ইনসাইড পলিটিক্স

আমির খসরু-টুকু ফিরোজায় গেলেন না কেন?


প্রকাশ: 04/05/2022


Thumbnail

ঈদের দিন বেগম খালেদা জিয়া স্থায়ী কমিটির সব সদস্যকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে স্থায়ী কমিটির আটজন সদস্য ফিরোজায় যান এবং বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ঘণ্টারও বেশি সময় কাটান। তারা সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন এবং ফিরোজা থেকে বেরিয়ে বিএনপির মহাসচিব এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বিফ্রিংও করেছেন। কিন্তু লক্ষণীয় ব্যাপার যে, স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য ফিরোজায় যাননি। ফিরোজায় বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে যারা দেখা করতে গিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান। কিন্তু স্থায়ী কমিটির দুইজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং ইকবাল মাহমুদ টুকু এ বৈঠকে যোগ দেননি।

বিএনপির সূত্রগুলো বলছে যে, আমীর খসরু মাহমুদ ঈদ উদযাপনের জন্য চট্টগ্রামে থাকার কারণে, অন্যদিকে ইকবাল মাহমুদ টুকু এলাকায় থাকার কারণে বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। কিন্তু এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া ঈদের দিন স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, এই সাক্ষাৎটি পূর্ব নির্ধারিত ছিলো। অনেক আগে থেকেই সকলে জানতো। বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ এর চেয়ে চট্টগ্রাম বা সিরাজগঞ্জে ঈদ উদযাপন করা কি খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে? এমন প্রশ্ন করেছেন বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা। এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে দুই ধরনের মতামত পাওয়া গেছে। একপক্ষ বলতে চাইছেন যে, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং ইকবাল মাহমুদ টুকু দুইজনই তারেক জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আবদুল্লাহ আল নোমানের মতো নেতাকে হটিয়ে তারেক জিয়ার কারণেই চট্টগ্রাম এলাকা থেকে আমীর খসরুকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। অন্যদিকে, ইকবাল মাহমুদ টুকুর চেয়েও উত্তরাঞ্চলে বিএনপিতে ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতা থাকার পরও টুকুকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়েছে তারেকের বদান্যতার কারণে।  আর এ কারণেই তারা তারেক জিয়ার লোক হিসেবে পরিচিত। সেজন্যই তারা হয়তো তারেক জিয়াকে সন্তুষ্ট করতে এই বৈঠকে যাননি। তবে এই মতামতকে উড়িয়ে দিয়েছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং ইকবাল মাহমুদ টুকুর ঘনিষ্ঠরা। তারা বলছেন যে, তারা তারেক জিয়ার লোক নন, তারা বিএনপির লোক এবং বেগম খালেদা জিয়ার সাথেও এই দুই নেতার সুসম্পর্ক রয়েছে। তারা বরং এর পেছন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেই দায়ী করেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেগম খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের বিষয়টি গোপন করে রেখেছিলেন এবং ঈদের দিন সকাল বেলা বিভিন্ন নেতাকে ফোন করে তিনি আজ রাতে যেতে হবে বলে জানান। ফলে যে সমস্ত নেতারা পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে ঢাকার বাইরে ছিলেন তারা এই বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। এটি পুরোপুরিভাবে মহাসচিবের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতাটা ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত এটা নিয়েও বিএনপির মধ্যে বিতর্ক আছে।

বিএনপির কেউ কেউ মনে করেন যে, ঈদের দিন সকালেই বৈঠকের সময়সূচী নির্ধারিত করা হয়েছিল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগে এই বৈঠকের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তবে এর সঙ্গে একমত নন বিএনপির অধিকাংশ নেতারা। বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, ঈদের দুই দিন আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফিরোজায় যাওয়ার বিষয়টি জানতেন এবং এ ব্যাপারে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠদের সাথে কথাও বলেছেন। কিন্তু ঈদের দিন তিনি সবাইকে ফোন করে বৈঠকের কথা বলেছেন। আর এ কারণেই আমীর খসরু মাহমুদ এবং ইকবাল মাহমুদ টুকু বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। এই দুজন ছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তিকেও এই বৈঠকে নেয়া হয়নি, যারা স্থায়ী কমিটির সদস্য না। যেমন- স্থায়ী কমিটির সদস্য না হলেও রুহুল কবির রিজভী বিএনপিতে অনেক অনেক জনপ্রিয় এবং খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন নেতা। কিন্তু তাকেও এই বৈঠকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। এছাড়াও মেজর (অব:) হাফিজউদ্দিনের মতো নেতারাও বৈঠকে আমন্ত্রণ পাননি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যাদেরকে বৈঠকে নিয়ে গেছেন তারা সবাই তার একান্ত অনুগত বলেই তাদেরকে নিয়ে গেছেন। এমন দল পরিচালনায় যে ব্যর্থতার বিষয়গুলো যারা খালেদা জিয়ার সামনে তুলবেন তাদেরকে সচেতনভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির কেউ কেউ মনে করেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭