ইনসাইড থট

বর্ণচোরা অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের নয়া শঙ্কা


প্রকাশ: 28/04/2022


Thumbnail

গত ১৭ এপ্রিল ২০২২ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে ‘ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় মুজিবনগর সরকারের অন্যান্য নেতার পাশাপাশি খুনি খন্দকার মোশতাকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন নীলদল থেকে নির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ। এ নিয়ে ব্যাপক সামালোচনা শুরু হলে এ ঘটনার জন্য তিনি ক্ষমা চান এবং বিষয়টি ‘অনিচ্ছাকৃত’ বলে উল্লেখ করেন।

বঙ্গবন্ধুর খুনি ঘৃনিত খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ক্ষমা চাইলেই কি সব শেষ? এটা কী কোন আকস্মিক ঘটনা? এই শ্রদ্ধা নিবেদনের পিছনে কোন সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র রয়েছে তা খুঁজে বের করা জরুরি নয় কি? একজন প্রকৃত আওয়ামী লীগ কর্মী অনিচ্ছাকৃতভাবে বা মনের ভুলে কখনই মোশতাকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন না। ড. মো. রহমতউল্লাহ নিশ্চয়ই কোন অনুপ্রবেশকারী। তার আওয়ামীলীগে যোগদানের দিনপঞ্জি অনুসন্ধান করা জরুরি। এই রহমতুল্লাহ’র মতো আরও অনেক বর্ণচোরারা সরকার ও সংগঠনে ঘাপটি মেরে রয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শী নেতৃত্বে খুবই সুনামের সাথে দীর্ঘ ১৩ বছর সরকার পরিচালিত হচ্ছে। বিরোধীদল সরকারের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলেও স্বাধীনতাবিরোধী ও ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রকারীরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। গত ৩১ আগস্ট ২০২১ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ও ১৫ আগস্টের খুনিদের দোসররা এখনও ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে’। 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক, তৃণমূল থেকে গড়ে উঠা অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ জনাব মির্জা আজম এমপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত একটি কর্মীসভায়  বলেছেন, ‘বিএনপি ঘরানার এক শিল্পপতির দুই ছেলে (বয়স ১৯ ও ২১ বছর) মহানগর আওয়ামী লীগের দুই থানা (শ্যামপুর ও কদমতলী) কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন’। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই দুইজন কোনদিন কোথায়ও আওয়ামী লীগ বা এর কোন অংগ-সহযোগী সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন না।

১৯৭৫ এর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে নিয়মিত আওয়ামী লীগে যোগদান করছে। ইদানিং লক্ষ করা যাচ্ছে, অনুপ্রবেশকারীরা খুবই সূক্ষ্ম কৌশল অবলম্বন করে তৃণমূল পর্যায়ে যেমন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সন্তুষ্ট করে কমিটির গুরুত্বহীন পদ-পদবী ম্যানেজ করে আওয়ামী লীগার সাজে। পরবর্তিতে খুবই ধীর গতিতে এগুতে থাকে। ঐ নেতাদের ছবির সাথে নিজের ছবি সংযুক্ত করে ফেষ্টুন-ব্যানার লাগিয়ে আত্মপ্রচার শুরু করে। পরবর্তী পর্যায়ে আরও উপরের পর্যায়ের নেতাদের ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে ভুরিভোজন করিয়ে ও সেবা (!) প্রদানের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করে। পরবর্তী পর্যায়ে স্থানীয় থানা বা জেলা পর্যায়ের নেতাদের অবগত না করে, তাদের অনুমতি ছাড়াই ঐ সকল কেন্দ্রীয় বড় বড় নেতাদের অতিথি করে ব্যক্তিগত প্রচারের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা বড় নেতাদের সম্মানে ঐ সকল অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অনুপ্রবেশকারীদের আত্মপ্রচারকে বৈধতা দিতে বাধ্য হন। 

অবশ্য এর ব্যতিক্রমও ঘটে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে স্থানীয় পর্যায়ে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনে বাধাদানকারী জনৈক অনুপ্রবেশকারী এমনিভাবে একজন বড় কেন্দ্রীয় নেতাকে অতিথি করে আত্মপ্রচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাদের আয়োজিত আত্মপ্রচার অনুষ্ঠানে জনৈক মহানগর নেতা বক্তৃতায় এ বিষয়ে আলোকপাত করে বলেন, ‘স্থানীয় থানা ও মহানগরকে অবহিত না করে কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূল পর্যায়ে অতিথি হয়ে আসলে সংগঠনের চেইন-অব-কমান্ড নষ্ট হয়ে যাবে’। এমনিভাবে সুযোগসন্ধানী বর্ণচোরা নব্য আওয়ামী লীগাররা সংগঠনে প্রভাবশালী হয়, প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। তারা বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে প্রার্থী হয়, রহমতুল্লাহর মত মনোনয়ন বাগিয়ে নেয়। সংগঠনে রহমতল্লাহদের সংখ্যা দিনে দিনে অনেক হয়েছে এবং এখনও চলছে।

সম্প্রতি ঢাকা নিউমার্কেট এলাকায় সহিংসতায় হেলমেট বাহিনীর সন্ত্রাসী তৎপরতা আলোচনা এবং শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। ছাত্রদের সাথে দোকান মালিক-কর্মচারীদের সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষে হেলমেট বাহিনীর যে ভূমিকা নিউমার্কেট এবং ঢাকা কলেজ এলাকায় লক্ষ্য করা গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে তারা সুস্পষ্টভাবে সহিংসতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল ঢাকা কলেজ এলাকায়। কয়েকটি লাশ ফেলে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। এর কয়েক দিন আগে ঢাকা কলেজ ছাত্রদের  দ্বারা পাশের টিচার্স ট্রেনিং কলেজে হামলায়ও হেলমেট বাহিনীর সক্রিয় ছিল। আসলে হেলমেট বাহিনী কারা? সারাদেশে জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা, এমনকি বিএনপি ঘরানার সরকারী কর্মকর্তারাও খুবই সাধারণ শ্রেনীর লোক (Low profile) বনে গেছে। একইভাবে ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও সাধারণ ছাত্রদের সাথে মিশে গেছে। এই মিশে যাওয়া অনুপ্রবেশকারীরাই কি হেলমেট বাহিনী হয়ে উঠছে কিনা সেটি এখন খতিয়ে দেখার বিষয়।

সম্প্রতি আলোচিত হচ্ছে ২০০৮ সালের পর আওয়ামী লীগে যোগদানকারীরা অনুপ্রবেশকারী। অর্থাৎ এরপূর্বে আওয়ামী লীগে যোগদানকারীরা অনুপ্রবেশকারী নন। ওরা ‘হালাল’ হয়ে গেছে কারণ ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য দুঃসময় ছিল’।  
কিন্তু এটাও ঠিক, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের বেনিফিশিয়ারি বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মীরা যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী জিয়ার আদর্শের অনুসারী বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের নির্যাতন করেছে, বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনে বাধা দিয়েছে, কাঙালী ভোজের খাবার রান্না করার জন্য ক্রয় করা গরুর মাংস রাস্তার বেওয়ারিশ কুকুরকে খেতে দিয়েছে, তারা ২০০১ সালের পর স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগে যোগদান করে থাকলে হালাল হয়ে যাবে? তা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। অনুপ্রবেশকারী সবসময়ই অনুপ্রবেশকারী। রাজাকার সবসময়ই রাজাকার। নির্দিষ্ট কোন সময়ের ফ্রেমে তাদের বাঁধা যাবে না।

স্বাধীনতাবিরোধী ও ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা সুকৌশলে আওয়ামী লীগের ক্ষতিসাধন করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগে নিয়মিত অনুপ্রবেশ করছে। কোন নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বের অনুপ্রবেশকারীরা ক্ষতিকর নয়- ‘ধোয়াতুলসী পাতা’, এ যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা সকল অনুপ্রবেশকারী সমান অপরাধী। 

আওয়ামী লীগের পদপদবী পেতে অর্থ বিনিয়োগকারী এবং অর্থ বিনিয়োগে সহায়তাকারী নেতাদেরও চিহ্নিত করা জরুরি। এরাও বর্তমানকালের ‘মোশতাক’ এরা ‘মোনাফেক’। ইসলাম ধর্মীয় বিধান মতে, যে মুসলমান ধর্মীয় বিধান জানেন কিন্তু মেনে চলেন না, তিনি মোনাফেক। সুতরাং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে সকল নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বাধীনতার মূল্যবোধে বিশ্বাসী সেই তারা যদি অর্থের বিনিময়ে স্বাধীনতা বিরোধী বা বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগার হিসেবে সার্টিফিকেট দেন বা পদ-পদবী প্রদান করেন তবে তারা ‘আওয়ামী লীগের মোনাফেক’। কাজেই বর্তমান সময়ে এ সকল মোনাফেক নেতাদের  চিহ্নিত করে জরুরিভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করেন।

অনতিবিলম্বে যদি আওয়ামী লীগের এই অনুপ্রবেশকারীদের দাপট ঠেকানো না যায়, বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধী, বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের  অনুপ্রবেশ যদি ঠেকানো না যায় তাহলে পরে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের জন্য অশনিসংকেত তৈরি হবে। 

বর্নচোরাদের চিহ্নিত করার এখনই সময়, না হয় মোশতাক ভক্তরা মোশতাকের ভূমিকায় অবতীর্ন হওয়ার অবকাশ পাবে। আরো কত সংখ্যক রহমতউল্লাহ সরকারে ও আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করে ‘মোশতাক‘ রূপে আবির্ভূত হওয়ার জন্য ঘাপটি মেরে রয়েছে খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭