ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় সাড়া নেই ইউক্রেনের


প্রকাশ: 22/04/2022


Thumbnail

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বৃহস্পতিবার হয়ত বেশ খোশ আমেজেই উপস্থিত ছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কারণ প্রায় দুই মাসের রক্তক্ষয়ী ইউক্রেন যুদ্ধে যে প্রথমবারের মত বেশ বড় সাফল্যর দেখা পেলো তার বাহিনী। ‘ডনবাস’ অঞ্চলকে ইউক্রেনের হাত থেকে রক্ষা এবং অঞ্চলটিতে বেসামরিকীকরনের উদ্দেশ্য শুরু হওয়া এই যুদ্ধে যে মারিউপোল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষ্য ছিলো রুশ বাহিনীর জন্য। কারণ এই বন্দর অঞ্চলটি দখলের সাথে সাথে ২০১৪ সালে দখল নেওয়া ক্রিমিয়ার সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারলো পুতিন বাহিনী।

পুতিন, রুশ বাহিনী কিংবা রাশিয়ার জনগণের জন্য এটি অনন্য এক প্রাপ্তি হলেও কপাল পুড়েছে মারিউপোলের সাধারণ জনগণের। যুদ্ধে জয়ে দুপক্ষের লড়াইয়ের মাঝে পড়ে এক প্রকার জিম্মি এই শহর তথা শহরটি লাগোয়া পুরো অঞ্চলটির লক্ষ লক্ষ বাসিন্দা। রুশ অভিযানে শহরটির একেবারের ধংসে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধে অঞ্চলটির বাসিন্দারা গ্যাস, বিদ্যুৎ, গরম বা পানি সংকটে ভোগান্তিতে পড়েন। ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়ে ফলে রাশিয়ার দেওয়া মানবিক করিডর ব্যবহার করে হাজার হাজার বাসিন্দাকে আরো পশ্চিমে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নিলেও তা একেবারে অপর্যাপ্ত। যার কারণে সেখানে আরো বড় ধরণের মানবিক বিপর্যয় নামার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।    


শুধু মারিউপোল নয়। শহরটির মত ইউক্রেনের আরো অনেক শহরে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অভিযানে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। যুদ্ধে দুই পক্ষের লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হওয়া সাধারণ মানুষদের রক্ষায় রাশিয়া ও উইক্রেনের মাঝে আলোচনাও শুরু হয়। তবে এই আলোচনা এখন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে দেওয়া শান্তি আলোচনার প্রস্তাবে কোন সাড়াই দেয় নি কিয়েভ। যার ফলশুতিতে আটকে গেছে সাধারণ মানুষের ভাগ্যও। 

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান বন্ধ ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবনা নিয়ে নিজেদের মত জানাতে গিয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, এই সংক্রান্ত একটি খসড়া ইতোমধ্যে গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দপ্তরে পাঠিয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়; কিন্তু এখনও এ বিষয়ে জেলেনস্কির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি।  

কিন্তু কী কারণে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কোনো প্রতিক্রিয়া জানালেন না—  সেই প্রশ্নও তুলেছেন পেসকভ। 



নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মস্কোতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আরো বলেন, ‘যেমনটা আমি গতকাল বলেছিলাম, আজ আবারও বলছি (ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণায়) আমাদের যেসব শর্ত রয়েছে, সেসব ইতোমধ্যে আঙ্কারার বৈঠকে অংশ নেওয়া ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

‘গত সোমবার এই খসড়া পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এ সম্পর্কে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। আমরা তার কারণ জানতে চাই।’

জেলেনস্কি অবশ্য বুধবার এক ভিডিওবার্তায় বলেছেন, রাশিয়া থেকে শান্তিচুক্তি সম্পর্কিত কোনো খসড়া এসেছে— এমন কোনো সংবাদ তিনি পাননি।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা এ বিষয়টি জানালে পেসকভ বলেন, ‘সেক্ষেত্রেও আমাদের প্রশ্ন আছে; আর সেটি হলো— কেন তিন দিন পেরিয়ে যাবার পরও কেউ প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে আমাদের প্রস্তাবনা সম্পর্কে অবহিত করল না।’

দুইপক্ষের এমন পাল্টা পাল্টি বক্তব্য দিশেহারা ইউক্রেনের সাধারণ জনগণ। তবে কি কারণে দুই পক্ষের মাঝে শান্তি আলোচনা হুট করে থেমে গেলো সে বিষয়ে এখনো কোন সুস্পষ্ট তথ্য সামনে না এলেও এক ভয়ংকর তথ্য সামনে এনেছেন তুরস্ক।  

তুরস্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেন, রাশিয়াকে দুর্বল করতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়ত করতে চায়। 



‘সামরিক জোট ন্যাটোর মধ্যে এমন কিছু দেশ রয়েছে যারা চায় ইউক্রেনে যুদ্ধ চলতে থাকুক। তারা চায় (যুদ্ধের মাধ্যমে) রাশিয়া দুর্বল হয়ে যাক।’ তবে কোন দেশগুলো এখনই ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান চায় না সে বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।   

তুরস্ক ইউক্রেন ও রাশিয়ার মাঝে যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করে যাচ্ছে। যেসব দেশ এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছে তার মাঝে তুরস্ক সবার উপরে। দেশটির প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় দেশ দুটির প্রতিনিধিরা সর্বপ্রথম সরাসরি নিজেদের মাঝে আলোচনার টেবিলে বসে। এমনকি দেশদুটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা তুরস্কের উদ্যোগেই নিজেদের মাঝে আলোচনার টেবিলে উপস্থিত হয়। 

তবে দুই পক্ষের বক্তব্য, পাল্টা বক্তব্য এবং আলোচনার অগ্রগতি থেকে দেশদুটোর মাঝে যোগাযোগের দুর্বল অবস্থান একদম পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। সেই সাথে পশ্চিমা কূটনীতিও যে এই যুদ্ধ বন্ধে বেশ খারাপ প্রভাব তৈরি করছে সে বিষয়টিও এখন স্পষ্ট। 

ইউক্রেনকে ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করার প্রলোভন দেখিয়ে রাশিয়ার সাথে এক প্রকারে যুদ্ধ নামিয়ে দেয় পশ্চিমা বিশ্ব। তবে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার সাথে সরাসরি দ্বন্দ্বের ভয়ে এখন ইউক্রেনকে একা লড়াইয়ে নামিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি ঠিকই তুলে নিচ্ছে পশ্চিমারা। 

তবে অর্থ, অস্ত্র এবং প্রলোভন যে ইউক্রেনকে রাশিয়ার হাত থেকে রেহাই পেতে সহায়তা করবে না সেটা ইতিমধ্যে ইউক্রেনের সাধারণ জনগণের বোধগম্য হয়ে উঠেছে। কারণ এই যুদ্ধে মস্কোর চাহিদা অনুযায়ী ক্রিমিয়ার স্বীকৃতি, ডনবাস অঞ্চলের স্বাধীনতা এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়া নিশ্চয়তা কোনটাই এখনো কিয়েভ দিতে পারেনি। উল্টো পশ্চিমা চাপে সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার সাথে আপস না করার যে মনোবাসনা ইউক্রেনের তা শুধুই যুদ্ধকে দীর্ঘায়তই করবে না সেই সাথে ইউক্রেনের সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি করবে সে বিষয়ে অনেকটা সহজেই অনুমান করা যায়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭