লিভিং ইনসাইড

ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন রাজধানীর যেসব স্থান থেকে


প্রকাশ: 06/05/2022


Thumbnail

পবিত্র ঈদুল ফিতর শেষ হলো। এখনো অনেকের মাঝেই রয়ে গেছে ঈদের আমেজ। এছাড়া আজকে আবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। অনেকেই পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। এইদিকে গতকাল (৫ মে) থেকে অনেক অফিস-আদালদ ব্যাংক-বীমার অফিসের কার্যক্রম শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই অনেকেই ঈদের পর পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরতে বা সময়ে দেওয়ার খুব একটা সুযোগ হয়ে উঠেনি। অন্যদিকে যারা এখনো ছুটিতে আছেন, তাদের অনেকেরই ছুটি প্রায় শেষ। ফলে অনেকেই দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ করতে পারছে না। তাই ঈদের ছুটি আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনটা বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন রাজধানীর মধ্যে কিছু বিখ্যাত জায়গা থেকে-

বিউটি বোর্ডিং
এক সময়ের বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডার এক কেন্দ্রস্থল। জায়গাটি পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোরও একটি। 

বাংলাবাজারে বইয়ের মার্কেট পেরিয়ে শ্রীশচন্দ্র দাস লেন।  রাস্তায় ঢুকতেই সামনে পড়বে জমিদার বাড়ি। এই বাড়ির পাশেই দোতলা বিউটি বোর্ডিং। লোহার গেট পেরোলে শুরুতেই ফুলের বাগান। দুর্বা ঘাসে মোড়ানো বাগানেই রয়েছে আড্ডার জন্য ফাঁকা জায়গা। পাশেই রয়েছে অতিথিদের খাবারের ব্যবস্থা। হলুদ রঙে মোড়া বাড়িটি সকালের রোদের আলোকছটায় স্বর্নালী এক অতীতের গল্প বলে। বাড়িটির কোনায় লেখা বিউটি বোর্ডিং। 

তখনকার কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডার পছন্দের জায়গা ছিল এই বিউটি বোর্ডিং। বাংলা সাহিত্যের অনেক দিকপালের পদচারণে ধন্য হয়েছে এই বিউটি বোর্ডিং। এছাড়াও শুরু থেকেই এখানে আড্ডা দিয়েছেন এ দেশের প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী ও সাংবাদিকরা।

যাওয়ার উপায়: ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে গুলিস্তান আসতে পারেন। এরপর গুলিস্থান থেকে  সরাসরি রিক্সা নিয়ে বিউটি বোর্ডিং যেতে পারবেন।

রাজধানীর বিখ্যাত রোজ গার্ডেন: 
আকাশের মেঘ  ছুঁয়ে ৯০-৯১ বছরের সাদা ধবধবে এক বিশাল আকৃতির প্রাসাদ। এত বছরের এই পুরনো প্রাসাদে এখনো যেনো এক ছিটে ধুলো জমেনি। এক ঝলক দেখলেই যেন প্রাণভরে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয় সেদিকে। এই প্রাসাদের নকশা দেখলেই আপনার মন প্রাণ ভরে যাবে। প্রাসাদটি দেখলে মনে হবে হয়তো নতুন।

প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এর নাম রোজ গার্ডেন হলেও, বিভিন্ন সময় নানা নামে পরিচিত প্রাসাদটি। যার মধ্যে ‘রশিদ মঞ্জিল’, কখনও ‘বেঙ্গল স্টুডিও’ আবার কখনও বাড়িটি পরিচিত ছিল ‘হুমায়ূন সাহেবের বাড়ি’ নামে। তবে বেশিরভাগ মানুষই এটি হুমায়ূন সাহেবের বাড়ি নামেই চেনেন। এছাড়াও, রাজধানীর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেখানে সব সময়ই দর্শনার্থীদের ভীড় জমে।

পশ্চিমমুখী দ্বিতল এ ভবনটি ৪৫ ফুট উঁচু। ৬টি থামের উপর প্রাসাদটি নির্মিত। এই ভবনের আয়তনে প্রায় ৭০০০ বর্গফুট। পুরো ভবনের লতাপাতার কারুকার্য মুগ্ধ করবে আপনাকে। মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৫টি ঘর আর একটি বড় নাচঘর আছে। নীচতলায় আছে ৮টি ঘর। মোট ২২ বিঘা জায়গো জুড়ে নির্মিত হয় রোজ গার্ডেন। তবে এখন আর ২২ বিঘা জায়গা জুড়ে নেই। বাড়িটির চারপাশে বহুতল বেশ কিছু ভবন তৈরি হয়েছে।

পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দের সহিত ঘুরে আসতে পারেন পুরান ঢাকার ঋষিকেশ রোডের রোজ গার্ডেনে। সুন্দর এই প্রাসাদটি পুরান ঢাকার টিকাটুলিতে। আরো সহজ করে বললে গোপীবাগের আর.কে মিশন রোডে।

যাওয়ার উপায়: ঢাকার যে কোনো স্থান থেকে প্রথমে গুলিস্তান যেতে হবে। সেখান থেকে হুমায়ূন সাহেবের বাড়ির গেটে পৌঁছাতে রিকশা করে যেতে হবে। তবে রিকশাওয়ালাকে অবশ্যই রোজ গার্ডেন না বলে হুমায়ূন সাহেবের বাড়িতে যাবেন বলবেন। পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ২০ মিনিট। ভাড়া পড়বে ৫০-৬০ টাকা (সময়ের পার্থক্যে কম-বেশি হতে পারে)।

উল্লেখ্য, ১৯৩১ সালে ঋষিকেশ দাস নামক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী এই বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন। এই ব্যবসায়ী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এনে দুর্লভসব গোলাপ গাছ রোপণ করেন। তখন থেকেই এর নাম হয় ‘রোজ গার্ডেন’৷

লালবাগ কেল্লা: 
রাজধানীর ভেতরেই লুকিয়ে আছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান। যার মধ্যে লালাবাগ কেল্লা অন্যতম। যারা পরিবার বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সুন্দর একটা বিকেল পার করতে চান তারা চলে যেতে পারেন এখানে। এছাড়াও যারা প্রাচীন ইতিহাস, সভ্যতা ও স্থাপত্য পছন্দ করেন তাদের জন্য অন্যতম একটি জায়গা লালবাগ কেল্লা। 

মোগল আমলের অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন ঢাকার লালবাগ কেল্লায় দর্শনার্থীর সমাগম দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইতিহাসের সাক্ষী এ কেল্লা প্রতিদিনই হাজার হাজার দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। সাধারণ দর্শনার্থী ছাড়াও এখানে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আসেন। কেউবা ঘুরতে আসতে আবার কেউবা আসে শিক্ষা সফরে। এছাড়াও, বিদেশি দর্শনার্থীরা এখানে কেল্লার ইতিহাস জানতে আসেন।

কেল্লার অভ্যন্তরে রয়েছে একটি হাম্মামখানা বা গোসলখানা, দরবার হল, মাটির প্লাটফরম, ঝর্ণা, জলাধারা, তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। মসজিদের ছাদে তিনটি গম্বুজের গোড়ার অংশ অষ্টকোণাকৃতি ড্রামের আকারের এবং পাতার নকশায় অলংকৃত। এতে রয়েছে পাড় বাঁধানো একটি পুকুর ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নির্মিত জাদুঘর।

কেল্লার উত্তর-দক্ষিণে অবস্থিত প্রধান ফটক, উত্তর তোরণ, পশ্চিম তোরণ ও তিনতলাবিশিষ্ট আকর্ষণীয় স্থাপত্য নিদর্শন হচ্ছে দক্ষিণ তোরণ। তোরণের সম্মুখে দু’পাশে তিনধাপে উপরে উঠেছে। প্রথম ধাপ একটি অর্ধগম্বুজ ছাদবিশিষ্ট আস্তরে তৈরি প্যানেল দ্বারা অলংকৃত। দরবার হলকে জাদুঘর হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়। জাদুঘরে রয়েছে মোগল আমলের অস্ত্রশস্ত্র, পান্ডুলিপি, মুদ্রা, মৃৎশিল্প, কার্পেট, চিত্র, হস্তলিপি ও রাজকীয় ফরমান।

যাওয়ার উপায়: আজিমপুর বাসস্টান্ড, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, গুলিস্তান, শাহবাগ বা কার্জন হলের সামনে থেকে রিকশা, সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে যাওয়া যায়। এছাড়াও ঢাকার গাবতলী থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দির নেমে সেখান থেকে পায়ে হেটে বা রিক্সা করে যেতে পারেন।

ছুটির দিনে ঢাকার ভেতরেই কম সময়ে ঘুরে ইতিহাসের সাক্ষী হতে বিউটি বোর্ডিং, লালবাগ কেল্লা ও রাজধানীর বিখ্যাত রোজ গার্ডেন হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। অসাধারণ সুন্দর এই জায়গাগুলোতে সময় কাটালে আপনার মন ভালো হতে বাধ্য।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭