ইনসাইড থট

সর্ষের ভেতরের ভূত তেঁতুলতলায় আছর করেছে


প্রকাশ: 29/04/2022


Thumbnail

সর্ষের ভেতরে ভূত থাকে? নাহ ! এটি কুসংস্কার। কেউ অপ্রকৃতিস্থ আচরণ করলে তাকে ভূতে ধরেছে বলে অনেকে সাব্যস্ত করে। তখন ডাকে কবিরাজ। কবিরাজ এসে সরিষা ছিটিয়ে ভূত তাড়ানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু সরিষার ভেতর যখন ভূত থাকে তখন আর সেই সরিষা দিয়ে ভূত তাড়ানো যায় না। এসবই কুসংস্কার। ভূত ও সর্ষে - দুটোই সংস্কৃত শব্দ। এখানে ভূত অবিশ্বস্ত অর্থে ও সর্ষে বিশ্বস্ত অর্থে বোঝানো হয়েছে। "সর্ষের ভেতরে ভূত" বলতে বোঝানো হয়, সমাধানের প্রক্রিয়ার মাঝেই সমস্যার অবস্থান। আরেকটি প্রবাদ হলো - ভূত তেঁতুলতলায় থাকে। রাতে তেঁতুলতলায় গেলে নাকি ভূতেরা ঘাড় মটকে দেয়। এটাও কুসংস্কার। সূর্যাস্তের পর গাছের সালোক সংশ্লেষণ হয় না। গাছ তখন শুধু শ্বাস নেয়। অক্সিজেন নেয়, কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়ে। অধিক পাতা বিশিষ্ট গাছ যেমন, তেঁতুল, বট ইত্যাদি গাছের নিচে বেশি পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড জমা হয় । রাতে কেউ বেশিক্ষন এসব গাছের নিচে অবস্থান করলে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। তখন তার ঘাড় বাঁকা হয়ে যায়। কখনো কখনো মারাও যায়। তখন এ মৃত্যুর জন্য ভূতকেই দায়ী করা হয়।

প্রবাদ দুটি কুসংস্কার হলেও কলাবাগানের তেতুঁলতলার মাঠের ক্ষেত্রে যেন শতভাগ প্রযোজ্য। তেঁতুলতলা মাঠে শিশু কিশোররা খেলে। এলাকার সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি হয়। ঈদের জামাত হয়। জানাজা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হরামেশাই বলেন, শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ রেখে নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন করুন। যারা ন্যূনতম সংবাদপত্র পড়েন বা টিভিতে খবর দেখেন- খেলার মাঠ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ মনোভাব নজর এড়ানোর কথা নয়। অথচ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা পুলিশ বিভাগ এটির জন্য বরাদ্ধ চেয়েছে। বরাদ্ধ পেয়েছেন। কে দিয়েছে বরাদ্ধ? জেলা প্রশাসন। এটিও সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। তার থেকে নেক্কারজনক বিষয় হলো- পুলিশ প্রহরায় নির্মাণকাজ। রাতারাতি দেয়াল নির্মাণ। প্রতিবাদকারী কিশোর ও তার মাকে থানায় নিয়ে আটকে রাখা। আন্দোলন না করার মুচলেকা আদায়। এ সবই যেন  জমিদার আমলের প্রতিচ্ছবি।

প্রশ্ন হলো, যারা মাঠ বরাদ্দের আবেদন করলেন এবং যারা বরাদ্ধ দিলেন- তারা কি প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা বিবৃতি শুনেন না? ঢাকা শহরে খেলার মাঠ, বিনোদনের স্থান- এসব নিয়ে সরকার প্রধানের মনোভাব জানেন না? চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সম্মেলনে ২৪ দফা নির্দেশনা দেন। তার দশ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, নাগরিকদের সুস্থ জীবনাচারের জন্য জেলা ও উপজেলায় পার্ক, খেলার মাঠ প্রভৃতির সংরক্ষণ এবং নতুন পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। ২০১৮ সালের জুলাইতে মতিঝিলে সরকারি কর্মচারীদের জন্য নবনির্মিত বহুতল আবাসিক ভবনের উদ্বোধন শেষে তিনি বাচ্চাদের ফ্ল্যাটে বসিয়ে ফার্মের মুরগির মতো বড় না করতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা কে পালন করবে? মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার কথা। অথচ পুলিশ চাইছে খেলার মাঠ। জেলা প্রশাসন সেটা দিয়ে দিচ্ছে। সর্ষের মধ্যে ভূত- এটাকেই বলে। প্রধানমন্ত্রী যাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছেন, সেখানেই অবিশ্বস্ততা। খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান মাঠ উদ্ধার আন্দোলন চলাকালে বলেছেন, 'বিকল্প ব্যবস্থা না হলে তেঁতুলতলার নির্ধারিত জায়গায় ভবন করতে হবে।' প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেয়ার পূর্বদিন পর্যন্ত তিনি জনপ্রতিনিধি হয়েও ভবনের পক্ষে কথা বলেছেন। প্রাচীর নির্মাণকাজ বন্ধের কোন নির্দেশনা দেননি। তিনি বলেছেন, 'এখানে কোনকালেই খেলার মাঠ ছিল না। এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি !' মানলাম এটা পরিত্যক্ত। তাতে সেখানে খেলতে তো কোন বাধা নেই। আর বাস্তবতা হল, এখানেই অর্ধ শতাব্দী ধরে শিশু কিশোররা খেলছে । শুধু খেলার মাঠে ভবন নির্মাণ নয়, এটা বরাদ্দের আবেদন করাই যুক্তিযুক্ত হয়নি। আবেদন করার পুর্বেই কলাবাগানের শিশুদের খেলার মাঠের বিকল্প চিন্তা করার  প্রয়োজন ছিল। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বারবার খেলার মাঠ সংরক্ষণ ও নতুন খেলার মাঠ খুঁজবার তাগিদ দিচ্ছেন, সেখানে কোন যুক্তিতে মাঠটি বরাদ্ধ চাওয়া হল ? দেয়া হল ?

কুসংস্কার অনুযায়ী ভূতেদের আবাস হলো বড় বড় গাছ, যেখানে পাতা বেশি। যেমন, তেঁতুল গাছ, অশ্বথ গাছ, বট গাছ। সর্ষের ভেতর যে ভূতরা থাকে তারাই আবার রাতে এসব গাছে থাকে, ঘাড় মটকায় দেয়। কলাবাগানের তেঁতুলতলায় সেই সর্ষের ভূতেরা আছর করেছে। ভূতেরা ভেবেছিলো, মাঠকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি দেখিয়ে, খেলুড়ে বাচ্চাদের একটু কান ধরে উঠবস করিয়ে, আন্দোলন না করার মুচলেকা নিয়ে, পুলিশ পাহারায় রাতারাতি দেয়াল বানিয়ে বাচ্চাদের ঘাড় মটকানো যাবে। কিন্তু ভূতেরা জানেনা শিশুদেরও  একজন ওঝা কবিরাজ আছেন। যিনি সর্ষের ভেতর ভূত থাকলেও ভূত ঝাড়াতে পারেন। তিনি আর কেউ নন- আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। জননেত্রী শেখ হাসিনা। আস্থার প্রতীক। বিশ্বাসের স্তম্ভ। তিনি শিশুদের চাহিদা বুঝেন। নাগরিকদের পালস বুঝেন। মাঠ ফিরে পাবার জন্য আন্দোলনকারী সৈয়দ রত্নার কথাতেও এর প্রমান মেলে।  রত্না বলেন, আমার বিশ্বাস ছিল, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করা গেলে মাঠ ফিরে পাব। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকেই কেন একটা মাঠের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে হবে ? তাঁর অধীনে আর কি কোন আস্থার জায়গা নেই ?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭