কালার ইনসাইড

শিল্পীদের মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি?


প্রকাশ: 26/04/2022


Thumbnail

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা যেন থামছেই না। একের পর এক নাটকীয়তা চলছে এই সমিতিকে নিয়ে। কখনো কেউ নির্বাচিত হয়েও পদত্যাগ করছেন। আবার কখনোবা কেউ নির্বাচিত না হয়েও যুক্ত হচ্ছেন কমিটিতে। বিশেষ করে নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়েই শুরু হয়েছিলো ঝামেলার। এমনকি এই পদ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে চিত্রনায়ক জায়েদ খান ও চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারকে। এখনো পদটি নিয়ে সুরাহা হয়নি। তবে সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে নিপুণ পুরোদমেই সমিতির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। 

একটু পিছন ফিরে তাকালে আমরা দেখবো শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে বেশ উত্তাল ছিলো চলচ্চিত্র পাড়া। এবারের নির্বাচন যেন হার মানিয়েছে আগের সব নির্বাচনকে। সারা দেশ ব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলো এই নির্বাচন। এক কথায় বলা যায় জাতীয় নির্বাচনকেও হার মানিয়েছে এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচন।

নির্বাচনে এবারের ইলিয়াস কাঞ্চনের অংশগ্রহণ বেশ আলোচনার সৃষ্টি করে ছিলো। ইলিয়াস কাঞ্চনকে সঙ্গে নিয়ে এবার নির্বাচন করেছিলেন নায়িকা নিপুণ আক্তার। চলচ্চিত্রে কাজ করে যত না আলোচনায় তিনি এসেছিলেন তাঁর চেয়ে বেশী এবার আলোচনায় এসেছেন শিল্পী সমিতির নির্বাচনে অংশ নিয়ে। তবে সেটি অবশ্য ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্যই সম্ভব হয়েছে। বেদের মেয়ে জোসনা খ্যাত এই নায়কের সমর্থনে ছিলো পুরো বাংলাদেশ। যার ফলে তাঁর কিছুটা সুফলও পেয়েছেন নিপুণ।

যাক সেসব কথা, আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন নায়ক জায়েদ খান। তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে ছিলেন নিপুণ। শুরুতে সহজ ভাবেই তাঁর পরাজয় মেনে নিলেও পরবর্তীতে এক ভিন্ন  রূপ দেখা যায় তাঁর। সংবাদ সম্মেলন থেকে শুরু করে আদালত পাড়া পর্যন্ত গিয়েছেন তিনি। যা এখনো চলমান।

এদিকে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বেশ কয়েকবার সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গিয়েছে নিপুণকে। তাঁর এমন কর্মকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলো। এমনকি অনেক সিনিয়র শিল্পীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।

সম্প্রতি এই সমিতি নিয়ে আবারও বিতর্ক বেড়েছে। যার শুরু সদ্য পার হওয়া বৈশাখ ও শিল্পী সমিতি আয়োজিত ইফতারকে কেন্দ্র করে।

শিল্পী সমিতি প্রতিবছর শিল্পীদের বাসায় পৌঁছে দেন বৈশাখী উপহার। তবে এবার দেখা গিয়েছে ভিন্ন চিত্র। অনেক শিল্পী অভিযোগ করেছেন তাদের এবার কোন বৈশাখী উপহার দেয়া হয়নি। সেই তালিকায় আছে অনেক সিনিয়র শিল্পী থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই। তবে অনেকেই মনে করেছিলেন নির্বাচনকে নিয়ে যে বিভাজনের সৃষ্টি হয়ে ছিলো তা হয়তো শেষ হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন।



বৈশাখের পর শিল্পী সমিতি আয়োজন করে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের। এনিয়েও উঠেছে নানা অভিযোগ। অনেকে শিল্পীদের দাওয়াত দেয়া হয়নি বলে ফের অভিযোগ উঠে। শুধু তাই নয় ইফতারে এবার তেমন ভাবে সিনিয়র শিল্পীদের দেখা যায়নি। পাশাপাশি বিনোদন সাংবাদিকদের উপস্থিতিও ছিলো কম।

আয়োজিত অনুষ্ঠানে এবার মূল  আকর্ষণ ছিলেন উপমহাদেশের কিংবদন্তী অভিনেত্রী শবনম। তবে তিনি গেলেও নানা বিষয় নিয়ে অভিযোগ করেছেন আম্মাজান খ্যাত   শবনম। তিনি বলেছিলেন, অনুষ্ঠানে আসবো তবে কোনো ইউটিউবার যেন না দেখি। ইউটিউবার থাকলে কিন্তু আমি যাবো না’ কিন্তু এমন সতর্কবাণী কোনো কাজেই আসেনি। যার ফলে আয়োজকদের উপর চটে ছিলেন তিনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে শবনম বলেন, বিনোদন জগতে যেকোনো আয়োজনে সাংবাদিকরা প্রাণ। কিন্তু এখানে এসে আমি সেটা ফিল করিনি। একটা গ্যাপ রয়েছে। এই গ্যাপ পূরণ করতে হবে সমিতিকেই। বিভিন্ন মাধ্যম থেকেই জেনেছি সাংবাদিকদের বেশ বড় একটা অংশ ঐ আয়োজনে অংশ নেননি। এটা দুঃখজনক। অথচ বার বার ইলিয়াস কাঞ্চনকে বলেছি- হিরো ইউটিউবার থাকলে কিন্তু আমি যাবো না। তিনি আমাকে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলে এসে দেখি মোবাইল হাতে অতিথিদের সামনে  লোকজনের ভিড়! দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বলতে পারি সাংবাদিকরা কখনো অশোভনভাবে অতিথিদের সামনে এভাবে ভিড় করবে না। মানে হচ্ছে ওখানেও ইউটিউবার ছিলো। দুঃখজনক।

এদিকে অনেক শিল্পী সম্প্রতি সমিতির বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। দিচ্ছেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস। তবে এজন্য তাদেরকেও নানা ভাবে ফোন স্ট্যাটাস ডিলিট করতে বলা হচ্ছে।

শুধু তিনি একাই নন নায়িকা তানিন সুবাহ তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, আমি একজন চলচ্চিত্র শিল্পী। আমাদের একটি সংগঠন আছে যার নাম চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। আগে সেখানে যেতাম, নিজেদের সুখ, কষ্টের কথা ভাগাভাগি করতে। কিন্তু এখন এই সমিতির কথা শুনলেই কেমন জানি লাগে। গতকাল রাতে আমি আমার বিভিন্ন আক্ষেপ নিয়ে একটি লিখা পোস্ট করেছিলাম। এরপর থেকেই শুরু নানা যন্ত্রণা।  অনেকেই কল দিয়ে পোস্ট ডিলিট করতে বলে। শুধু তাই নয় আজ সমিতির ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন তারা। কিন্তু গতকাল রাত পর্যন্ত কোন ফোন বা কার্ড আমি পাইনি। রাতে লিখা পোস্ট করার পর বিষয়টি জানাজানি হলে রাত তিনটায় আমাকে কল করে দাওয়াত দেয়া হয়।

জয়া চৌধুরী নামে এক নায়িকা তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, আমি একটা পোস্ট দিয়েছি গতকাল, এত বাজে কমেন্ট কেন???আমি শিল্পী সমিতি নির্বাচন করেছি ওপেন নিপুণ আপার দলে,যা কোনো নায়িকা করেননি প্রকাশে। আমার মূল্যায়ন করা হয়নি। আর ইফতার দাওয়াত মেছেনজার কেন?? আমার বাসা ঠিকানা শিল্পী সমিতিতে দেওয়া আছে। এটা কি বর্তমান কমিটি ভুলে গেছে? আর বৈশাখী গিপট আমি সময় মতো পেলাম না কেন?

সবকিছু মিলিয়ে তবে কী বলা যায় শিল্পী সমিতির বর্তমান কার্যক্রমে শিল্পীরা আস্থা হারাচ্ছেন তাদের উপর? নাকি বর্তমান কমিটি শিল্পীদের মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন? এমন প্রশ্ন এখন অনেকের মাঝেই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭