ইনসাইড আর্টিকেল

জন্মদাত্রীর শেষ ঠিকানা যখন বৃদ্ধাশ্রম


প্রকাশ: 08/05/2022


Thumbnail

মায়ের ছোট্ট সেই গর্ভে প্রতিটি সন্তানের ঠাঁই হলেও, সন্তানের বিশাল অট্টালিকায় আজকাল মায়েদের ঠাঁই নেই।

দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারন করে, অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে যে মানুষটি সন্তানের জন্ম দেন তিনিই আমাদের 'মা'। তিনি শুধু জন্মই দেন না, জন্মের পর থেকে তাঁর সন্তানকে অক্লান্ত পরিশ্রমে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন একজন 'মা'। মায়ের মুখের বলি শুনেই একটা সন্তান কথা বলতে শেখে, ছোট বেলায় অ, আ শিখে উঠার শিক্ষা গুরু বলা যায় 'মা'কে। তবে শুধু যে 'মা' একাই একজন সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করতে পারে বিষয়টি এমন না, এখানে বাবার ত্যাগ স্বীকারও তাৎপর্যপূর্ণ। জন্মের পর থেকে 'মা' তাঁর সন্তানকে স্নেহ ভালোবাসায় লালন-পালন করে আর মা ও সন্তানের উপর বট বৃক্ষের মত ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একজন 'বাবা'। তবে সন্তান বড় হওয়ার পরে তাদের জায়গা হয় কোথায়? বৃদ্ধাশ্রম !

বয়স হয়ে গেলে আর ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেলে মা-বাবার চাওয়া পাওয়া খুব বেশি থাকে না। সে সময় শুধু তারা তাদের সন্তাদের সাথে থাকতে চায়। যেমনটা ছিলো সন্তানের ছোট বেলায়। যখন সন্তান ছোট, তখন বিশেষ করে মা কোথাও গিয়ে দু-দন্ড দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো না। সব কিছুর জন্যই প্রয়োজন হতো 'মা' নামক মানুষটিকে। তবে বর্তমানে টেলিভিশন বা খবরের কাগজ খুললেই প্রায় এমন কিছু খবর দেখা যায় যে 'অমুকের মায়ের ঠাঁই আজ বৃদ্ধাশ্রমে', 'সামর্থ্য থাকার পরেও ঠাই নেই নিজ বাড়ি', 'মা কে সন্তান পিটিয়ে বের করে দিয়েছে' ইত্যাদি, ইত্যাদি।

তবে আজ যারা বৃদ্ধ, ফলে আজকাল যাদের স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রমে তাদের নিজেদের জীবনের সব সময় ও ধন সম্পদ বিনিয়োগ করেছেন সন্তানের জন্য, নিজের জন্য রাখেননি কিছুই। কিন্তু বয়সকালে তাদের ঠাঁই হয় না সেখানে। কখনো দেখা যায় সন্তান তার নিজের পরিবারের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে, তাই পিতা-মাতাকে মনে করছে বোঝা। নিজে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একটু ভালো থাকার জন্য বাবা-মার ঠাঁই করে দিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমে। আবার এমনো দেখা যায় যে সন্তানের টাকা পয়সার অভাব নেই, কিন্তু পিতা-মাতাকে নিজের কাছে রাখার প্রয়োজন বোধ করছেন না, বা বোঝা মনে করছেন। হয় নিজেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে, নয়ত অবহেলা দুর্ব্যবহার করে এমন অবস্থার সৃষ্টি করছেন যেন তাদের পিতা-মাতা নিজ ইচ্ছায় সরে গেছেন পরিবার থেকে। 

একবার বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়েই অনেক সন্তানের মুক্তি। এরকম বিভিন্ন অজুহাতে মা-বাবা কে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে সন্তানেরা। এছাড়াও  নামি-দামি বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, চাকরিজীবী যারা এক সময় খুব বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন, বৃদ্ধ বয়সে এসে নিজের সন্তানের দ্বারাই অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে বৃদ্ধাশ্রমের স্থায়ী বাসিন্দা হতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক সন্তানেরা মা-বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে রেখে গেলে আর দেখতে আসে না, কোনো খোজ খবর রাখে না। এমনকি ঈদেও তাদের নিতে আসে না। 

তাই বৃদ্ধাশ্রমই অবহেলিত বৃদ্ধদের জন্য একমাত্র এবং শেষ আশ্রয়। তাদের সারাজীবনের অবদানের যথার্থ স্বীকৃতী, শেষ সময়ের সম্মান ও নিরাপত্তা দেয়া হয় এসব বৃদ্ধাশ্রমে। এখানে তারা নির্ভাবনায়, সম্মানের সঙ্গে, আনন্দের সঙ্গে বাকি দিনগুলো কাটাতে পারেন। প্রয়োজনে অনেক বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসারও সুন্দর ব্যবস্থা করা আছে। তবে এখানে সব পাওয়ার পরে যেটা পাওয়া যায় না সেটা হলো পরিবার, সন্তানের সান্নিধ্য, নাতি-নাতনীদের সাথে খুনসুটি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭