ইনসাইড থট

রাইস ব্র্যান তেল কেন খাবেন?


প্রকাশ: 19/05/2022


Thumbnail

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি যখন রাইস ব্র্যান তেল খাওয়ার পরামর্শ দিলেন তখন সয়াবিনের মূল্য ঊর্ধমুখী। দুষ্প্রাপ্যও বটে। তিনি রাইস ব্র্যান তেলের পক্ষে সাফাই গাইতে যেয়ে আমাদের তিন চার দশকের সঙ্গী সয়াবিন তেলের বেশ বদনাম করেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রীর কথা শুনে অনেকেই বলছেন, আঙ্গুর ফল টক। মন্ত্রী বলেছেন, সয়াবিন তেল শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাতে অনেকেই উপহাস করছেন। কিন্তু যারা অনুসন্ধিৎসু, ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করেন, তারা জানেন রাইস ব্র্যান তেলের গুণাগুণ। গুণ জানলে মনে হবে, তিনি শতভাগ সত্যি কথা বলেছেন। হয়তো 'অসময়ে' বা 'দুঃসময়ে' বলেছেন বলে অনেকেই পাত্তা দিচ্ছেন না বা উপহাস করছেন।

রাইস ব্র্যান তেল চালের তুষ থেকে তৈরি করা হয়। ধানের তুষ সাধারণত পশুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয় বা বর্জ্য হিসাবে ফেলে দেয়া হয়। স্বাস্থ্য  উপকারিতার জন্য এটি সম্প্রতি তেল হিসাবে অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সাধারণত জাপান, ভারত এবং চীন সহ এশিয়ার অনেক দেশে রান্নার তেল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, দেশে এখন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন রাইস ব্র্যান তেল উৎপাদন হয়। সেটি মোট চাহিদার দুভাগ মাত্র। তবে সেটিকে মোট চাহিদার ২৫ শতাংশ উৎপাদনের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। এখন দেখে নেয়া যাক, যে দশটি চিত্তাকর্ষক সুবিধার জন্য আপনি রাইস ব্র্যান তেল খাবেন।

এক. উপকারী পুষ্টি রয়েছে: রাইস ব্রান তেল অসম্পৃক্ত চর্বি, ভিটামিন ই এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির একটি ভাল উৎস। এক টেবিল চামচ তেলে ১২০ ক্যালোরি এবং ১৪ গ্রাম ফ্যাট থাকে। ভিটামিন ই থাকে দৈনিক চাহিদার প্রায় ৩০ ভাগ। ক্যানোলা এবং অলিভ অয়েল জাতীয় দামি তেলের মত, রাইস ব্র্যান তেলে হৃদপিণ্ডের জন্য স্বাস্থ্যকর অসম্পৃক্ত চর্বি বেশি থাকে।

দুই. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে: রাইস ব্র্যান তেল ইনসুলিন প্রতিরোধের উন্নতি করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যা টাইপ টু  ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণ। ইঁদুরের উপরে গবেষণায় দেখা গেছে, রাইস ব্র্যান তেল ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে। ২০১৮ সালে জাপানের একটি মানব গবেষণায় অনুরূপ ফলাফল পাওয়া গেছে। যেদিন সকালে ১৯ জন সুস্থ ব্যক্তি খাবারের সাথে এ তেল ৩ দশমিক ৭ গ্রাম খেয়েছিলেন, তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা শতকরা ১৫ ভাগ কমে গিয়েছিল।

তিন. হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে: রাইস ব্র্যান তেল হৃদপিণ্ডকে চাঙ্গা রাখে। কোলেস্টেরল কমায়।  রক্তচাপ কমায়। কোলেস্টেরল কমানোর কারণে জাপান সরকার এটিকে স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। ইঁদুরের প্রাথমিক গবেষণায় দেখা যায়, রাইস ব্রান তেল উল্লেখযোগ্যভাবে এল ডি এল (খারাপ) কোলেস্টেরল কমায়। এইচ ডি এল (ভাল) কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। ২০০৯ সালে থাইল্যান্ডে ওপর একটি মানব গবেষণাতে  একই ফল পাওয়া যায়। এগারোটি গবেষণা নিয়ে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, এ তেল ব্যবহারকারীদের কোলেস্টেরল গড়ে ৬ দশমিক ৯ মিলিগ্রাম কমেছে। এক মিলিগ্রাম কমলেই হৃদরোগের ঝুঁকি এক থেকে দুই শতাংশ কমাতে পারে।

চার. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব রয়েছে: রাইস ব্র্যান তেলে থাকা বেশ কিছু যৌগের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব রয়েছে। এই যৌগগুলির মধ্যে একটি হল ওরিজানল, যা ইনফেকশন ছড়ায়  এমন বেশ কয়েকটি এনজাইমকে দমন করতে পারে।  এটির  কার্যকারিতা রক্তনালী এবং হৃদপিণ্ডে বেশি। এ ইনফেকশন বন্ধ বা প্রতিরোধ করতে না পারলে হৃদপিণ্ডের রক্তনালীকে চিকন করে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

পাঁচ. ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে: টোকোট্রাইয়েনল নামের একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।  টেস্ট-টিউব এবং প্রাণীজ গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে টোকোট্রিয়েনলগুলি স্তন, ফুসফুস, ডিম্বাশয়, লিভার, মস্তিষ্ক এবং অগ্ন্যাশয় সহ বিভিন্ন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি দমন করে। একটি টেস্ট-টিউব গবেষণায় দেখা গেছে, এই টোকোট্রাইয়েনল  আয়নাইজিং বিকিরণের সংস্পর্শে থাকা মানব এবং প্রাণী কোষগুলিকে রক্ষা করে বলে মনে হয়। আয়নাইজিং বিকিরণের উচ্চ মাত্রা ক্যান্সারের মতো ক্ষতিকারক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। তবে মনে রাখবেন, এ  তেল ক্যান্সারের চিকিৎসা  হিসাবে নয়, প্রতিরোধ করতে পারে।

ছয়. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে: চালের তুষের তেল আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে পারে। যা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং অন্যান্য রোগ সৃষ্টিকারী জীবের বিরুদ্ধে আপনার শরীরের প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন। ইঁদুরের কোষে একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে যে, রাইস ব্র্যান তেলের একটি উপাদান 'অরিজানল' রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যাহোক, এটি স্পষ্ট নয় যে, এই প্রভাবটি মানুষের মধ্যে ঘটে কিনা।

সাত. ত্বকের স্বাস্থ্য বাড়াতে পারে: রাইস ব্র্যান তেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। ২০১২ সালে থাইল্যান্ডের একটি গবেষণা মতে, যাঁরা দৈনিক দুবার রাইস ব্রান নির্যাস যুক্ত জেল এবং ক্রিম ব্যবহার করেছেন, তাঁরা পরে হাতের ত্বকের পুরুত্ব, রুক্ষতা এবং স্থিতিস্থাপকতার উন্নতি অনুভব করেছে। যদিও এ বাপারে পর্যাপ্ত গবেষণা এখনো হয়নি, তবু খেয়াল করবেন যে, বাজারে বেশ কয়েকটি ময়েশ্চারাইজারে বা ওই জাতীয় পণ্যগুলিতে রাইস ব্র্যান তেল থাকে।

আট. কিডনি স্টোন রোগীদের জন্য ভালো: রাইস ব্র্যান তেল ক্যালসিয়াম শোষণ কমাতে সাহায্য করতে পারে। সুতরাং, এটি কিডনিতে নির্দিষ্ট ধরনের পাথরের গঠন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

নয়. থাইরয়েডের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে: থাইরয়েডের জন্য রাইস ব্রান তেল  একটি চমৎকার পরিপূরক। এটি হাইপারথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে থাইরয়েড-উত্তেজক হরমোনের মাত্রা (টিএসএইচ) কমায়। উপরন্তু, এটি হাইপোথ্যালামাসের কাজকে প্রভাবিত করে। ফলে এটি যে কোনো ধরনের কর্মহীনতা প্রতিরোধ করে।

দশ. মেনোপজ পরবর্তী লক্ষণগুলি হ্রাস করে: রাইস ব্রান তেল মেনোপজ কালীন মহিলাদের এর সাথে সম্পর্কিত লক্ষণগুলিকে হ্রাস করে। এই লক্ষণগুলির মধ্যে গরম ঝলকানি এবং অন্যান্য জ্বালা অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও, এটি লুটিনাইজিং হরমোন উৎপাদনে বাধা দেয়, যা হরমোনের মাত্রায় আকস্মিক পরিবর্তনের জন্য দায়ী।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭