নির্বাচনের আর দেড় বছর বাকি আছে। কিন্তু এর মধ্যেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভেতর নানারকম অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দেশে ব্যাপক উন্নতি হচ্ছে। আগামী মাসে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে, অন্যান্য মেগা প্রকল্প গুলোর কাজও শেষ পর্যায়ে। বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় নিজেদেরকে অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে। কিন্তু এতকিছুর পরও আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্বস্তি, শঙ্কা দানা বেঁধে উঠছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী মনে করেন যে, নির্বাচন জয়ের জন্য শুধু উন্নয়ন নয় আরো কিছু প্রয়োজন এবং সাফল্যের মত ব্যর্থতাগুলোও মূল্যায়িত হওয়া প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীদের ধারণা, কিছু কিছু কারণে আওয়ামী লীগ সরকার ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। পাঁচটি কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. অস্থির বাজার: দ্রব্যমূল্য এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রধান মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা নিজেই বলেছেন যে, বাজারে গেলে তাদেরই নাভিশ্বাস উঠছে, সাধারণ মানুষের অবস্থা তো আরো। এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তাহলে সব উন্নয়ন অর্জন ম্লান হয়ে যেতে পারে।
২. কিছু কিছু মন্ত্রীর ব্যর্থতা: আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন কিছু কিছু মন্ত্রীর প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। তারা বলেন, এ সমস্ত মন্ত্রীদের অযোগ্যতা এবং ব্যর্থতার দায়ভার দলকে নিতে হচ্ছে। বিশেষ করে বাণিজ্য, খাদ্য, শিক্ষা, রেলমন্ত্রীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের ঘরের ভিতর এখন তুলকালাম হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করছেন যে, এ সমস্ত ব্যর্থ মন্ত্রীদের নিজেদেরই সরে যাওয়া উচিত।
৩. আন্তর্জাতিক চাপ: আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অস্বস্তি একটি বড় কারণ মনে করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক চাপ। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর একের পর এক চাপ সৃষ্টি করছে বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন। এই চাপ মোকাবেলার একটা কৌশল আওয়ামী লীগকে দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে বলেই তাদের ধারণা। কারণ, আগামী নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর একটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে তাদের ধারণা।
৪. দলের কোন্দল: আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আরেকটি বড় অস্বস্তির কারণ হলো দলের ভেতর কোন্দল। দলের ভেতর চেইন অব কমান্ড নেই, বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে তৃণমূল, একের পর এক নেতাকর্মীরা ফ্রি-স্টাইলে কথা বলছেন, সারা দেশে কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং এই কাউন্সিলের মাধ্যমে যদি দলকে সংগঠিত না করা যায় এবং কোন্দল যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য সেটি একটি বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও অনেকে মনে করেন।
৫. অর্থনৈতিক সংকট: ক্রমশ দেশে অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছে। যদিও এর পেছনে কিছু বাস্তব কারণ রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে দুই বছর করোনা এবং তার আগে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা। এই সবকিছু থেকে বাংলাদেশ উতরে গেলেও এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ দানা বেঁধে উঠছে। ইতিমধ্যে সরকার কৃচ্ছতা সাধনের জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ যাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু এসবের পরও সামনের দিনগুলোতে যে অর্থনৈতিক সংকট হবে, সেই সংকট আগামী নির্বাচনের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকের ধারণা। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, নির্বাচনের আগে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।