ইনসাইড টক

‘থ্যালাসেমিয়া রোগটি সন্তানদের মধ্যে ধারাবাহিকতা হিসেবে চলে আসে’


প্রকাশ: 08/05/2022


Thumbnail

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন বিভাগের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম বলেছেন, থ্যালাসেমিয়া রোগ এটা একটা রক্তের রোগ। এই রোগটা আমরা বহন করি বাবা-মা’র কাছে থেকে। বাবা-মা’র যদি থ্যালাসেমিয়া রোগ থাকে তাহলে সন্তানদের মধ্যে সেই রোগটা ধারাবাহিকতা হিসেবে চলে আসে। প্রতিদিন আমাদের এই বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগী বেড়েই চলেছে। যদিও আমাদের ন্যাশনাল কোন ডাটা নাই। আমরা দেখছি যে, ধীরে ধীরে থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েই চলছে।  প্রধানত দুই ধরনের থ্যালাসেমিয়া হয়। আলফা থ্যালাসেমিয়াও বিটা থ্যালাসেমিয়া। রক্ত লাল হয় হিমোগ্লোবিনের জন্য। এই হিমোগ্লোবিনের দুটি চেনই থাকে যেটাকে আমরা বিটা এবং আলফা চেনই বলি। এই আলফা এবং বিটার মধ্যে যদি কোন ক্রটি থাকে তাহলে থ্যালাসেমিয়া রোগটা হয়। যাদের বিটা থ্যালাসেমিয়া তাদের রক্ত তৈরি হচ্ছে না এমন কিন্তু নয়। তাদের রক্ত ঠিকই তৈরি হচ্ছে। আমাদের বেলায় রক্ত কোষ বাড়ছে ১২০ ডিগ্রি তাদের বেলায় বাড়ছে ৩০-৪০ ডিগ্রি। এই কারণেই তাদের ঘন ঘন রক্ত শূন্যতা দেখো দেয়।

‘বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস’ উপলক্ষে থ্যালাসেমিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।

অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম বলেন, থ্যালাসেমিয়া গুরুতর না হলে চিকিৎসার তেমন প্রয়োজন নেই। তবে মারাত্মক আকার ধারণ করলে রোগীর শরীরে নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। বলা যায়, এর প্রধান চিকিৎসা শরীরে রক্তসঞ্চালন নিশ্চিত করা। আর শরীরে অতিরিক্ত আয়রন জমা হলে আয়রন চিলেশন থেরাপি, সাধারণত ডেসফেরক্সামিন দেওয়া হয়। অন্যদিকে প্লীহা বড় হলে অপারেশন করে তা ছোট করতে হয়। এতে রক্ত গ্রহণের হার কিছুটা কম হয়। তবে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হচ্ছে এই রোগের স্থায়ী চিকিৎসা। এতে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। এত দিন বিদেশে গিয়ে মানুষ এই রোগের চিকিৎসা করাত। আশার কথা যে সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগে এই চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), বেসরকারি এ্যাপোলো হসপিটালস ঢাকায় এই বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা। মনে রাখতে হবে, এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। যদি স্বামী-স্ত্রী দুজনই থ্যালাসেমিয়া বাহক বা একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক ও একজন হিমোগ্লোবিন ‘ই’র বাহক হন, তবে প্রতি গর্ভাবস্থায় এ রোগে আক্রান্ত শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে ২৫ শতাংশ, বাহক শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ, আর সুস্থ শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে ২৫ শতাংশ।

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের বিষয়ে অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম বলেন, রোগটি পুরোপুরি নির্মূল করতে জেনেটিং কাউন্সেলিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিনের বাহক যাঁরা, তাঁদের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করতে হবে। গর্ভাবস্থায়ই ভ্রূণ বা শিশুর রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করতে হবে। যেসব পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী দুজনই এ রোগের বাহক অথবা যাঁদের এক বা একাধিক থ্যালাসেমিক শিশু আছে, তাঁরা গর্ভস্থ ভ্রূণ পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্য থ্যালাসেমিক শিশু নির্ণয় ও তা পরিহার (গর্ভপাত) করাতে পারেন। গর্ভাবস্থার ১৬ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে এই পরীক্ষাটি করালে ভালো হয়। গর্ভস্থ সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত কি না তা জানার জন্য কোরিওনিক ভিলিয়াস স্যাম্পলিং, অ্যামনিওসেনটিসিস ও ফিটাল ব্লাড স্যাম্পলিং পরীক্ষাগুলো করা যেতে পারে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭