ইনসাইড পলিটিক্স

জাইমা না সিঁথি: কে বিএনপির ট্রাম্পকার্ড?


প্রকাশ: 22/04/2022


Thumbnail

আগামী নির্বাচন এবং আন্দোলনে বিএনপি একটি ট্রাম কার্ড ব্যবহার করতে চায়। অন্য দলের নেতাদের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বিএনপি নিজেদের মধ্য থেকে একজন চমক জাগানিয়া নেতা জনগণের সামনে উপস্থাপিত করতে চান। আর এটি করার মধ্য দিয়ে একটি গণজোয়ার সৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির। বিএনপির এই চমক নেতা হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিল ডা. জোবায়দা রহমান। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় তিনি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছে যে, জোবায়দার মামলা চলবে। এ অবস্থায় তারেক জিয়া  জোবায়দাকে দেশে পাঠানোর ঝুঁকি নিতে রাজি নন। ফলে জোবায়দার আপাতত বিএনপির ট্রাম্পকার্ড হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই বাস্তবতায় বিএনপি নতুন চিন্তা ভাবনা করছে এবং এই নতুন চিন্তা ভাবনার মধ্যে তারেক জিয়ার মেয়ে জাইমা রহমান এবং কোকোর প্রয়াত স্ত্রী সিঁথির নাম আলোচনায় আসছে। এরমধ্যে জাইমা রহমানের নামটি বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিএনপিতে।

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া কাগজে-কলমে বিএনপি চেয়ারপারসন হলেও তিনি দলীয় কোন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে বেগম জিয়া এখন সরকারের কৃপায় জামিনে মুক্ত আছেন, ফিরোজায় বসবাস করছেন, কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি অংশগ্রহণ করছেন না। অন্যদিকে, তারেক জিয়া লন্ডনে থেকে দল পরিচালনা করছেন কিন্তু দেশে তার অনুপস্থিতির কারণে তার নেতৃত্ব বিএনপির মধ্যে কোন প্রভাব ফেলতে পারছে না, জনগণের মধ্যেও কোন ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারেক জিয়া। তাছাড়া তারেক জিয়ার এক ধরনের ইমেজ সঙ্কট রয়েছে। একজন রাজনৈতিক নেতার চেয়ে তাকে একজন দুর্বৃত্ত, দুর্নীতিবাজ হিসেবেই জনগণ বেশি চেনে। এ কারণেই তারেক জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি বড় ধরনের কোনো আন্দোলন করতে পারবে এমনটি বিএনপি নেতারা এখন বিশ্বাস করে না। অবশ্য বিএনপি নেতারা অন্যভাবে কথাটি বলেন। তারা মনে করেন যে, যেহেতু দেশে আন্দোলন করতে হবে সে কারণে নেতৃত্ব দেশেই থাকতে হবে। আর এই বাস্তবতায় বিএনপি চিন্তাভাবনা করছে যে, নির্বাচনকেন্দ্রিক চূড়ান্ত আন্দোলনের যেকোনো একটি পর্যায়ে জিয়া পরিবারের কাউকে দেশে নিয়ে এসে চমক তৈরি করার চেষ্টা করা। কিন্তু সেই চমক প্রথমে হোঁচট খেয়েছে।

এখন বিএনপির অনেকেই চাইছেন যে, তারেক জিয়ার মেয়ে জাইমা রহমানকে নির্বাচনের আগে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে দেশে নিয়ে আসা হোক এবং জাইমা রহমানের উপস্থিতি দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করবে, উদ্বুদ্ধ করবে, উৎসাহিত করবে। তবে সদ্য ব্যারিস্টার হওয়া জাইমা রহমান রাজনীতিতে কতটা আগ্রহী এবং বাংলাদেশে এসে তিনি কী করবেন এটি নিয়েও বিএনপির মধ্যে নানা রকম প্রশ্ন আছে।  তারা মনে করছেন যে, জাইমা এভাবে এসে আর কিছু করতে পারবেন না, শুধু সাময়িকভাবে মানুষের আবেগ সৃষ্টি করবে। অন্যদিকে, সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিকে নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। তবে সিঁথি বিএনপির রাজনীতিতে কতটা টনিক হবেন সেটা নিয়েও বিএনপির কেন্দ্রের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তবে সিঁথির কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর শর্মিলা রহমান কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং তিনি বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বেগম জিয়া অসুস্থ হওয়ার পর তিনি এসেছেন, তার শুশ্রূষা করেছেন। ইত্যাদি কারণে বিএনপির মধ্যে তাকে একটা নিয়ে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। কিন্তু সিঁথির যে ক্যারিসিম্যাটিক ইমেজ সেটি তার নেই এবং কোকো কখনো রাজনীতির পাদপ্রদীপের ছিলেন না। এই অবস্থায় সিঁথি বিএনপিতে বড় ধরনের কোন গণজাগরণ সৃষ্টি করতে পারবে বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন না। গত কিছুদিন ধরেই নেতৃত্ব সংকটে ভুগতে থাকা বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনকে নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছিল কিন্তু সেটি যে বিএনপির ভুল ছিল তা বিএনপির নেতারা এখন প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। এই বাস্তবতায় এখন বিএনপি দলের মধ্য থেকেই কাউকে নেতা হিসেবে খুঁজে পেতে চাচ্ছে। কিন্তু শর্ত হলো তাকে হতে হবে জিয়া পরিবারের সদস্য।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭