ইনসাইড ইকোনমি

সিন্ডিকেট করে ডলারের দাম বাড়ানোর অভিযোগ


প্রকাশ: 19/05/2022


Thumbnail

গত কয়েকদিন ধরেই খোলাবাজারে ডলারের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও রাজধানীতে বুধবার প্রতি ডলার ১০০ টাকা ও তার নিচে বেচাকেনা হয়েছে। তথাপি ডলারের সরবরাহ না থাকায় তেমন লেনদেন হয়নি, চাহিদাও তেমন ছিল না। এদিকে, ডলার নিয়ে ভয়াবহ কারসাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে কিছু মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান, কিছুসংখ্যক অসৎ ব্যবসায়ী ও কয়েকটি ব্যাংক জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, অসৎ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ডলারের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন এমন ধারণাও করা হচ্ছে। এজন্য এসব প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকের লেনদেনের প্রতি পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

অনেকে অভিযোগ করেছেন, সিন্ডিকেট করে ডলারের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ব্যাংক ও কার্ব মার্কেট সংশ্লিষ্টরা ব্যবসা করার জন্য ডলারের দর বাড়াচ্ছেন। কিছু ব্যাংক ডলার বিক্রি করে বিশাল অঙ্কের মুনাফা করছে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দর ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। এ দর নির্ধারণ করেই বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে। ব্যাংকগুলো বাস্তবে এলসি খুলতে ডলারে দর রাখছে ৯৩-৯৪ টাকা। অর্থাৎ প্রতি ডলারে ব্যাংকগুলোর মুনাফা হচ্ছে ৫-৬ টাকা। খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯৭-৯৮ টাকায়। এখানে মুনাফা করছে ৯-১০ টাকা। এজন্য এ খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে স্থায়ী এবং কার্যকর সমাধানের জন্য নীতির জায়গাটা আগে ঠিক করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের দাম বেড়েছে এটা সত্যি। চাহিদার তুলনায় জোগানের ঘাটতি রয়েছে এও সত্যি। রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় অনেক বেশি। সেজন্যই এ বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যার ফলে বাজারে ডলারের সংকট রয়েছে। কিন্তু এ সংকট আরও বেশি ঘনীভূত করা এবং কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে বাজারে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী, কয়েকটি মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত শুরু করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেগুলো সময়োপযোগী। একই বিলাসী পণ্যের আমদানি কিছুদিন বন্ধ রাখা, গাড়ি আমদানির প্রতি নিয়ন্ত্রণ ও আরোপ আমদানি পণ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। একইভাবে খোলাবাজার ব্যাংকের মধ্যে ডলারের রেটের যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে তা কমিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও একটা নির্দিষ্ট রেট ঠিক করে দেওয়া উচিত। মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো ডলার মজুদ করে কারসাজির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে কি না সে বিষয়েও বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ‘কার্ব মার্কেটটা খুবই ছোট। কিন্তু এখানে হিউজ লেনদেন হয়। কেননা দীর্ঘ আড়াই বছরের করোনা মহামারির পর মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। এতে মানুষের বিদেশ ভ্রমণ বেড়েছে। ভ্রমণের জন্য বেশির ভাগই খোলাবাজার থেকেই ডলার কেনেন। তবে মূল মার্কেট হচ্ছে ব্যাংক। এ বাজারেও স্বচ্ছতার ঘাটতি থাকতে পারে।’ এখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এই গভর্নর। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী বিভিন্ন পণ্যের এলসি বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। ফলে আমদানিতে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। ডলারের যে পরিমাণ চাহিদা বিপরীতে ডলার আহরণের উৎস সে অনুযায়ী হয়নি। যেখানে আমদানি বেড়েছে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি, রপ্তানি সেখানে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে প্রতি বছর প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স হিসেবে প্রবাসীরা পাঠালেও এ বছর সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। সাত-আট মাস ধরে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছে না বাংলাদেশ। আবার এর সুযোগও কাজে লাগাচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র। বাজারে সত্যিকারের সংকট কাজে লাগিয়ে রেট বাড়াতে ডলার থাকলেও তা ধরে রাখছে মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো। 

এদিকে দেশে এখন আমদানির জন্য যে পরিমাণ অর্থ বা ডলার খরচ হচ্ছে, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে তা মিটছে না। এর ফলে সংকট তৈরি হয়েছে। প্রতি মাসে প্রায় ১০০ কোটি ডলার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আমদানি ব্যয় বেড়েছে জ্বালানি, ভোগ্যপণ্য, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজভাড়া বাড়ার কারণে। ডলার-সংকট মোকাবিলায় বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক, আর সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাতিল করেছে সরকার। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭