এডিটর’স মাইন্ড

সম্রাট কি ফিরবেন আওয়ামী লীগে?


প্রকাশ: 11/05/2022


Thumbnail

প্রায় দুই বছর সাত মাস কারাভোগের পর আওয়ামী যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট মুক্তি পেতে যাচ্ছেন। আজ সর্বশেষ মামলায় আদালত তাকে জামিন দিয়েছে। ফলে তার মুক্তির পথে আর কোনো বাধা রইলো না। ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ছিলেন। শুধু যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি বললে ভুল হবে, ঢাকার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হিসেবে আলোচিত ছিলেন। অন্যান্য নেতারা যখন দুর্নীতি করেন বা দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে যুক্ত হন, তখন তারা দলেও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন এবং দলের তৃণমূলের সঙ্গে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের ক্ষেত্রে ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট দুঃসময়ে সময় আওয়ামী লীগের অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট আলোচনায় আসেন। এই সময় ঢাকা মহানগরীতে বিপর্যস্থ আওয়ামী লীগের সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। কর্মীবান্ধব হওয়ার কারণে দ্রুতই কর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়ে উঠে। নিজে বিভিন্নভাবে যে উপার্জন করেছেন, সেই উপার্জনের অর্থ বেশিরভাগই তিনি ব্যয় করেছেন সংগঠনের জন্য। কর্মীদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার কারণে তিনি দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার যখন ক্ষমতা ছাড়ে তখন পল্টন এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সহিংসতা ঘটে। সেই সময় বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পনা ছিল আওয়ামী লীগ অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া। কিন্তু ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ আরও কয়েকজন নেতা সেদিন সাহসিকতার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতকে প্রতিহত করেছিল। না হলে আওয়ামী লীগের ঢাকায় অস্তিত্ব কতটুকু থাকতো সেটি নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম আলোচনা রয়েছে।

২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন আসার পর শেখ হাসিনা গ্রেফতার হন। এই সময় ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। শেখ হাসিনার পক্ষে নেতাকর্মীদেরকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন। এভাবেই আস্তে আস্তে রাজনীতিতে তিনি একটি আলাদা বলয় তৈরি করেছেন। এমনকি নেতারাও তার উপর নানা বিষয়ে নির্ভরশীল ছিলেন। এই সম্রাটের এরকম পরিণতি হবে সেই সময় কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় আসার পরই শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি ঘোষণা করেন এবং তিনি বলেন যে, দুর্নীতিবাজ যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হয় এবং এই অভিযানে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতার হয়েছিলেন। এই গ্রেফতারের আগেই অবশ্য তাকে দল বহিষ্কার করেছিল। এখন সম্রাটে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এমন একটি সময় তিনি জামিনে মুক্তি পেলেন যখন আওয়ামী লীগের মধ্যে কাউন্সিল নিয়ে নানামুখী আলোচনা এবং সামনে বিরোধী দলের আন্দোলন। এছাড়াও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে টালমাটাল আন্ডারওয়ার্ল্ড। এরকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে রাজনীতিতে সম্রাটের ভূমিকা কি হবে? জামিন পেয়ে কি তিনি নিভৃত জীবন-যাপন করবেন? নাকি রাজনীতির মধ্যে আবার সক্রিয় হবেন। সক্রিয় হলে আওয়ামী লীগের ভূমিকা কি হবে? আওয়ামী লীগই বা তাকে নেবে কিনা? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে। সম্রাটের মুক্তি পাওয়ার পরই হয়তো এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭