ইনসাইড টক

'সারা পৃথিবীই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অনিশ্চয়তায় পড়েছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়'


প্রকাশ: 18/05/2022


Thumbnail

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেছেন, আমার হিসাব-পত্র যা বলে, ২০১৮-১৯ এ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহা মন্দা, তারপরে আসলো কোভিড, তারপরে ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এসব যুদ্ধ হলো অনিশ্চয়তা, ঝুঁকি নয়। অনিশ্চয়তা যে পর্যায়ে বাড়িয়েছে সেই পর্যায়ে কি করণীয় সেটা ভাবা সাধারণভাবে খুব কঠিন। সুতরাং সারা পৃথিবীই এই অনিশ্চয়তার ভেতরে পড়েছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা, দেশের বিভিন্ন মেগা প্রোজেক্ট এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত এসব কথা বলেছেন। 

অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, যখন থেকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করা হলো তখন থেকে আমি এটা নিয়ে কাজ করছি যে আমাদের আসলে অবস্থাটা কি। ২০০০ সালে যখন কিবরিয়া সাহেব অর্থমন্ত্রী ছিলেন তখন আমি সাধারণ সম্পাদক হলাম অর্থনীতি সমিতির এবং প্রথম সেমিনার ছিলো বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণ সাহায্য কতটুকু প্রয়োজন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এরশাদের সময়ে অর্থমন্ত্রী ড. ওয়াহিদুল হক। সেখানে অনেকগুলো উপসংহারের একটা ছিলো যে, ফরেন এইড বিশেষ করে লোন ডেমোক্রেসি-অটোক্রেসি নির্বিশেষে স্বাধীন উন্নয়নের প্রতিবন্ধক। তারপর বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে যদি আমরা এটা নিয়ে না ভাবি তাহলে বিপর্যয় নিশ্চিত। এই ছিল শেষ কথা।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর আমি একটি বিকল্প বাজেট দেই। সামনের ২২ তারিখে সকাল ১০ টায় এটি দেওয়া হবে। এবারের বিকল্প বাজেটের একটি উপ-শিরোনাম আছে। উপ-শিরোনামটি হলো 'একটি জনগণতান্ত্রিক বাজেট'। এটি লেখার প্রথম প্যারাই হচ্ছে জনগণতান্ত্রিক বাজেট কেন বলা হলো। এবার প্রথমবারের মতো দুটি কাজ করেছি। একটি বাজেটের ভিত্তি নীতি কি হওয়া উচিৎ। এখানে ২৪টা গ্রুপ রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো বৈদেশিক ঋণ। বৈদেশিক ঋণ গ্রুপটাতে আমি ২০ বছর আগের বিষয় স্মরণ করে দিচ্ছি। সেখানে একটা প্যারাগ্রাফে বোল্ড করে লিখছি যে, আমার হিসাব-পত্র যা বলে, ২০১৮-১৯ এ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহা মন্দা, তারপরে আসলো কোভিড, তারপরে ইউরোপে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এসব যুদ্ধ হলো অনিশ্চয়তা, ঝুঁকি নয়। অনিশ্চয়তা যে পর্যায়ে বাড়িয়েছে সেই পর্যায়ে কি করণীয় সেটা ভাবা সাধারণভাবে খুব কঠিন। সুতরাং সারা পৃথিবীই এই অনিশ্চয়তার ভেতরে পড়েছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। 

অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, এখন বৈদেশিক মুদ্রার যে প্রবাহ আছে সেটা সব রপ্তানী করে পাওয়া যায়। একটি হলো রপ্তানী মানুষ, আর একটি হলো রপ্তানী পণ্য। এর বাইরে ডলার আয়ের কোনো পথ নেই। এখন যদি মানুষ রপ্তানীর আয় কমে যায়, যুদ্ধ-বিগ্রহ হলে কমবে। আর যদি আগের মতোই ভলিউমে থাকে কিন্তু ভ্যালুতে না থাকে (সেটার সম্ভাবনা প্রচুর) তাহলে একটি পর্যায়ে বিপদে পড়তে হবে। আজকেও সেই বিপদ আছে। ১০১ টাকা কিন্তু ডলার। আমি ৩ মাস আগে বলেছি যে, ডলার এর দাম ১২০-১৩০-১৪০ টাকা হলেও কিছু করার নেই। হতে পারে। এটি শুধু হবে না। হওয়াতেও হবে। কারণ যখন ফরেন কারেন্সি দরকার হবে, তখন এক্সপোর্ট সস্তা করতে হবে। তা না হলে তো বাজার পাওয়া যাবে না। 

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, আমার কাছে মনে হয়, শ্রীলঙ্কার এই অবস্থা হয়ে আমাদের লাভ হয়েছে। কারণ বিদেশে অনেক প্রোডাক্ট শ্রীলঙ্কার। এখন শ্রীলঙ্কার এই অবস্থার কারণে, আমার মনে হয় এই বাজারগুলো আমরা পেয়ে যাবো। ইতোমধ্যে ভারত, লাউস, ভিয়েতনাম, চায়না পেয়ে গেছে। আবার এদিকে অনেকে গল্প বলছে যে, গার্মেন্টসে এতো অর্ডার যে দিয়ে শেষ করতে পারছি না। আমার হিসেবে, যখন থেকে ৪-৫টা মেগা প্রোজেক্টের লোন পরিষদ শুরু করা হবে, তখন যদি এখনকার অবস্থা থাকে তাহলে বিপদে পড়তে হবে। সেটা আমার হিসেবে ২০২৭-২৮ সাল। 

তিনি বলেন, এই বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। আর কোনো মেগা প্রোজেক্ট নেওয়া যাবে না। যেগুলো মেগা প্রোজেক্ট নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ভুলও আছে আবার ভালোও আছে। ভুল গুলির দিকে তাকালে, যেমন কর্ণফুলি টানেলের আয়টা কি হবে? আয় নেই কিন্তু। আরও আছে। সব থেকে বড় ভুল রাশিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট। ১৪ বিলিয়ন ডলার থেকে এটা ২০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে। ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যাৎ প্রকল্প এবং হিসেব করে দেখানো হয়, এটার পার ইউনিট কষ্ট কম পড়ে। এটা মিথ্যা কথা। কারণ, ১. ইউরেনিয়াম যেখান থেকে আনা হবে, সেই খনিতে ৩০ বছর কাজ করলে ৫০ভাগ মানুষের ক্যান্সার হয়। তাহলে গ্লােবাল ভ্যালুর মধ্যে তো এটা যোগ হবে। ২. এটার আয়ু হচ্ছে ৬০ বছর। ধরলাম ১০০ বছর। কিন্তু যেটা ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়েছে (হাইলি রিএকটিভ) এটার ওয়েস্ট রাখতে হয় ১ হাজার বছর। সেটারও হিসার করতে হবে। এগুলো হিসাব করলে এই বিদ্যাৎ প্রকল্পের কোনো প্রয়োজন ছিলো না। ৩. যখনই একটি দেশ এই নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট বানায়, ওই দেশের লিডারশীপ যেই থাকুক তাদের মাথার মধ্যে একসময় খেলা শুরু করে, আমি তো নিউক্লিয়ার পাওয়ার হয়ে যেতে পারি। ইন্ডিয়ার মতো। ইন্ডিয়ার পাশে থেকে নিউক্লিয়ার পাওয়ার হওয়ার চিন্তা করলে দেশই ডুবে যাবে।

২০২৭-২৮ সালের বিপদ থেকে বের হওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, আমার খুব দুশ্চিন্তা ২০২৭-২৮ সাল নিয়ে। এটা থেকে বের হওয়ার মাধ্যম হলো ডিভ্যালু করা। ডিভ্যালু করে বিশ্বে যতো বাজার পাওয়া সম্ভব, আমরা যেগুলো প্রোডিউস করি, সেই বাজারগুলো ৫ বছরের জন্য যত দ্রুত পাওয়া যায়। একই সঙ্গে ডোমেস্টিক ইকোনমিক স্টেন্থ বের করা। অর্থাৎ এগ্রো বেইজ, এগ্রো প্রসেসিং এবং ভূমি সংস্কার। এটি কিন্তু খুব রেভিলিউশনারি কাজ। আর আমদানি নির্ভরতা যতো কমানো যায়। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭