ইনসাইড পলিটিক্স

দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো নীতিতে বিএনপি


প্রকাশ: 20/05/2022


Thumbnail

শেষ পর্যন্ত কুমিল্লায় বিএনপির জনপ্রিয় নেতা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বহিষ্কারের সংখ্যা এক ডজন পূর্ণ হলো। বিএনপির নেতারা বলছেন, এই বহিষ্কার অব্যাহত থাকবে। এর আগে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির জনপ্রিয় নেতা তৈমুর আলম খন্দকারকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত হয়েছেন দলের আরেক জনপ্রিয় নেতা মেজর (অব:) আখতারুজ্জামান। দলের সব পদ হারিয়েছেন চাঁদপুরের জনপ্রিয় নেতা এহসানুল হক মিলন এবং খুলনায় বিএনপির জনপ্রিয় নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদের এভাবে বহিষ্কার এবং পদচ্যুত করছে কেন, এ নিয়ে বিএনপির মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।

বিএনপির নেতারা বলছেন যে, তারেক জিয়ার একক সিদ্ধান্তে এই বহিষ্কারাদেশ এবং পদচ্যুতির বিষয়গুলো নির্ধারিত হচ্ছে। এখানে তাদের কিছু করার নেই। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন যে, এটি দলের জন্য একটি সুস্পষ্ট বার্তা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন যে, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো -এই নীতিতে এগোতে চাচ্ছেন তারেক জিয়া। বিএনপিতে একাধিক আলোচনায় লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন যে, কোন নেতার শক্তিতে বিএনপি চলে না, বিএনপি চলে জিয়া পরিবারের ইমেজে। কাজেই, তারা যাকে নেতা বানাবেন তিনিই নেতা। বিএনপিতে জিয়া পরিবারের বাইরে বিএনপিতে আলাদা কোন জনপ্রিয় নেতা নেই এবং থাকতে পারেনা।

উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূলের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে তারেক জিয়া এটাও বলেছেন যে, দলের শৃঙ্খলা ব্যাপারে তিনি শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করবেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এই বার্তাটি দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দিয়েছেন। অতীতে দেখা গেছে যে, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যারা জনপ্রিয় নেতা তাদের কিছু কিছু কর্মকাণ্ডকে সহ্য করা হয় বা হজম করা হয়। কিন্তু বিএনপি এখন সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। বিএনপি মনে করছে যে, তারা জনপ্রিয় হয়েছেন বিএনপির কারণেই। বিএনপির বাইরে গিয়ে তাদের কোন জনপ্রিয়তা নেই। কিন্তু বিএনপির মধ্যে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ এবং প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তবে কেউ প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন।

প্রশ্ন উঠছে যে, এভাবে ঢালাওভাবে জনপ্রিয় নেতাদের বহিষ্কার করার ফলে কি বিএনপি লাভবান হবে না ক্ষতিগ্রস্ত হবে? এই নিয়েও বিএনপির মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন যে, এটি বিএনপির জন্য নতুন বিপর্যয় ডেকে আনবে। কারণ, যাদেরকে বহিষ্কার করা হচ্ছে তারা এলাকায় শুধু জনপ্রিয় নয় তাদের শক্তিশালী কর্মীবাহিনী রয়েছে। একজন নেতা যখন বহিষ্কৃত হন তখন তার কর্মীরাও আর দলের সঙ্গে থাকে না। বিএনপি যদি আন্দোলন-সংগ্রাম করতে চায় তাহলে এই কর্মী, এই নেতৃত্ব লাগবে। কারণ, সবাই জনপ্রিয় নেতা হতে পারে না। এ প্রসঙ্গে সাক্কুর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন যে, কুমিল্লা বিএনপির জন্য একটি বড় ভোটব্যাঙ্ক ছিল। কিন্তু এখন এই ভোটব্যাঙ্ক আর বিএনপির দখলে থাকলো না। মনিরুল হক সাক্কু যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে বিজয়ী হন তাকে আওয়ামী লীগ হয়ত টানবে এবং এর ফলে কুমিল্লার রাজনীতিতে বিএনপি একটি বড় হোঁচট খাবে। শুধু কুমিল্লা নয়, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুরেও দেখা যাচ্ছে যে, সাংগঠনিকভাবে বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়ছে। কাজেই রাজনৈতিক দলে এরকম কঠোর অবস্থান কতটুকু ইতিবাচক ফল আনবে, সেটি এখন বড় প্রশ্ন। কিন্তু বিএনপির এই কঠোর অবস্থানে কোনো কোনো নেতা খুশি। তারা মনে করছেন যে, এর ফলে অন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি বার্তা যাবে এবং সেই বার্তাটা বিএনপির শৃঙ্খলা এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭