ইনসাইড থট

শিশুর অধিকার রক্ষায় তেঁতুলতলা মাঠটি ফিরিয়ে দেই


প্রকাশ: 28/04/2022


Thumbnail

সরকার, পুলিশ, আদালত, সংসদ, প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিক অধিকার রক্ষা ও সেবা প্রদানে নিবেদিত। সেই অধিকার রক্ষার বিষয়টি যখন সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বুঝতে ব্যর্থ হয়- তখন জনগণের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। করোনার মতো মহামারীর সময়ে একটুকরো খোলা মাঠ মানুষের জন্য ছিল স্বস্তির নিঃস্বাস। সেই স্বস্তির জায়গায় নিঃসন্দেহে তেতুলতলা মাঠটিও অবদান রেখেছে। আজ ঢাকা শহরে অনেক স্কুল আছে যাদের কোনো মাঠ নেই। তারা এলাকার মাঠগুলোতে শিশুদের নিয়ে যায় খেলাধুলা এবং একটি মাঠ অনেকগুলো স্কুল শেয়ার করে। শিশুদের এই খেলার মাঠের সমস্যা সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবগত এবং এ বিষয়ে তিনি মমতাময়ী মায়ের ভূমিকা পালন করে আসছেন। নাগরিক জীবন যাতে সুন্দর ও সুখী হয় সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিন রাত কাজ করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যারা আছেন তারাও জনকল্যানে কাজ করছেন। শিশুদেরকে এতই ভালোবাসে বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিগত বছরগুলোতে শিশুদের আঁকা ছবি দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এবারও একইভাবে আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জাতিসংঘ শিশুদের অধিকার সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক আইন করেছে যা বাংলাদেশ গ্রহনও করেছে।    

আমরা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে দেখেছি করোনার মহামারীর সময়ে কিভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা দেখেছি যেখানে সন্তান পিতার লাশ দাফনে থাকেনি সেখানে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে জনগণের পাশে থেকেছে। আমরা জনগণ সেই দিন গুলোর কথা ভুলে যাই নি। আমরা আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কোনো কার্পণ্য করিনি। আমরা আবার ক্ষোভ প্রকাশও করেছি যখন ডাক্তারদের সেবা দানে চলাচলের সময়ে অহেতুক বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

ভুল ত্রুটি সেবাদানে হতে পারে। সেখানে কোনো কোনো ব্যক্তি সেবা প্রদানে ব্যর্থ বা অপারগ হতে পারে। কিন্তু আমরা কোনো বিপদে পড়লে ওই পুলিশ ভাইদের কাছে যাই। এইতো কদিন আগে গিয়েছিলাম একটি মামলা দিতে। দিন দুপুরে ছিনতাইকারী একেবারে থানার সামনে ছিনতাই করলো। থানার কর্মকতারা তাদের সমস্যার কথা বলে আমাদেরকে সমবেদনা জানালেন। ওনারা বললেন যাঁরা এখানে ছিনতাই করে তাঁদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ যারা করছে তারা হেরোইন সেবক। পুলিশের এই অপারগতা আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। এভাবে যদি চলতে থাকে তবে আমাদের নিরাপত্তা দিন দিন কমতে থাকবে। এ থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সকলের চেষ্টা থাকতে হবে।   

ভেবেছিলাম  হয়তো কিছুদিন ওই এলাকায় ছিনতাই কমবে। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার একটি অভিযোগ পেলাম - ওই একই জায়গায় আরেক শিক্ষকের সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। থানার সামনে যদি একের পর এক এভাবে ছিনতাই হয় তবে জনমনে প্রশ্ন জাগতে পারে : থানা থাকার প্রয়োজন আছে কি ? এই প্রশ্ন আরও আরও প্রসারিত করে কেউ বলতে পারে : এরকম অবস্থায় তেঁতুলতলায় থানা নির্মাণ করার আদৌও প্রয়োজন আছে কি ? 

পুলিশ কতৃপক্ষ দাবি করেছেন জায়গাটি তারা নিয়ম মেনে পেয়েছেন। ওনারা আরও বলেছেন ভাড়াবাড়িতে থানা চালানো অনেক কষ্টকর।  আসলে এক সময় ঢাকা শহরে এতো থানা ছিল না এবং পুলিশ ওই রাজারবাগ থেকে সারা ঢাকা শহরে টহল দেয়ার কাজ করতো। এখন এই শহরে এতো গাড়ি যে রাজারবাগ থেকে কলাবাগান আসতে সময় লাগে ২ ঘন্টা। সুতরাং থানায় যদি পুলিশের থাকার বন্দোবস্ত হয় তবে সেবা প্রদান অপরাধ দমন সুচারুভাবে করা সম্ভব। সেই বিবেচনায় থানা নির্মাণ যৌক্তিক বটে।  

তবে যেহেতু জনগণের জন্য পুলিশ সেহেতু জনগণের দাবির প্রতি সন্মান রেখে পুলিশ কর্তৃপক্ষ থানা নির্মাণ থেকে সরে আসতে পারে এবং তাতে করে জনগণের মাঝে পুলিশের প্রতি আরও আস্থা আসবে। আমরা জানি সিনহা হত্যার আসামি ওসি প্রদীপকে কোনো ছাড় পুলিশ বাহিনী দেয় নি।  পুলিশ পরীমনির প্রতি কি আচরণ করেছে এবং কিভাবে পরীমনির সন্মান ফিরিয়ে দিয়েছে সেটাও আমরা জানছি। জনগণের জন্যই পুলিশ।  সুতরাং জনগণের সেবা হিসেবে কেবল তেঁতুলতলার মাঠটি ফিরিয়ে দেবে না - বরং যানজট নিরসন এবং শিশুদের জন্য আরও মাঠের ব্যবস্থা করবার প্রকল্প গ্রহণ করবে। তাদের হাতে একটি ব্যাংক আছে। তাদের আছে কিছু মার্কেট। সেখান থেকে স্কুলগুলোর জন্য বাসের ব্যবস্থা করলে স্কুলগুলোর আশেপাশে যানজট হবে না এবং পুলিশ ভাইদের হিমশিম খেতে হবে না শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে।  

এইতো গেলো শুক্রবার বাসে করে গুলিস্থান যাচ্ছিলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে এক পুলিশ এক বৃদ্ধ রিকশা চালকের কাছ থেকে ১০ টাকা নিয়ে দূরে সরে গেলো। রিকশা চালক স্বস্তির নিঃশাস ফেলে যাত্রীর অপেক্ষা করতে থাকলো। এভাবে যদি তারা আইনকে অপব্যাবহার করেন তবে কি আমাদের সন্মান বাড়বে। যদি পুলিশ ভাইদের কিছু টাকা লাগে আমাদের বলবেন। আমরা না হয় একটু ট্যাক্স বাড়িয়ে দেব। সরকার আপনাদের বেতন অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আইনকে এভাবে ১০ টাকা নিয়ে অসম্মান করবেন না। এভাবে আইনকে অসন্মান করেন বলে শহরের রিকশায়ালা, বাসের কন্ডাক্টর, চালক নিয়ম মানে না। ফলে যানজট হয়। আপনাদেরই কর্মস্থলে আসতে কষ্ট হয়।  

যে মাঠটিতে আপনারা থানা বানাতে চান সেই মাঠে আপনাদের শিশুরা কিন্তু খেলতে যায়। আপনার স্ত্রী হাটতে যায়। আপনি যখন ডিউটিতে থাকেন তখন কিন্তু আপনার প্রতিবেশীরা আপনার সন্তানকে দেখে রাখে। আপনি যখন ডিউটিতে থাকেন আপনার পরিবারকে এলাকার মানুষ দেখে রাখে।  সমাজকে সঙ্গে নিয়ে কাজে সফল হতে হয়। সমাজকে এড়িয়ে আপনারা সফল হবেন কি? 

যদি আজ মাঠটি আপনারা ফিরিয়ে না দেন তবে সমাজ আপনাদের থেকে দূরে সরে যাবে এবং তাতে করে আপনাদের সফলতা চ্যলেঞ্জ হবে।  একটি সমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে আপনাদের সহযোগিতা করবে না। যে উদ্দেশ্য নিয়ে থানা বানাতে চাইছেন সেটা ব্যর্থ হবে যেমন ব্যর্থ ইংলিশ রোডের মোড়ে হেরোইন সেবকদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে। মাঠে খেলাধুলা করলে শিশুরা সামাজিক হবে আর যদি সেই সুযোগ না থাকে তবে তাদের মানসিক বৈকল্য দেখা দেবে। তারা হেরোইন খাবে। গাজা খাবে আরো নানা সামাজিক অপরাধে যুক্ত হবে। আমি আশা করি আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।  

পুলিশ বাহিনী যদি আইন মানে, জনগণকে পাশে নিয়ে কাজ করে তবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা, সুখী গ্রাম, সুখী নগর অর্জনে আর কোনো বাঁধাই থাকবে না। রিকশাওয়ালা ভ্যান চালকদের কাছ থেকে ১০ টাকা নিয়ে পুরো সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবেন না। আমি জানি আপনাদের মাঝে অনেক ভালো মানুষ আছেন। আজ আপনাদের অনেকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আপনারা যে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে কাজ করে জাতির সন্মান বৃদ্ধি করেছেন এবং জাতির অর্থ ভান্ডার সম্মৃদ্ধ করেছেন সেজন্য আমরা গর্বিত। সেই গর্বের জায়গাটা কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে শেষ করে দিয়েন না। রোজিনা কান্ড, পরীমনি কান্ডর মতো  তেঁতুলতলায় মাঠ আপনাদের সুনামকে ক্ষুন্ন করবে। এখন মিডিয়ার যুগ। আপনাদের এই মাঠের কাহিনী আজ ঘরে ঘরে পথে পথে এবং সেটি দুষ্টদের হাতে পড়লে চলে যাবে জাতিসংঘে। তখন কিন্তু আপনাদের হালাল আয়ের একটি পথ বন্ধ হয়ে যাবে। ছোট ছোট ভুল সরকারের মেগা মেগা উন্নয়নকে ম্লান করে দিচ্ছে। আসুন নিজেদের ভুল শুধরে নেই- শিশুর অধিকার রক্ষায় তেঁতুলতলায় মাঠটি ফিরিয়ে দেই। আমরা নাগরিকরা আপনাদের পাশে আছি, থাকবো।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭