সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালী জেলা শহরের মাইজদীর আল ফারুক একাডেমি থেকে অভিযান চালিয়ে বৈঠকরত অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর ৪৫ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ধর্মীয় উগ্রতাকে পুঁজি করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ বৈঠক করা হয়েছিল বলে প্রাথমিক সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম। পরের দিন ১৬ মে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার টেরিবাজার এলাকায় আল বয়ান নামে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে জামায়াত-শিবিরের ৪৯ জন নেতা-কর্মীকে সরকার বিরোধী গোপন সভা করার অভিযোগে আটক করে পুলিশ। পৃথক দুই জায়গায় থেকে আটক করা হলেও তাদের বৈঠকের উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
দেশের পৃথক দুই জায়গা গোপন সভা করার অভিযোগে মোট ৯৪ জামায়াত নেতাকর্মী আটক হওয়ায় জামায়াতের ষড়যন্ত্র আবার নতুন করে উঠে আসছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, ২০১৮ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হলেও বিলুপ্ত হয়নি জামায়াত। বরং আড়ালে আবডালে তারা সংগঠিত হয়েছে এবং দেশ বিরোধী নানা ষড়যন্ত্র করে চলছে। যার জ্বলন্ত প্রমাণ এই ৯৪ জন গ্রেফতারের ঘটনা। আর এদের প্রশ্রয় দিয়েছে বিএনপি। নির্বাচন এলেই নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াত জোট নানা ষড়যন্ত্রে সক্রিয় হয়ে উঠে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দুই বছরেরও কম সময় আছে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে। আগামী ২০২৩ সালের শেষ বা ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে পারে এই নির্বাচন। সে লক্ষ্যে দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের শক্তি এবং সামর্থ্য অনুযায়ী ঘর গোছানোর কাজ শুরু করেছে। বসে নেই ষড়যন্ত্রকারীরাও। নির্বাচন আসলেই শুরু হয় দেশী-বিদেশী নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। জামায়াত এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির একটি ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করেছে, যার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নির্বাচন বানচাল করতে খোড়া কোন ইস্যুতে রাজপথে সাধারণ নাগরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সহিংস ও প্রাণঘাতী হামলা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা ও তাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা ইত্যাদি। জামায়াতের রাজনীতির মূল লক্ষ্যই হলো ষড়যন্ত্র আর চক্রান্ত করা। দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা।
বিশ্লেষকরা এও বলছেন যে, জামায়াতের সহিংস ও সন্ত্রাসবাদের ইতিহাস বেশ পুরোনো। ২০১৩-১৪ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ বন্ধ করার দাবিতে জামায়াতে সারা দেশে একটি ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের এক বছর পর আবারও জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে সন্ত্রাসের রাজত্ব করতে চেয়েছিল তারা। বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, নিজেদের চিরাচরিত স্বভাব কখনোই এরা ত্যাগ করতে পারেনি। যে কারণে আগামী নির্বাচনের আগে জামায়াত আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে।