লিট ইনসাইড

বিভিন্ন আখ্যানে অঙ্কিত 'একটুখানি চাকরি'


প্রকাশ: 08/05/2022


Thumbnail

মেমোয়ার- কথাটি শুনলেই আমাদের মনে প্রথমেই চলে আসে জীবনালেখ্য। একজন মানুষের গোটা জীবনটাই চলে আসে সিনেমার রিলে কিংবা শব্দের বুনটে। তবে সিনেমার রিলে যেমন করে মূল গল্প থেকে কিছুটা সরে এসে সেখানে নানাভাবে রঙচঙ মাখানো হয়, তারচেয়ে বরং শব্দের বুনটটাই মেমোয়ারপ্রেমীদের কাছে বেশি প্রিয়। এতে লেখকের সাথে পাঠকেরা এক আত্মিক বন্ধনের যোগসূত্র খুঁজে পান, বাস্তবতার পরশ পান। 

একটুখানি চাকরি, নামটা শুনলে একটু ভ্রূ কুঁচকে ওঠাটাই স্বাভাবিক। পাঁড় পড়ুয়ারা হয়ত নাম শুনে হেঁকে বসতে পারেন, আরে ও তো চাকরি নিয়ে বই লেখা হয়েছে। এটা বরং যারা চাকরিপ্রত্যাশী তাদের হাতেই তুলে দেয়া হোক।

তবে তাদেরকে যখন বলা হবে এটি চাকরিপ্রত্যাশী তো বটেই, একইসাথে একজন লেখকের গোটা জীবনের স্পর্শ সুনিপুণ তুলির চমৎকার স্ট্রোকে ক্যানভাসে অঙ্কন করা হয়েছে, তারাও অবাক হতে বাধ্য হবেন বৈকি। 

বইয়ের পেছনের ফ্ল্যাপ থেকেই শিল্পীর পরিচয়ে আসা যাক- 

মো. আবদুল মান্নান মূলত একজন সিভিল সার্ভেন্ট। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভেন্ট প্রশাসন ক্যাডারের ৮ম ব্যাচের সাহসী, দক্ষ ও স্বনামধন্য কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর সুনাম ও খ্যাতি সর্বত্র। তিন দশকের অধিককালের সময়জুড়ে তার কর্মপরিধি বিস্তৃত। পরবর্তীতে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান, সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও সচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন তিনি। 

এটুকু পড়লে তার জীবনের কর্ম সম্পর্কে জানাটা পাঠকের কাছে অধরাই থেকে যায়। সেজন্য তাদেরকে হাতে তুলে নিতে হবে একটুখানি চাকরি নামের এই বইটি। 
পাঠকের কাছে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে পারে, বইটির নাম এমন কেন? তাছাড়া যদি মেমোয়ারই হয়ে থাকে, নামটি আরও শৈল্পিক হবার কথা ছিল না? লেখকের মুনশিয়ানা বোধহয় এখানেই। বইটি শুরু করলে পাঠকেরা বুঝতে পারবেন এরচেয়ে যৌক্তিক নামকরণ হওয়া বোধহয় আর সম্ভব ছিল না। 

একটুখানি চাকরি বইটিতে লেখকের চাকরি জীবনের শুরু থেকে নানা ঘটনার সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে। কর্তব্যবোধ, দায়িত্ববোধ, দেশের প্রতি মমত্ববোধ, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে কর্তব্যপালন ইত্যাদি নানা গুণের সমাহার উঠে এসেছে জীবনের নানা গল্পের বাঁকে বাঁকে। আটপৌরে জীবনটিকেই অসামান্য সব অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি করে তুলেছেন বর্ণিল। তাই বলে কি পরিবারের প্রতি তিনি কোনো দায়িত্ব পালন করেননি? একইসাথে কর্মজীবন, ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন ও সামাজিক জীবন কীভাবে আগলে রেখে জীবনটাকে ব্যালেন্স করে চলা যায়, তার চমৎকার এবং জলজ্যান্ত উদাহরণ হচ্ছেন হোসেন আবদুল মান্নান। তার লেখা বইতে উঠে আসে সত্তর, আশি, নব্বইয়ের দশকের নানা উদাহরণ, নানা চরিত্র, নানা আখ্যান। পড়তে পড়তে পাঠক হিসেবে আমরা তন্ময় হয়ে যাই। 

বিপন্ন বিস্ময় নামক আখ্যানে আমরা দেখতে পাই লেখক পরিচিত হচ্ছে ব্রজেন দাসের সামনে, যিনি সর্বপ্রথম ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করেছিলেন। সে কথাটি অকপটে তার লেখনীতে উঠে এসেছে। নিখাদ বিস্ময় তো ছিলই, কিন্তু সেখানে কোনো বাড়তি মেদ ছিল না। পড়তে পড়তে পাঠক যেন চিত্রটি একদম চোখের সামনে দেখতে পান। 

হাফিজের জন্য নৈবেদ্য নামক আখ্যানে উঠে এসেছে হাফিজ নামের এক চরিত্রের কথা, যিনি কোনো কাজ করেন না। তাকে যখন প্রশ্ন করা হলো, তখন তার কণ্ঠে একইসাথে উঠে আসে জাতির পিতার প্রতি সম্মান ও নিখাদ ভালোবাসা। ‘মুজিব ভাই বলে দিয়েছেন, তুই ভালো থাকবি’- কথাটি পড়তে পড়তে অকারণেই কেন যেন শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে আসে মাথা। 

আবার মুখোমুখি সৌমিত্র আখ্যানে আমরা পাই ভারতের প্রয়াত প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কথা। লেখকের যখন তার সাথে দেখা হয়, তখন তাদের মাঝে কথোপকথন এবং পারস্পরিক সম্মানের কথা উঠে এসেছে অকপটে। 

এমনই নানা আখ্যান উঠে এসেছে একটুখানি চাকরি নামক বইটিতে। রাজনৈতিক, সামাজিক নানা চিত্র ফুটে এসেছে বিভিন্ন আখ্যানে, অঙ্কিত হয়েছে নানা ঘটনাবহুল চরিত্র এবং লেখকের ব্যক্তিগত ইতিহাস। 

তরুণ প্রজন্মের কাছে সিভিল সার্ভিসের প্রতি একধরণের ভালোবাসা এবং দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ জন্মাবে লেখকের এই অনবদ্য বইটি পড়লে। একইসাথে প্রতিকূল পরিস্থিতি কেমন করে প্রজ্ঞার সাথে মোকাবিলা করে জয় ছিনিয়ে আনতে হয়, সেটিও এই বইটির চমৎকার উপজীব্য। 

ধ্রুব এষের মানানসই প্রচ্ছদে হোসেন আবদুল মান্নানের বইটি প্রকাশিত হয়েছে আগামী প্রকাশনী থেকে, মুদ্রিত মূল্য ৬০০ টাকা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭