এডিটর’স মাইন্ড

নানকের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশ: 27/04/2022


Thumbnail

জেলা পরিষদ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল এ সপ্তাহের শুরুতেই। জাতীয় সংসদের অধিবেশনে জেলা পরিষদ সংশোধন আইন পাস করা হয়েছিল। সেখানে নতুন জেলা পরিষদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। আইনে বলা ছিল যে, প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার আমলা অথবা যেকোনো গণ্যমান্য ব্যক্তিকে পছন্দ করতে পারবেন। এরপরই বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছিল যে, এটি আমলাদের আরেকটি বিজয়। জেলা পরিষদেও আমলাদের দখলদারিত্ব কায়েম হতে যাচ্ছে। আইন পাস হওয়ার পরপরই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাহী কর্মকর্তা বা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের কথাও বলা হয়েছিল। জেলা পরিষদের যারা চেয়ারম্যান ছিলেন তারা সকলেই ছিলেন আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতা এবং এটিই ছিল আওয়ামী লীগের একটি সান্তনা পুরস্কারের মতো। 

যে সমস্ত নেতাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি সংসদ নির্বাচনে অথবা উপজেলা নির্বাচনে তাদেরকেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বসানো হয়েছিল। কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাদেরকে দায়িত্ব নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অনেকেই ভালোভাবে নেননি। তারা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছিলেন। অনেকেই মনে করেছিলেন যে, আমলাদের হাতে এইভাবে ক্ষমতা অর্পণ করাটা রাজনীতিবিদ হিসেবে তাদের জন্য অপমানজনক। এরপর আওয়ামী লীগের মধ্যেও এ নিয়ে নানারকম আলাপ-আলোচনা চলছিল। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে রাজনীতিবিদদের নেয়া হবে। সে অনুযায়ী তালিকাও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সাথে কথা বলেন, তারা বিভিন্ন রকম মতামত দিয়েছিলেন। এই সব মতামতের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছিলেন যে, সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনে আগে জেলা পরিষদের নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া জেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের বিভক্তি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, কোথাও কোথাও অসন্তোষ দেখা দিতে পারে, এই বিষয় নিয়ে নতুন করে বিতর্ক না তৈরি করাই ভালো। 

জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও প্রস্তাব দেন যে, যারা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিল তাদের মধ্য থেকে যদি কেউ ভুল-ত্রুটি করে থাকে তাদেরকে বাদ দিয়ে বাকিদেরকেই প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া উচিত। তিনি এক্ষেত্রে উদাহরণ দিয়েছিলেন যে, যেমন মেয়রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বিদায়ী মেয়র দায়িত্ব পালন করেন, সংসদে যেমন নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরাই দায়িত্ব পালন করেন, ঠিক একইভাবে নতুন জেলা পরিষদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত যেন বর্তমান চেয়ারম্যানরাই যেনো প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর বাইরেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা বিভিন্ন মতামত দিয়েছিল। তবে সকলেই বলেছিল যে, নতুন করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আবার জেলাগুলোতে অস্থিরতা দেখা দিবে। সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগের জন্য এটি আরেকটা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

এই বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলে আলোচনা হয় এবং এই আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন যে, যারা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাদেরকেই আপাতত প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। ফলে এটি নিয়ে একাধিক বিতর্কের অবসান ঘটলো। প্রথমত, জেলা প্রশাসনগুলো আমলাদের দখলে যাচ্ছে, সরকার আমলাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এরকম বক্তব্য বন্ধ হলো। দ্বিতীয়ত, এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ে যে অস্থিরতা, সেই অস্থিরতাও বন্ধ হয়ে গেল। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জেলাগুলোতে তার রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে সংহত করতে পারলো বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭