ইনসাইড পলিটিক্স

জিয়া বললেন ইমপসিবল


প্রকাশ: 17/05/2022


Thumbnail

আজ ১৭ মে। ১৯৮১ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু শেখ হাসিনার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অত্যন্ত সহজ সরল একটি বিষয় ছিল না। নানা প্রতিকূলতা এবং প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তাকে দেশে ফিরতে হয়েছিল এবং তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে সবচেয়ে বড় বাধা ছিলেন তৎকালীন সামরিক স্বৈরাচারী জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। এই হত্যাকাণ্ডে যারা কুশীলব ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জিয়া। জিয়া নেপথ্যে থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার সব কলকাঠি নেড়েছিলেন এবং এই হত্যাকাণ্ডের পর তিনি সেনাপ্রধান হয়েছিলেন, পর্যায়ক্রমে তিনি স্বঘোষিতভাবে রাষ্ট্রপতি হন।

জিয়াউর রহমানের প্রধান লক্ষ্য ছিল যে, বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলা এবং কিছুতেই যেন বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরীরা রাজনীতিতে না আসতে পারেন তার ব্যবস্থা করা। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনকে সিলগালা করেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা যেন দেশে ফিরছেন না পারেন সেজন্য তৎপর হয়েছিলেন। কিন্তু এসব তৎপরতা স্বত্বেও ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ তার কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি হিসেবে মনোনীত করেন। এই সভাপতি হওয়ার ঘটনায় জিয়াউর রহমান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। একটি মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের বরাত দিয়ে সে সময়ে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রতিবেদন লিখেছিল যে, জিয়া এই শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সভাপতি হওয়া অসাংবিধানিক কিনা এবং আইনের লংঘন কিনা কিংবা বিদেশ থেকে কেউ অন্যকোনো রাজনৈতিক দলের সভাপতি হতে পারে কিনা এই প্রশ্নগুলো উত্থাপন করেছিলেন। এ নিয়ে এর আইনগত দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি সাত্তারকে। বিচারপতি সাত্তারের নেতৃত্বে এ ব্যাপারে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। যখন দেখা যায় যে, আইনগতভাবে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সভাপতি হওয়া বৈধ তখন শেখ হাসিনা যেন দেশে না ফিরতে পারেন সেজন্য সব চেষ্টাই করেছিলেন।

প্রথমত, জিয়াউর রহমান ভারতের কাছে ধর্ণা দিয়েছিলেন যেন শেখ হাসিনা ভারত থেকে দেশে না ফেরে। কিন্তু ভারত সরকার তার প্রস্তাবকে পাত্তা দেয়নি। এরপর তিনি শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই যেন তাকে হত্যা করা হয়, এমন পরিকল্পনাও করেছিলেন এবং এই পরিকল্পনার কথাটি আওয়ামী লীগের অনেক নেতারাই জানতেন। আর এ কারণেই তারা শেখ হাসিনার জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। তারা মনে করতেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই হয়তো জিয়াউর রহমান তাকে মেরে ফেলবেন। কারণ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জিয়াউর রহমান কয়েক সহস্ত্র মানুষকে হত্যা করেছেন। যখন কোনো বাধাতেই শেখ হাসিনা ভয় পেলেন না এবং ১৭ মে দেশে ফেরার দিন নির্ধারণ করলেন তখন শেখ হাসিনাকে ইমিগ্রেশনে আটকানো কিংবা তাকে বিমানে না উঠনো ইত্যাদি চেষ্টাও করেছিলেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু সর্বশেষ যখন শেখ হাসিনা তার অটল অবস্থান ব্যক্ত করেন এবং  প্রাণ চলে গেলেও দেশে ফেরার ব্যাপারে অনড় থাকেন তখন বাধ্য হয়ে জিয়া তার অবস্থান থেকে সরে আসতে। ১৭ মে শেখ হাসিনা যখন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন তখন লাখো জনতার উত্তাল স্রোত ঢাকা শহর সয়লাব করে দেয়। এই তথ্যটি যখন জিয়াউর রহমান পান তিনি বলে ওঠেন ইমপসিবল।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭