মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশ দলের যে কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রয়েছেন তার মধ্যে মুশফিকুর রহিম অন্যতম। বাংলাদেশ দলের একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটার এবং উইকেট কিপারও তিনি। মিস্টার ডিপেন্ডেবলও বলা হয়ে থাকে এই ব্যাটারকে। তার ব্যাট থেকে যে কতোবার বাংলাদেশ খাঁদের কিনারা থেকে বেরিয়ে এসেছে তা হয়তো হিসেব করা যাবে না। তারপরও তাকে নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে তার রিভার্স সুইপ। রিভার্স সুইপ মূলত মুশফিকের পছন্দের শট। কিন্তু এই শটটিই এখন তার ক্যারিয়ারের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই শটটি খেলতে গিয়েই অনেকবার তিনি অকাতরে দিয়ে এসেছেন তার উইকেটটি। যদিও এই শটটি খেলতে চান তিনি আরও অনেকবার। চট্টগ্রাম টেস্টে দারুন পারফরমেন্স করেছেন মুশফিকুর রহিম। তুলে নিয়েছেন নিজের একটি সেঞ্চুরিও। এরপরই মূলত গুঞ্জন শুরু হয় মুশফিকের অবসরে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে। মূলত তার স্ত্রীর একটি স্ট্যাটাস থেকেই এই গুঞ্জন শুরু হয়। সেই গুঞ্জন মূলত নিজেই শেষ করেছেন মুশফিক। জানিয়ে দিয়েছেন আরও অনেকদিন খেলতে চান বাংলাদেশের হয়ে।
২০০৫ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক মুশফিকের। এরপর কেটে গেছে ১৭ বছর। এ সময়ে বাংলাদেশের জার্সিতে চট্টগ্রাম টেস্টের আগ পর্যন্ত ৮০ টেস্টে ৩৬ দশমিক ২৬ গড়ে সাতটি সেঞ্চুরিতে করেছিলেন চার হাজার ৯৩২ রান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে মুশফিকের দরকার ছিল ৬৮ রান। লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে সেই লক্ষ্যেই ব্যাট চালিয়েছেন এ ক্রিকেটার। লক্ষ্য অর্জনও করেছেন সেঞ্চুরি করে। চট্টগ্রাম টেস্টে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।
পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেই মুশফিক জানিয়েছেন, আপাতত কোনো ফরম্যাট থেকেই অবসরের ভাবনা নেই। তামিমের মতো টি-টোয়েন্টি থেকে সরে যাওয়ার ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে মুশফিক বলেন, ‘না ভাই, আমার আপাতত এমন কোনো ভাবনা নেই। আমার ইচ্ছে বাংলাদেশের হয়ে যতগুলো ম্যাচ খেলার সুযোগ আসবে এবং তারা আমাকে যেভাবে চাইবে, ইন শা আল্লাহ আমি চেষ্টা করে যাবো আমার ফিটনেস ও পারফরম্যান্স দিয়ে সেটা ধরে রাখার।’ তিনি বলেছেন, ‘চাওয়া-পাওয়ার তো তেমন কিছু নেই সত্যি বলতে। আমার মনে হয় বাংলাদেশে অভিজ্ঞতার কোনো দাম নেই। সেখানে আমি মনে করি ১৭ বছর, আলহামদুলিল্লাহ এতটুকু যে আসতে পেরেছি, এটা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। সামনে আল্লাহ যতটুকু রেখেছেন, উনি লিখেই রেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এতটুকু যেন ভালো মতো খেলতে পারি।’
ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, প্রায় ১৭ বছরের ক্যারিয়ার মুশফিকের। টি-টোয়েন্টিতেও দেশের হয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এই ব্যাটার। ১০০ ম্যাচ খেলে ১৯.৯৩ গড়ে ১৪৯৫ রান করেছেন তিনি। তার মতো একজন খেলোয়াড়কে বাদ দিয়ে খেলার কথা আসলে চিন্তাও করা কঠিন। কারণ সে তো মিস্টার ডিপেন্ডেবল। তার জায়গায় আসলে খেলানোর মতো কেউ তৈরি হয়নি এখনও। তবে মুশফিক তো আর সব সময় খেলতে পারবেন না। সেই কারণেই বিসিবির উচিৎ হবে তার জায়গায় অন্য কাউকে তৈরি করা। তাহলে মুশফিকের অভাব পূরণ করার অন্তত একটি পথ তৈরি হবে। তবে মুশফিকুর রহিম একজনই। তার বিকল্প কেউ হবে না।