পাবেন- এই কথা জ্বলন্ত প্রমাণ সাম্প্রতিক বিএনপিতে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি যে এখন নেতৃত্বের সংকটে ভুগছে তা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কথায় পরিষ্কার। অর্থ্যাৎ বিএনপি এখন চরম অগোছালো একটি দল। তবে বিএনপি এই অগোছালোর বিষয়টি অস্বীকার করে এবং নিজেদেরকে ঐক্য দাবি করে। শুধু তাই নয় বৃহত্তর ঐক্য গঠনের উদ্যোগও নিয়েছে দলটি। বিএনপি’র ২০ দলীয় জোটসহ অন্য সকল সরকার বিরোধী দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্য গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। যদিও সেই ঐক্য এখন জটে আটকে গেছে। কারণ ঐক্যে আগ্রহী অন্যান্য দলগুলো জামায়াত সম্পর্কে বিএনপি’র সুস্পষ্ট অবস্থান জানতে চেয়েছিল। কিন্তু বিএনপি তাদের অবস্থান পরিষ্কার না করে এখনো কৌশলে জামায়াতকে সঙ্গে রেখেছে। দলটির গণঅনশন কর্মসূচিতেও জামায়াত অংশ নিয়েছে। জামায়াত একটি যুদ্ধপরাধী দল জেনেও বিএনপি তাদের সঙ্গ পরিত্যাগ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ঐক্যে আগ্রহী দলগুলো।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, অপজিশন বলতে যারা আছে, তার মধ্যে দুটোই হচ্ছে মিলিটারি ডিকটেটর, একেবারে সংবিধান লঙ্ঘন করে, আর্মি রুলস ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। কাজেই তাদের ঠিক ওই মাটি ও মানুষের সাথে যে সম্পর্ক, সেই সম্পর্কটা তাদের মাঝে নেই। তাদের কাছে ক্ষমতাটা ছিল একটা ভোগের জায়গা। প্রধানমন্ত্রীর এই কথার যথার্থ প্রমাণ জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি’র সখ্যতা। জানা গেছে, রাজনীতিবিদদের সম্মানে ইফতার মাহফিল বাতিল করার অন্যতম এবং একমাত্র কারণ হলো ইফতারে জামায়াতকে আমন্ত্রণ করতে না পারা। বিএনপি’র এই জামায়াত প্রীতি নিয়ে খোদ দলের মধ্যে দুটি আলাদা মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। এক পক্ষ জামায়াতের ‍যুদ্ধপরাধ নিজেদের ঘাড়ে নিতে রাজি নয় আবার অন্য একটি পক্ষ চায় বিএনপির পুরোনো চরিত্র ধরে রাখতে। সেকারণে তারা জামায়াতকে সঙ্গেই রাখতে চায়। বিএনপি’র এক দিকে জাতীয় বৃহত্তর ঐক্য গঠনের প্রচেষ্টা অন্যদিকে জামায়াতকে সঙ্গে রাখার নানা অপচেষ্টায় দলটিতে এখন চরম অগোছালো পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭