ইনসাইড থট

‘অনুপ্রবেশকারী-হাইব্রিড’দের আয়োজিত অনুষ্ঠান সমূহ বর্জন করুন’


প্রকাশ: 05/05/2022


Thumbnail

এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক উন্নয়নে, বাংলাদেশ বিশ্বব্যপী একটি আলোচিত নাম। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিনত হয়েছে। ‘বাঙ্গালী’ সম্মানিত জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিরাজমান করোনা সংকট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার গৃহীত প্রতিটি পদক্ষেপ বিশ্বব্যপী প্রশংসিত হয়েছে। অথচ অনুপ্রবেশকারী সাহেদ-সাবরীনারা ভূয়া সার্টিফিকেট প্রদানের কারনে অর্জিত ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইটালীর বিমানবন্দর থেকে বাঙ্গালীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। করোনা সংকটের প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্ব খাদ্য কর্মসুচী (ডব্লিউএফপি) অনুমান করে বলেছিল: “করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের কারণে শুধু শিল্প নয়, কৃষিতেও উৎপাদন কম হবে, ফলে বিশ্বে ৩ কোটি মানুষ অনাহারে মারা যেতে পারে”। কিন্তু কৃষিতে উন্নয়ন করে ডব্লিউএফপি এর ভবিষ্যত বানী ভুল প্রমানিত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে ঘোষনা করেছেন, “করোনা, বন্যা, যাই হোক না কেন, বাংলাদেশে খাদ্য সংকট হবে না”।

কিন্তু সরকার ও দলে অনুপ্রবেশকারীরা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের এই অর্জনগুলো প্রশ্নবোধক করে তুলেছে। রাষ্টীয় পর্যায়ে শাহেদ-সাবরিনাদের ২/৪টি অনুপ্রবেশকারী প্রতারক চিহ্নিত হলেও তৃনমূল পর্যায়ে হাজারও শাহেদ-সাবরিনারা ওয়ার্ড-ইউনিয়ন-থানা/উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামীলীগকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে। দুর্দিনের রাজপথের নিবেদিতপ্রান তৃনমূল কর্মীরা, হাইব্রিডদের দ্বারা অবহেলিত ও নির্যাতিত হয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে।

স্বাধীনতা বিরোধীচক্র রাজনীতির অঙ্গনে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে, শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতার মূল্যবোধকে প্রশ্নবোধক করার জন্য সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। এরই মধ্যে ওরা বিভিন্ন কৌশলে আওয়ামীলীগে শক্তিশালী অবস্থান করে নিয়েছে। ছাত্রজীবনে জাতীয়তাবাদী আদর্শ বাস্তবায়নকারী জিয়ার সৈনিক এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নকারী সংগঠন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পর্য়ায়ের প্রভাবশালী নেতা। ‘জিয়া আমার পিতা, তারেক আমার ভাই’ শ্লোগানের প্রবক্তারা এখন আওয়ামীলীগ দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্য। ঐসকল নেতাদের এলাকায়

আওয়ামীলীগের প্রকৃত নেতাকর্মীদের মনের একবার চিন্তা করুন। শুধু সংগঠনে নয়, সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়ে, ওরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে ব্যাহত করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। খুনী মোশতাকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। ক্ষমতাধর পৃষ্ঠপোষকদের সহায়তায় অর্জিত অবৈধ অর্থ ব্যবহার করে ওরা সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি ক্রয় করছে, তৃনমূলের জনপ্রতিনিধি পদবীগুলি দখল করে নিচ্ছে। তৃনমূল পর্যায়ের অনুপ্রবেশকারীরা, রাষ্টীয় পর্যায়ের প্রতারক শাহেদের চেয়েও ভয়ানক।

অনেক অনুপ্রবেশকারী টাকার বিনিময়ে প্রাপ্ত দলীয় পদ ব্যবহার করে হাতে গোনা কয়েকটি বছরের ব্যবধানে, হাজার কোটি টাকার মালিক বনেছেন।দলীয় পদ ব্যবহার করে ক্ষমতাধর পৃষ্ঠপোষকদের সহায়তায় ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে যে পরিমান অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে, তা দেখে স্থানীয় আওয়ামীলীগসহ সারাদেশের মানুষের চোখ ছানাবড়া। এমনি অবস্থা ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ডসহ দেশের সর্বত্রই। টাকার বিনিময়ে তারেক জিয়াকে নিয়মিত অর্থ সরবরাহকারীরাও আওয়ামীলীগের পদ ক্রয় করে বীরদর্পে আওয়ামীলীগকে নিয়ন্ত্রন করছে। এই সকল অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে আওয়ামীলীগকে রক্ষা করার জন্য, স্থানীয় আওয়ামীলীগ এর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর অসংখ্য লিখিত অভিযোগ দাখিল করার পরও কোন প্রতিকার হয়নি, অথবা অনুপ্রবেশকারীদের ক্ষমতার প্রভাবে, অভিযোগ পত্রগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারেনি।

সারা বাংলাদেশে এমনি হাজারও অনুপ্রবেশকারী ব্যবসা-বানিজ্য, সরকারের স্থানীয় উন্নয়ন কার্যক্রম ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নিয়ন্ত্রন করছে। অনুবেশকারীরা বীরদর্পে সংগঠন ও সরকারের ভাবমূর্তি ধ্বংসে লিপ্ত রয়েছে। ওদের ক্ষমতা ও অর্থের দাপটে তৃনমূলের প্রকৃত আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা আজ অসহায়। 

অনুপ্রবেশকারীদের নিয়েই আওয়ামী লীগ এখন সবথেকে বেশি সরব এবং আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাই অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে কপালে বিরক্তির ভাঁজ তুলছেন। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে সাহেদের ঘটনার পর আওয়ামী লীগের বহিরাগতদের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করা এবং আরো কত সাহেদ আওয়ামী লীগে আছে সেই ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন জায়গায় শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে।

এমতাবস্থায় তৃনমূল অনুপ্রবেশকারীরা আত্মরক্ষার্থে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দিয়ে বিপুল পরিমান ত্রান, ঈদ উপহার বিতরন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। নেতাদের ‘ম্যানেজ‘ করার চেষ্টা করছেন। আওয়ামীলীগের অনেক নেতা নিজের ‘গ্রুপ’ ভারী করার জন্য, কোনরকম সাংগঠনিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সদলবলে উপস্থিত হয়ে ঐসকল অনুষ্ঠানসমূহ সাফল্যমন্ডিত করছেন। একবারও ভাবছেন না, উনারা উপস্থিত হওয়ায় সংগঠনে  অনুপ্রবেশকারীদের বৈধতা দেওয়ার পাশাপাশি, ওদের দ্বারা ঘটিত চাঁদাবাজি, জুলুম, নির্যাতন, ইত্যাদি সামাজিক অপকর্মের বৈধতাও দেওয়া হচ্ছে। ফলে ঐ সমাজে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, স্থানীয় পুরাতন নেতাকর্মীরা আরও অবহেলিত হবে, নিবেদিতপ্রান দুর্দিনের কর্মীদের মনোকষ্ট বৃদ্ধি পাবে।

সামনে আসছে শোকের মাস আগষ্ট। অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গালী জাতি  নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগষ্ট কালরাতে সকল শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপন করবে। এই সুযোগে  অনুপ্রবেশকারীরা, চলমান হাইব্রিড বিরোধী শুদ্ধি অভিযান থেকে নিজেকে রক্ষা ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে নিজেদের অবৈধ অর্থ রক্ষা করার জন্য  মহা ধুমধাম করে শোক দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বা  ঐ সকল অনুষ্ঠান সমূহে অর্থায়ন করে নিজেদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করবে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সিনিয়র নেতাদের দাওয়াত দিয়ে আনবে, পাশাপাশি ছবি তুলবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সকল অনুষ্ঠানসমূহের ছবি ফলাও করে প্রচার করবে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে, অবৈধ অর্থ ব্যয়ে আয়োজিত লোক দেখানো এই সকল অনুষ্ঠানসমূহের কারনে, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেহী আত্মা কষ্ট পাবে।

অতএব অবৈধ অর্থের এই সকল অনুষ্ঠান সমূহে উপস্থিত হয়ে অনুপ্রবেশকারীদের বৈধতা দেওয়ার জন্য বা আন্তরিকতাবিহীন লোক দেখানো দোয়া মাহফিলে উপস্থিত না হয়ে, প্রত্যেক এলাকায় ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামীলীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা এখন জরুরি প্রয়োজন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭