ইনসাইড বাংলাদেশ

সিলেটে বন্যায় ৭ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ


প্রকাশ: 20/05/2022


Thumbnail

বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেট। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকের ঘরে নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি। বিদ্যুৎহীন ভাবেও অনেকে দিন কাটাচ্ছেন। এক ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি উত্তর পূর্বাঞ্চলের মানুষ। পানিতে ভাসছে নগর থেকে গ্রামগঞ্জের বাড়ি-ঘর, হাটবাজার। রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। অনেক এলাকার সঙ্গে জেলা ও উপজেলা সদরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যার পানি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ঢুকে পড়েছে। যে কারণে সরকারি ঘোষণা ছাড়াই জেলার সাত শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, জেলার পাঁচ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। আরও ২০০ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যা দুর্গতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ কারণে জেলার অন্তত সাত শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

গত ১০ মে থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়, যা এখনো চলমান। একই সঙ্গে উজান থেকে নামছে ঢল। এতে গত ১১ মে থেকেই সিলেটের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করে। আর গত ১৩ মে থেকে পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করে সিলেট নগর। এখন বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেট সদর উপজেলার লামা আকিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা রাবিয়া জুবেরী জানান, তার স্কুলের ক্লাসরুমের ভেতরেই হাঁটু পানি রয়েছে। একারণে গত সোমবার থেকে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।

বন্যার কারণে নগরের বেশকিছু কিন্ডারগার্টেন স্কুলও বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে নগরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নবাব রোডস্থ আল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কলাপাড়াস্থ জালালাবাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লামাপাড়াস্থ সানরাইজ স্কুল, ঘাসিটুলা মাদরাসা, ঘাসিটুলা গ্রিনবার্ড স্কুলসহ এই ওয়ার্ডেই অন্তত ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ৪০০টি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন এরশাদ বলেন, বন্যাকবলিত এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পানি চলে আসায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলার সব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। যে বিদ্যালয়গুলোতে এখনো পানি ওঠেনি, সেগুলোকে প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।

এদিকে, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় দেড়শো মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় পানি উঠেছে। এগুলোতেও পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, বন্যার পানিতে কানাইঘাটে ৪২টির মধ্যে ৩৭টি, বিশ্বনাথে ৫১টির মধ্যে পাঁচটি, জৈন্তাপুরে ৩২টির মধ্যে ১২টি, সদরের ৯৫টির মধ্যে ১৮টি, গোয়াইনঘাটে ৪৮টির মধ্যে ১৮টি ও কোম্পানীগঞ্জের ২৬টির মধ্যে ১৫টি বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ সুরমা ও নগরে আরও ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ মোট ১২৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।

তিনি বলেন, পানি বৃদ্ধির কারণে প্লাবিত বিদ্যালয়ের সংখ্যাও বাড়ছে। এগুলোতে আপাতত পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া আরও অনেক বিদ্যালয়ে পানি না প্রবেশ না করলেও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

জেলাপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা ও মহানগর এলাকায় মোট ২৭৪টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৫২টি ও নগরে ২২টি। এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অনন্ত ২০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭