ইনসাইড বাংলাদেশ

৫১ বছরের পরিত্যক্ত জমি তেঁতুলতলা মাঠ


প্রকাশ: 26/04/2022


Thumbnail

গত সপ্তাহে রাজধানীর ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সাথে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা ছিল টক অব দা টাউন। সে ঘটনার রেশ কাটতেই চলতি সপ্তাহে হঠাৎ আলোচনায় উঠে আসে ধানমন্ডির অখ্যাত তেঁতুলতলা মাঠ। তবে অখ্যাত বলা হলেও মাঠটির ৫১ বছরের নিজস্ব একটা ইতিহাস রয়েছে। সেখানে একটি তেঁতুলগাছ থাকায় জায়গাটি তেঁতুলতলা নাম পায় বলে জানা গেছে। রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত স্কয়ার হাসপাতালের উল্টো দিকে গলিপথে ঢুকলেই সামনে তেঁতুলতলা মাঠ। 
 
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই জায়গাটি পরিত্যক্ত। নাজমা আছিরন নামের এক বিহারি নারী ছিলেন এই ৩২ শতক জমির মালিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দেশ ছেড়েছেন। 

নথিপত্র থেকে জানা গেছে, ২০০৬ সালের পর তেজগাঁওয়ের আওলাদ হোসেন মার্কেটের মনু মিয়ার মেয়ে মমতাজ বেগম ও বেগম জাহান ওই জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করেন। বিলকিস বানু নামের ধানমণ্ডির আরেক নারীও জমিটি বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেন। পরে তিনি হাইকোর্টে রিটও করেন।

এই খোলা জায়গায় উত্তর ধানমণ্ডির বাসিন্দারা ঈদের নামাজ পড়ে। ঈদের জামাতের ইমামের জন্য একটি মিম্বারও করা আছে। আবার মহল্লার কেউ মারা গেলে গোসলের জন্য একটি পাকা ঘর তৈরি করা আছে ওই জমিতে। সেখানে জানাজাও হয় স্থানীয়দের। এর বাইরে প্রায় সারা দিনই শিশু-কিশোররা এই মাঠে খেলাধুলা  করে। স্থানীয় কয়েক প্রজন্ম বড় হয়েছে এই মাঠে খেলাধুলা করে। নানা দিবসে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। এভাবেই ব্যবহার হয়ে আসছে তেঁতুলতলা মাঠ।

২০২০ সালে স্থানীয়রা হঠাৎ জানতে পারে, মাঠটি কলাবাগান পুলিশ নিয়ে নিচ্ছে। এর পর থেকেই স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিবাদসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এলাকাবাসী ধরনা দিয়ে আসছে। কিন্তু প্রতিকার মেলেনি। এরই মধ্যে তেঁতুলতলা মাঠে খেলার কারণে একাধিক শিশু-কিশোরকে কান ধরে উঠবস করানোরও অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

এলাকাবাসী জানান, গত ৩১ জানুয়ারি সকালে তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিন দুপুরেই থানা পুলিশের ১০-১২ জন সদস্যের উপস্থিতিতে মাঠের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়। 

রোববার প্রতিবাদ করে হয়রানির শিকার সৈয়দা রত্নার মেয়ে শেওতি শাগুফতা বলেন, ‘মূলত ২০২০ সালে আমরা সবাই জানতে পারি, এখানে থানা হবে। করোনার কারণে তৎপরতা বন্ধ ছিল। গত জানুয়ারি মাসে ফের তৎপরতা শুরু হলে প্রতিবাদ করা হয়। রবিবার দেয়াল তৈরির কাজ দেখে আমার মা দ্রুত কী করবেন বুঝে উঠতে না পেরে ফেসবুক লাইভে গিয়ে প্রতিবাদ করেন। ’

গত রোববার ফেসবুক লাইভে গিয়ে এই মাঠে পুলিশের স্থাপনা নির্মাণকাজের প্রতিবাদ করায় সাংস্কৃতিক কর্মী ও সমাজকর্মী সৈয়দা রত্না ও তাঁর কিশোর ছেলেকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব প্রতিবাদ ও নাগরিক সমাজের তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদের মুখে প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর মুচলেকা নিয়ে মা-ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলেও গতকাল সোমবার সকালে নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখে পুলিশ। বিকেল ৩টার দিকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও এলাকাবাসী সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। তখন কাজ বন্ধ করেন শ্রমিকরা। পরিবেশ ও সংস্কৃতি কর্মী এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তেঁতুলতলা মাঠে নির্মাণকাজ বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবি জানান। কিন্তু গতকাল রাত পর্যন্ত পুলিশ মাঠে অবস্থান নিয়ে ছিল।

এলাকাবাসী বলছে, উন্মুক্ত জায়গাটি শিশুদের খেলাধুলা, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাজে ব্যবহার হচ্ছিল। ভিন্ন জায়গায় থানা ভবন স্থাপন করে জায়গাটিকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি করেছে এলাকাবাসী।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭