ইনসাইড থট

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে বাংলাদেশ ভালো করছে: প্রতিটি পদক্ষেপই গুরুত্বপূর্ণ


প্রকাশ: 30/04/2022


Thumbnail

করোনাভাইরাস মহামারী বিশ্বের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের অর্থনীতি নেতিবাচকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে মহামারির মধ্যেও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। মূলত প্রবাসীদের কাছ থেকে এবং  তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রফতানির মাধ্যমে স্বাধীনতার ৫০তম বছরে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে।  গত এক দশকে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এমনকি হাসিনা সরকারের সমালোচকরাও একমত হবেন যে, গত এক দশকে ৭% প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশের  নিয়ে গেছে।

শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান তাদের অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে 'বাংলাদেশ ইকোনমিক মিরাকল' মডেল অনুসরণ করতে পারে। যেহেতু শ্রীলংকা একটি অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশী 'বাংলাদেশ' একটি দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক অলৌকিক ঘটনা হিসাবে নিশ্চিত করা হয়েছে (দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ২৫ এপ্রিল, ২০২২) । এক নিবন্ধে (দ্য ডেইলি নিউজ, শ্রীলঙ্কার সংবাদপত্র ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখে নিবন্ধটি প্রকাশ করে), বাংলাদেশ তার জীবনযাত্রার মান, অর্থনৈতিক শক্তি ও সমৃদ্ধি, শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নত করেছে। আর সে কারণেই অতীতে বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আজ আফ্রিকার দেশগুলোকে বাংলাদেশের দিকে তাকানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে।

শ্রীলংকা ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধাও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংকটের মধ্যে দিয়ে কঠিন সময় পার করছে শ্রীলঙ্কা।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, শ্রীলঙ্কার মতো অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশে সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি এডমিন গিন্টিং বলেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো। উপরন্তু, ঋণ-থেকে-জিডিপি অনুপাত একটি সহনীয় অবস্থানে রয়েছে। তাই ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মতো সংকটে পড়বে না বাংলাদেশ। এডমিন গিন্টিং বাংলাদেশকে দুটি বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। এর মধ্যে রয়েছে ঋণ পরিচালনার নীতিগুলি শক্তিশালী করা এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়ানো।

বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৪৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৩ লক্ষ। ফলে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২৯২ দশমিক ১১ ডলার। আর ২ কোটি জনসংখ্যার দেশ শ্রীলঙ্কার মোট বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৩৩০ কোটি। সে হিসেবে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬৫০ মার্কিন ডলার। শ্রীলঙ্কার জনগণের মাথাপিছু ঋণ বাংলাদেশের চেয়ে সাড়ে পাঁচ গুণ বেশি (https://tradingeconomics.com/bangladesh/external-debt;https://www.indiapost.com/why-bangladesh-wont-fall)।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির মধ্যে কোনো তুলনা হয় না। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি এক নয়। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স (এক্স-প্যাট আয়) বাড়ছে এবং দেশের রিজার্ভ সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশে সুপরিচিত মেড ইন বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে যে অর্থ সৃষ্টি হয়েছে তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সব অর্থনৈতিক সূচকের উন্নতি হচ্ছে। শ্রীলংকার মতো বাংলাদেশও একই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা কম (ইন্ডিয়া পোস্ট, ১১ এপ্রিল, ২০২২)।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ খুবই সতর্ক। তিনি বলেন, সরকার গঠনের পর থেকে আমরা উন্নয়নের জন্য যে সব ঋণ নিয়েছি তা যথাসময়ে পরিশোধ করে আসছি। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যারা কখনোই ঋণ খেলাপি করেনি। সেখান থেকে আমাদের অর্থনীতির ভিত অনেক মজবুত হয়। আমরা খুবই সতর্ক।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে মহামারী-পরবর্তী পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে: আর্থিক ও ঋণের পরিস্থিতি অনেক নিম্ন আয়ের, উন্নয়নশীল দেশের জন্য বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং। অস্থিতিশীল বৈদেশিক ঋণের বোঝা, মহামারীর সময় অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া এবং ঋণ পরিশোধের ব্যয় বৃদ্ধি তাদের অনেককেই ঋণ সংকটের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।  উন্নত দেশগুলিতে অ্যাপ (সম্পদ ক্রয় প্রোগ্রাম) এবং সুদের হারের তীব্র বৃদ্ধি বড় মূলধনের বহিঃপ্রবাহকে ট্রিগার করতে পারে এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য ঋণের স্থায়িত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঋণ ত্রাণের জন্য তাদের আরও এবং সমন্বিত আন্তর্জাতিক সহায়তার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে।

উন্নত দেশগুলির আর্থিক কর্তৃপক্ষকে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য,  সম্পদ ক্রয়ের টেপারিং এবং তাদের ব্যালান্স শিটগুলি হ্রাস করতে হবে, সরকারী ঋণ পরিশোধের ব্যয় কম রাখতে হবে, ঋণের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে হবে এবং অকাল (premature) আর্থিক একীকরণ (consolidation) এড়াতে হবে (গ্লোবাল ইকোনমিক মনিটরিং ব্রাঞ্চের প্রধান এবং রিপোর্টের প্রধান লেখক হামিদ রশিদ জোর  দিয়েছেন (www.bit.ly/wespreport))।

নেতৃস্থানীয় বিশ্বব্যাপী সংস্থাগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে, করোনা মহামারির দুই বছর পর (মহামারী পরবর্তী যুগ) অনেক নিম্ন আয়ের দেশের জন্য সুদূরপ্রসারী ঋণ ত্রাণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। নীতিনির্ধারকদের আর্থিক ব্যবস্থা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর পথ গ্রহণ করতে হবে। নীতিগুলি দীর্ঘ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা উচিত, মানব মূলধনকে পুনরুজ্জীবিত করা, ডিজিটাল সংযোগের অ্যাক্সেস প্রসারিত করা, এবং বৃদ্ধি এবং স্থিতিস্থাপক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পথকে শক্তিশালী করার জন্য সামাজিক অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করা উচিত। আমরা সেখানে না আসা পর্যন্ত এই সংকট এড়ানোর জন্য আমাদের বৈশ্বিক সমন্বয় এবং সতর্ক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সহায়তা করতে হবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭