ইনসাইড আর্টিকেল

ঐতিহ্যমণ্ডিত জব্বারের বলীখেলা


প্রকাশ: 24/04/2022


Thumbnail

শতবর্ষী পুরানো চট্টগ্রামের সার্বজনীন এক উৎসবের নাম ‘জব্বারের বলীখেলা’। পাশাপাশি এ খেলা জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রতিযোগিতা হিসেবেও বিবেচিত। চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অহংকারে পরিণত হয়েছে এই বলী খেলা। 

প্রতি বছরই বাংলা পঞ্জিকার বৈশাখ মাসের ১২ তারিখে (২৫ এপ্রিল) ঐতিহাসিক লালদিঘী মাঠে এই খেলার আয়োজন করা হয়। বলী খেলাকে ঘিরে লালদিঘী মাঠের আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তিনদিন ধরে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার। ১২ বৈশাখ (২৫ এপ্রিল) বলী খেলার মূল আসর বসলেও আগে পরে প্রায় সপ্তাহব্যাপী মেলা বসে চট্টগ্রামের লালদিঘী এলাকায়। বর্তমানে এটিকে সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 

এখানকার বৈশাখী মেলার বিস্তৃতি আন্দরকিল্লা মোড় থেকে শুরু করে লালদিঘীর চারপাশ, হজরত আমানত শাহ (রহ.)-এর মাজার ছাড়িয়ে জেলরোড, দক্ষিণে বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়িয়ে কোতোয়ালির মোড় এবং পশ্চিমে সিনেমা প্যালেস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দোকানিরা শামিয়ানা টাঙ্গিয়ে, কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন। বলতে গেলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্যতম পুরানো এবং বড় বৈশাখী মেলা এটি। নানান গ্রামীণ পণ্যের পসরা বসে এই মেলায়।  চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে কুটিরশিল্পীরা নিয়ে আসেন নানান পণ্য।

মেলাকে কেন্দ্র করে রমরমা বিক্রি হয় কুটিরশিল্পীদের তৈরি নকশীকাঁথা, মাছ ধরার চাঁই, বেতের তৈরি চালুনি, তৈজসপত্র, তালপাখা, হাঁড়ি-পাতিল, কাঠ-বাঁশ-বেতের তৈরি আসবাবপত্র, হাতপাখা, ঝাড়ু, কুলা, শীতলপাটি,বেতের তৈরি চালুনি, মাছ ধরার চাঁইসহ আরো কত কী!

গৃহকর্ত্রীরা সংগ্রহ করেন গৃহস্থালির নিত্যব্যবহার্য তৈজসপত্র। যেমন, কারুকাজ করা পিঠার ছাঁচ, রুটি বেলার বেলুনি ও পিঁড়ি, পোড়ামাটিতে তৈরি বিভিন্ন মৃৎপাত্র, মটকা, মাটির কলস, ফুলদানি ইত্যাদি। তবে এককালে মেলায় যেমন লোকজ গ্রামীণ পণ্যের আধিপত্য ছিল, বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই ঐতিহ্যে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। মৃৎশিল্প কিংবা কারু-দারুশিল্পকে হঠিয়ে প্লাস্টিক-পণ্যও দখল করছে মেলা।

এছারাও মেলার পাশাপাশি আগত দর্শনার্থীদের জন্য নাগরদোলা, সার্কাস, পুতুল নাচ, যাদু প্রদর্শনী, ভ্যারাইটি-শোর আয়োজন করা হয় লালদিঘি ময়দানে। শহরবাসীরা এই মেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করেন।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে গত দুই বছর অনুষ্ঠিত হয়নি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই জব্বারের বলীখেলা। চলতি বছরেও মাঠ ব্যবহারের অনুপযোগী থাকায় প্রথমে এক সংবাদ সম্মেলন করে মেলা ও বলীখেলা স্থগিত করার ঘোষণা দেন আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটি। পরবর্তিতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এবছর মেলার আয়োজন করার ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

আগামী ১২ বৈশাখ (২৫ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘির জব্বারের বলীখেলা। তবে আগে এ খেলা লালদীঘি মাঠে হলেও মাঠ অনুপোযোগী থাকার ফলে এবারের মেলা এবং বলী খেলার আয়োজন করা হবে জেলা পরিষদ চত্বরে। ১২ বৈশাখ (২৫ এপ্রিল)  বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত জেলা পরিষদ চত্বরে বলীখেলা অনুষ্ঠিত হবে। আর এই মেলা চলবে আগামী ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ এই তিনদিন পর্যন্ত।

ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার ১৩১৬ সনের ১২ বৈশাখ শুরু করেন বলীখেলা। ২০১৯ সালে লালদীঘি ময়দানেই মেলা ও বলীখেলার ১১০ তম আসর বসে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭