দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানিকে হটিয়ে সবার প্রথম বার্লিন দখল করে সোভিয়েত লাল ফৌজ। দুই সপ্তাহের সেই রক্তক্ষয়ী ‘ব্যাটেল অফ বার্লিনের’ পর নাৎসি বাহিনীর কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয় সাবেক সোভিয়েত সেনারা। সেই থেকে গত ৭৭ বছর ধরে এই দিনটিকে নিজেদের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছে সোভিয়েত পরবর্তী বর্তমান রাশিয়া।
নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের ৭৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভুক্ত দেশগুলোকে অভিনন্দন জানিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধজয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘১৯৪৫ সালের মতো জয় আমাদেরই হবে।’
রোববার (৮ মে) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের ৭৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে একথা বলেন পুতিন।
তবে অন্য বছরের তুলনায় চলতি বছর রাশিয়ার এই বিজয় দিবসের আলাদা একটি তাৎপর্য সামনে চলে এসেছে। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে মহাদেশটিরই আরেকটি দেশে সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে রাশিয়া।
পুতিনের নির্দেশে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রুশ বাহিনী। এই অভিযান চলার মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের ৭৭তম বার্ষিকী উদযাপন করছে রাশিয়া।
পুতিন বলেন, ‘পূর্বসূরিদের মতোই আজ আমাদের সেনারা নাৎসিদের কলুষতা থেকে তাঁদের মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছে যে ১৯৪৫ সালের মতো জয় আমাদেরই হবে।’
পুতিন বলেন, ‘আজ নাৎসিবাদের পুনর্জন্ম ঠেকানো আমাদের সবার সাধারণ দায়িত্ব। কারণ, এই নাৎসিবাদের কারণেই বিভিন্ন দেশের জনগণকে চরম ভোগান্তি স্বীকার করতে হয়েছে।’
পুতিন আরও বলেন, তাঁর আশা, নতুন প্রজন্ম তাদের পিতা ও পিতামহের যুদ্ধজয়ের সেই স্মৃতি ধরে রাখার যোগ্য হয়েছে।
ইউক্রেন ফ্যাসিবাদের কবলে পড়েছে বলে অভিযোগ করছেন পুতিন। এই ফ্যাসিবাদ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের সংখ্যালঘু রুশভাষী মানুষ ও রাশিয়ার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ পুতিনের। নব্য নাৎসিদের হাত থেকে ইউক্রেনকে মুক্ত করার প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে আসছে মস্কো।
পুতিন বলেন, দুঃখজনকভাবে আজ আবারও নাৎসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে মহান দেশপ্রেমের যুদ্ধ মনে করে মস্কো। পুতিন বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যারা পরাজিত হয়েছিল, তাদের মতাদর্শিক উত্তরসূরিদের লাগাম টেনে ধরা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।’ রুশদের বদলা নেওয়ারও আহ্বান জানান পুতিন।
এছাড়া পুতিনের ভাষণে উঠে এসেছে ইউক্রেনীয়দের জন্য শুভকামনাও। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি ‘ইউক্রেনের সকল বাসিন্দার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ এবং ন্যায্য ভবিষ্যৎ’ কামনা করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। তাই এই বিজয় দিবসটি অর্থাৎ ৯ মে তাদের কাছে একটি গৌরবময় ঐতিহ্য। আজ সোমবার বড় সামরিক কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিপক্ষে জয়ের বার্ষিকী আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করবে মস্কো।