ইনসাইড পলিটিক্স

জামায়াত প্রসঙ্গে কতটা লাভবান বিএনপি?


প্রকাশ: 22/04/2022


Thumbnail

জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে বিএনপিতে চতুরমুখী চাপ আছে বেশ কয়েক বছর ধরে। দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশর বাইরে থেকেও এই চাপ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই চাপ কিছুটা বেড়েছে যখন বিএনপি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কারণ বিএনপির আমন্ত্রণে ঐক্য গঠনে আগ্রহী দলগুলো জামায়াত প্রসঙ্গে দলটির সুস্পষ্ট অবস্থান জানতে চেয়েছে। কিন্তু এতো চাপ থাকার পর বিএনপি এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করেনি। নিকট ভবিষ্যতেও জামায়াতকে ছাড়বে তারও কোন আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং আড়ালে আবডালে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ রয়েছে। বিএনপির দাবি জামায়াতের সঙ্গে তাদের আদর্শিক কোনও ঐক্য নেই, বরং এটি নির্বাচনী একটা জোট মাত্র। কিন্তু বিএনপি কর্মকাণ্ড সেরকম প্রতীয়মান হয় না মোটেও। এমতাব্যস্থায় সর্ব মহলে প্রশ্ন উঠেছে যে, জামায়াত প্রসঙ্গে বিএনপি আসলে কতটা লাভবান? জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে বিএনপির এতো সংকোচ কিসের?

একটা সময় পর্যন্ত দেশের রাজনীতিতে সহায়ক হিসেবে জামায়াতের যে গুরুত্ব বা শক্তি ছিল, সেটি এখন ক্ষয়িষ্ণু। তাছাড়া যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সাধারণ মানুষের মনেও এই দলটির ব্যাপারে ক্ষোভ বেড়েছে। একটা সময় পর্যন্ত সাধারণ মানুষের একটি অংশ জামায়াতকে ইসলামিক ধারার দল মনে করলেও মুক্তিযুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের ঘটনা আদালতে প্রমাণিত হওয়ায় এবং তাদের অনেক নেতার দণ্ড হওয়ায় সেই সকল মানুষের মন থেকেও এখন জামায়াতের অস্তিত্ব বিলিন হয়ে গেছে। তাদের এখন চিন্তায় পরিবর্তন এসেছে। সুতরাং জামায়াতের মতো একটি বিতর্কিত দলের সঙ্গ ত্যাগ করতে বিএনপির একটা বড় অংশেরও ইচ্ছা আছে। তবে বেশ কিছু কারণের জন্যই বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ছেন না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির ভেতরে একটি প্রভাবশালী অংশই মনে করে, জামায়াত ছাড়া রাজপথে আওয়ামী লীগের মতো অত্যন্ত শক্তিশালী দলকে মোকাবিলা করা কঠিন। কারণ, বিএনপি তার মাঠের শক্তি, চলমান দলীয় সংকট, ছাত্র ও যুব সংগঠনের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে জানে। সুতরাং বিএনপির বর্তমান সরকারবিরোধী আন্দোলন জমাতে বিএনপিকে জামায়াতের মতো ক্যাডারভিত্তিক দলের আশ্রয় নিতে হবে। শুধু তাই নয়, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসেও, তখন সরকারের বাইরে থাকা দল, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের আন্দোলন মোকাবিলা করতেও জামায়াতের মতো ক্যাডারভিত্তিক দলের প্রয়োজন আছে বলে বিএনপির একটি অংশ মনে করেন। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনী বা আদর্শিক যেই সম্পর্ক হোক না কেন- জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোন ঐক্য হতে পারে না এবং সেটার প্রয়োজনও মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বিএনপি এমনিতেই এখন নানারকম সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। দলের শীর্ষ দুই নেতা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী। দলটির চেয়ারপারসন বেগম জিয়া দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সরকারের অনুকম্পায় এখন নিজ বাসভবনে সময় কাটাচ্ছেন। তার পুত্র দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে পলাতক এবং তিনিও একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী। তার নামে ইন্টারপোল ওয়ারেন্ট জারি রয়েছে। ফলে এরকম একটি সংকটের মুহূর্তে জামায়াতের মতো একটি ক্ষয়িষ্ণু দলের বোঝা বয়ে বেড়ানো বিএনপির রাজনৈতিক অপরিপক্কতার প্রমাণ করে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তবে জামায়াত সঙ্গ ছাড়লে বিএনপি লাভবান হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট থাকার কারণে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতে পারে না। অথচ বিএনপির ভেতরে অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। ফলে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়লে বিএনপির মুক্তিযোদ্ধারা কথা বলার সুযোগ পাবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু বিএনপি সেই পথে হাটবে কিনা এই প্রশ্নে খোদ বিশ্লেষকদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। সুতরাং জামায়াত প্রসঙ্গে আসলে বিএনপি কতটা লাভবান হচ্ছে সে প্রশ্ন আবার সামনে চলে আসে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭