ইনসাইড বাংলাদেশ

নিউমার্কেটের সহিংসতা: রিপোর্টারের ডায়রি


প্রকাশ: 19/04/2022


Thumbnail

ঘড়িতে তখন দুপুর ১টা। ঠিক তখনও চলছিল ঢাকা নিউমার্কেট ছাত্র-পুলিশ এবং ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ। একপ্রকার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল ঢাকা কলেজ-নিউ মার্কেট এলাকা। সেখানে কখনো পুলিশ ধাওয়া দিচ্ছে ব্যবসায়ীকে আবার ব্যবসায়ীরা ধাওয়া দিচ্ছে ছাত্রদেরকে আবার কখনোবা পুলিশ ধাওয়া দিচ্ছে ছাত্রদেরকে। দুপুর একটায় নিউমার্কেট এলাকাতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলেও কোনভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছিল না। তবে একটি দিক বলে রাখা ভালো যে, আজকের পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা অনেকটা শান্ত থাকলেও বেশ উগ্র ছিল ঢাকা কলেজের ছাত্ররা। তারা ঢাকা কলেজের নতুন ভবনের উপর থেকে নিয়মিত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে পুলিশ এবং ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে। পাশাপাশি সেখানে নিয়োজিত সাংবাদিকদের ওপরও তারা বিভিন্নভাবে হামলা চালায়। শুধু ঢাকা কলেজের ছাত্ররাই না, সংঘর্ষের কারণে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হয়েছেন। এদিকে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা ইট-পাটকেলের পাশাপাশি সেখানে বেশ কয়েকটি পেট্রলবোমাও নিক্ষেপ করেছে এবং অল্পের জন্য অনেক সাংবাদিক এবং পুলিশ তা রক্ষা পেয়েছেন।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে বিষয়গুলো। কেউ বলছেন ব্যবসায়ীর আগে থেকে এরকম, আবার কেউ বলছেন ছাত্র ঢাকা কলেজের ছাত্ররা সবসময় উগ্র মেজাজের। এদিকে সরজমিনে দেখা গিয়েছে চন্দ্রিমা এবং নুরজাহান মার্কেটের বেশ কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগ করেছে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা। যার ফলে প্রায় কোটি টাকার মতো লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এই নিয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি নুরজাহান মার্কেট একটি দোকানে তালা ভেঙে আগুন দেওয়ার পর তাঁর পাশের দুইটি দোকানে এসি বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুণ নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তারা প্রায় দেড় ঘণ্টা পর সেখানে উপস্থিত হন এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। কেন এই দেরিতে আসা ফায়ার সার্ভিসের? ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, ছাত্রদের ভয়ে তারা এদিকে তাদের গাড়ি নিয়ে আসতে ভয় পাচ্ছে বলেই দেরি হয়েছে। যদি আরো আগে আসত তাহলে ক্ষয়ক্ষতি কম হতো।



এদিকে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, প্রায় বিভিন্ন উৎসবে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা ব্যবসা করতে পারেনি। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবারের ঈদে তাঁদের ব্যবসা বেশ জমে উঠেছিল। ঠিক এমন মূহুর্তে ছাত্ররা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে টাকা দাবি করছে। এত টাকা দিলে তারা কীভাবে ব্যবসা করবে বলে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। ছাত্রদের দাবি তাঁদের সাথে ব্যবসায়ীরা বাজে ব্যবহার করছেন জন্য এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে সরেজমিনে দেখা গিয়েছে, আজকে যে পরিস্থিতি সেখানে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা শুধু সাংবাদিক-ব্যবসায়ীদের নয়, পুলিশদেরও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া দিয়েছে। এমনও দেখা গিয়েছে দেশীয় অস্ত্র হাতে পুলিশদের পিছিয়ে যেতে বারবার হুমকি দিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা একসময় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পুলিশের টিয়ার শেল নিক্ষেপের পরও যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছিল না এবং যখন বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন লেগেছিল তখন তার অনেকটাই ক্ষিপ্ত হয়ে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ওপর চড়াও হয়। তবে পুলিশ দুই পক্ষকেই নানাভাবে বুঝিয়ে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি শান্ত করতে পারেনি। সেখানে উপস্থিত সাধারণ জনগণ বলছে যে, ঢাকা কলেজের ছাত্ররা পড়াশোনা করতে এসেছে। তারা কেন রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে? রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে কেন তারা এই অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে? এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বেশকিছু মাধ্যমে অনেকেই ব্যবসায়ীদের বিষয়ে বলছেন যে, নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের ব্যবহার অনেক বেশি খারাপ এবং তারা প্রায়ই মেয়েদেরকে ইভটিজিং করে থাকে। তবে সেই ক্ষেত্রে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের কখনোই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। বরং তারা বিতর্কিত হয়েছেন বাসের ভাড়া না দেয়া, কাপড় কিনে টাকা না দেওয়া, খাবার খেয়ে টাকা না দেওয়ার মত ঘটনায়।

ঘটনার সূত্রপাত গতকাল রাত ১২টায়। জানা যায়, লাচ্ছি খেয়ে তার বিল পরিশোধ না করায় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ওপর এক প্রকার ক্ষেপে যান নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। আর এই নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়, যা শেষ পর্যন্ত মারামারিতে গড়ায়। রাত দেড়টা-দুইটা পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। যদিও নিউ মার্কেটের এই ঘটনার একটি সিসিটিভির ফুটেজ বলছে ভিন্ন কথা। সেখানে দেখা যায়, ঢাকা কলেজ নয় বরং দুটি দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হয় সংঘাত। সেখানে ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সম্পৃক্ত করা হয় এবং পরে রটানো হয় যে, ব্যবসায়ীরা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মেরেছে। আর এই খবর ছড়িয়ে পড়লেই মূলত পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিয়োগ করা হয় পুলিশ, প্রয়োগ করা হয় টিয়ার শেল গ্যাস। সারারাত পার হলেও সেই যুদ্ধ থেমে থাকেনি। আজকে সকাল ১২ টা থেকে ফের সংঘর্ষে লিপ্ত হন ঢাকা কলেজের ছাত্র এবং নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।



এই মারামারি সংঘাতের মাঝে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করলে তাঁরা জানায়, তাঁদের দাবি একটাই যে সরকার এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত যেন একটি ব্যবসায়ীক এলাকাতে ঢাকা কলেজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না রাখা হয়। কেননা এই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে প্রতিনিয়তই কিছুদিন পরপরই একেকটি আলোচিত ঘটনা ঘটে এবং ফলে তাঁরা সঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন না। যার ফলে তারা চান না এই নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজ থাকুক। তবে ব্যবসায়ীদের এমন দাবি আসলে কতটুকু যৌক্তিক এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে অনেক মহলেই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭