ইনসাইড বাংলাদেশ

দুর্ভোগের ভয়াবহতার শঙ্কায় ঈদযাত্রা


প্রকাশ: 23/04/2022


Thumbnail

ঈদে মহাসড়কে যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি নতুন নয়। প্রতিবছর ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বিশেষ করে গত দুই বছর করোনা মহামারীর কারনে বাড়ি যেতে পারেনি মানুষ। এবার করোনার প্রকোপ নেই বললেই চলে। তাছাড়া ঈদের ছুটিও বেশি থাকার ফলে এবার বাড়ি যাওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহও বেশি। এবারের ঈদে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়তে পারে বলে জানিয়েছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এসব কারণে সড়কে যে এবার অন্যান্যবারের তুলনায় যাত্রী ভোগান্তী বেশি হবে এটা বলাই বাহুল্য। শুধু তাই নয়, দেশের মহাসড়কগুলোতে উন্নয়ন কাজ চলার কারনে যে এবার ঈদযাত্রায় অসহনীয় যানজট হবে এটাও অনেকটাই আঁচ করা যাচ্ছে।

বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলগামী ২৩ জেলার মানুষের দুর্ভোগ শুরু হয় টঙ্গী ব্রিজ থেকে। একদিকে বেহাল সড়ক, অন্যদিকে উন্নয়ন কাজ চলমান। এ কারণে প্রতিদিন এ সড়কে যানজট লেগেই থাকে। এতে দুর্ভোগে পড়ে এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে যাত্রীদের দুর্ভোগ লেগেই থাকে। টঙ্গী থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক এখনো খানাখন্দে ভরা। তাই যাত্রীদের অতিরিক্ত দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বড় এক সমস্যা সড়কে পানি জমে থাকা। বৈশাখের শুরু থেকেই বৃষ্টি হওয়ায় এ সড়কে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে। কেবল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নয়, ঈদের আগে-পরে দেশের সব মহাসড়কেই যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। মহাসড়কের পাশে হাটবাজারের কারণেও যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে দেশের মহাসড়কগুলো কার্যত মহাসড়ক হয়ে উঠতে পারছে না। বর্তমানে সারা দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ছোট-বড় হাজার হাজার দোকান নিয়ে কয়েক শ স্থায়ী, অস্থায়ী ও অবৈধ হাটবাজার গড়ে উঠেছে। এসব হাটবাজারকেন্দ্রিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে।

এসব সমস্যার কথা মাথায় রেখে এরই মধ্যে ঢাকা ছাড়তে শুরু করছে নগরবাসী। ঈদযাত্রায় সড়কের দুর্ভোগ ও যানজটের কথা চিন্তা করেই আগেভাগে পরিবার পরিজন দিয়ে গ্রামের পথে পাড়ি দিচ্ছেন অনেকেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে চাপ বেড়েছে ঘুরমুখো মানুষের। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এসব স্পটে যাত্রীর চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে অনেকেই বলছেন, করোনার কারণে গত দুই বছর ধরে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঈদ উদ্যাপন করতে পারেননি। এবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকা থেকে গ্রামে যাবে। রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা ও নির্মাণকাজ চলমান থাকায় ঈদের আগের এক সপ্তাহে দীর্ঘ যানজটের শঙ্কা রয়েছে। এজন্যই সড়কের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে আগেই গ্রামের পথে রওয়ানা দিচ্ছেন তারা। কেউবা পরিবারের সদস্যদেরকে ঈদের ছুটির আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন নিজ নিজ গন্তব্যে।

এদিকে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাসের সব অগ্রিম টিকিট শেষ হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন বাস কাউন্টারের মাস্টাররা। টিকিট না পেয়ে ঈদে কীভাবে বাড়ি যাবেন সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ি ফেরা মানুষের। রাজধানীর টেকনিক্যাল, কলাবাগান, গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

গাবতলী বাস টার্মিনালের বিভিন্ন বাস কোম্পানির কাউন্টার থেকে জানানো হয়- ২৯, ৩০ এপ্রিল এবং ১ ও ২ মের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। সাকুরা পরিবহনের টেকনিক্যাল কাউন্টারের মাস্টার মো. আবদুল হক বলেন, চাকরিজীবীদের আগ্রহের কেন্দ্রে ২৯ এবং ৩০ এপ্রিলের টিকিট। ছাত্ররা মূলত আগেই বাড়ি যাচ্ছেন। তারা ২৭ বা ২৮ এপ্রিলের দিকেই চলে যাচ্ছেন। বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রির শুরুর দিকে অনেক যাত্রী টিকিট নিতে এলেও এখন সেই চাপ অনেক কম। অনেকেই হয়তো বুঝতে পারেন যে এখন টার্মিনালে গিয়ে কাঙ্খিত টিকিট না-ও পেতে পারে। তাই এখন চাপ নেই। আর টিকিটও নেই। অধিকাংশ যাত্রী কাঙ্খিত দিনের টিকিট চেয়ে পাচ্ছেন না। 

অন্যদিকে ঈদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। একই সঙ্গে সংগঠনটি শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিরঘাট নৌপথে ফেরিসংখ্যা বৃদ্ধি, সার্বক্ষণিক ফেরি চলাচল অব্যাহত রাখা এবং অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়াতে এ দুটি নৌপথসহ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচলের ওপর কঠোর নজরদারির আহ্বান জানিয়েছে।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের ঈদে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ গ্রামে যাবে। গার্মেন্ট-শিল্প-কারখানা ও সরকারি অফিসে একসঙ্গে ছুটি হবে। এতে শেষ সপ্তাহে যাত্রীদের চাপও বাড়বে কয়েকগুণ। এ ছাড়া ঈদযাত্রায় মহাসড়কে দুর্ভোগ সহ্য করতে হবে। কারণ ঢাকা থেকে বের হওয়ার অধিকাংশ সড়কে খানাখন্দ রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় তীব্র যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ সিরাজগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কাঁচপুর সেতু, বঙ্গবন্ধু সেতু ও শিমুলিয়া ফেরিঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭