ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ফিনল্যান্ড ও সুইডেন কেন ন্যাটোতে যোগ দিতে চায়?


প্রকাশ: 18/04/2022


Thumbnail

সীমান্তে অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন থেকে শুরু করে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনে রাশিয়ার হুমকির মাঝেও জোট নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থেকে ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত বদলের মুখে রয়েছে ইউরোপের দুই দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন।

রাশিয়ার সাথে দীর্ঘ সীমান্ত ভাগ করা ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ঐতিহাসিকভাবেই জোট নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রেখে আসছে। সুইডেনের নিরপেক্ষতা দেশটির পরিচয়ের অংশ। তবে ফিনল্যান্ডের নিরপেক্ষতা ১৯৪৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে দেশটির বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহায়তার চুক্তির নামে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। 

গত শতকে যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সময় সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে জোটনিরপেক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই দেশই নিরাপত্তা নীতিতে ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনার দিকে হাঁটছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের এভাবে নিজেরদের নিরপেক্ষতাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযান। ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর থেকেই দেশ দুটি নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ শঙ্কার মাঝে পড়ে যায়। বিশেষ করে দেশ দুটির জনগণও ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে নিজেদের মত পরিবর্তন শুরু করে। 

এক জরিপে দেখা যায় যুদ্ধ শুরুর পূর্বে ফিনল্যান্ডের ৫৩ শতাংশ ও সুইডেনের ৪১ শতাংশ মানুষ ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পক্ষে ছিল। তবে সাম্প্রতিক আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, সুইডেনে ন্যাটোতে যোগদানের পক্ষে জনমত ৫০ শতাংশের বেশি হয়েছে। আর ফিনল্যান্ডে এই হার এখন ৬৮। 

এমনকি দেশ দুটির রাজনীতিবিদরাও নিজেদের অবস্থান দ্রুত পরিবর্তন করা শুরু করেছেন। যুদ্ধ শুরুর পূর্বে চলতি বছরের জানুয়ারিতেও ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন জানিয়েছিলেন, ফিনল্যান্ড বর্তমান সরকারের আমলে ন্যাটোতে যোগদানের আবেদন করতে চায় না। তবে তারা এখন এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের পরিকল্পনা শুরু করেছে। রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। 

তবে দেশ দুটির ন্যাটোতে যোগদানের ঘোষণার পর একেবারেই খুশি নয় প্রতিবেশী শক্তিধর রাশিয়া। দেশদুটির এমন ঘোষণার পর বেশ চটেছে দেশটি। ন্যাটোতে যাতে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন যোগদান না করে সেজন্য দেশদুটিকে এমনকি ন্যাটোকেও সতর্ক করেছে রাশিয়া। রাশিয়া জানিয়েছে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন যদি ন্যাটোতে যোগদান করে তবে দেশ দুটির সীমান্ত বরাবর অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন থেকে শুরু করে দেশদুটিতে লক্ষ্য করে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করবে তারা। এর ফলে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে শঙ্কার সৃষ্টি হবে যা এই অঞ্চলকে আরো বেশি অস্থিতিশীল করে তুলবে এবং এই দায়ভার ন্যাটোকে বহন করতে হবে। 

যদিও রাশিয়ার এমন হুমকি ধমকি যে ন্যাটো এবং দেশদুটি পিছিয়ে গেছে তা কিন্তু নয়। বরং ন্যাটোতে যোগদানে নিজেদের কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে দেশদুটি। তবে জোটটিতে যোগদানের পূর্বে দুটি বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে। প্রথমটি হলো দুই দেশের সরকারকে এ বিষয়ে অনুমোদন দিতে হবে।

এ বিষয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারল্যুর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সহকারী অধ্যাপক আলেক্সান্দার লানোসজকা বলেন, ন্যাটোতে যোগদানের আবেদনের আগে দেশগুলোর পার্লামেন্টে এ বিষয়ে অনুমোদন নিতে হবে। মনে হচ্ছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন সরকার এ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো নতুন সদস্য নিতে ন্যাটোর অনুমোদন। ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের যোগদানকে সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডের মতো প্রধান সদস্যদেশগুলো। এখন পর্যন্ত জোটটির কোনো সদস্যদেশ এর বিরোধিতা করেনি। ন্যাটোতে নতুন কোনো সদস্য নিতে হলে জোটটির ৩০ সদস্যের সবার অনুমোদন লাগে।

যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক রাজনীতির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ক্যাথারিন এ এম রাইট বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মুখে নিজেদের ঐক্য ও শক্তি প্রদর্শনের জন্য ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের আবেদন শিগগিরই অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি বছরেই এ অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন ক্যাথারিন। 


চিত্র: প্রশিক্ষণরত ফিনিশ সেনাসদস্য

ন্যাটোর সাথে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সম্পর্ক 

ন্যাটোর সাথে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের বেশ গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। কারণ ন্যাটোতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ না দিইয়েও অনেক আগে থেকেই জোটটির সঙ্গে কাজ করছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সশস্ত্র বাহিনী। আমেরিকার নেতৃত্বে আফগানিস্তানে ন্যাটোর অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন দেশ দুটির সেনাসদস্যরা। দুই দেশই সামরিক সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে ২০১৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

তবে দেশদুটি ন্যাটোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে স্নায়ুযুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকেই। বিশেষ করে যখন ১৯৯৪ সালে পার্টনারশিপ ফর পিস (পিএফপি) প্রোগ্রাম ও ১৯৯৫ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগদানের পর এই সম্পর্কের পালে আরও হাওয়া লাগে।

ফিনল্যান্ড কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ন্যাটোর সদস্যপদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে সুইডেনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ফিনল্যান্ডের চেয়ে সুইডেন বেশি সচেতনতা অবলম্বন করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭