আল-জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে হত্যার সময় গোলাগুলি চলছিল, ইসরায়েলি বাহিনীর এমন দাবীকে মিথ্যাচার বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। হত্যার সময় ধারণকৃত ভিডিও চিত্রেও এমনটাই দেখা গেছে।
ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, শিরিন আবু আকলেহকে হত্যার সময় আশপাশের অবস্থা ছিল শান্ত। হত্যাকান্ডের আগ মুহূর্তেও কোন রকম হট্টগোল ছিলনা।
ভিডিওটি ধারণ করেছেন জেনিনের একজন বাসিন্দা। সেটি যাচাই করে দেখেছে আল-জাজিরা। ঘটনার শুরুতে দেখা যায়, কোনো ধরনের গোলাগুলির শব্দ নেই। শিরিনকে গুলি করার সময় ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের যে দাবী তা ভিডিও ফুটেজের সাথে মিলে যাচ্ছে। অথচ ইসরায়েলের দাবি, তখন সংঘর্ষ চলছিল।
১১ মে দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর একটি অভিযানের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন শিরিন (৫১)। এ সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে তিনি নিহত হন বলে জানান ঘটনাস্থলে থাকা তাঁর সহকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
পরিবেশ এতোটাই শান্ত ছিল যে, ভিডিও চিত্রে দেখা যায় শিরিনসহ সামনে থাকা কিছু লোক পেছনের লোকজনের সঙ্গে কথা বলছিল ও হাসছিল। প্রেস লেখা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিহিত তাঁর কয়েকজন সহকর্মীকেও এই ভিডিওতে দেখা যায়।
গুলির শব্দ শুরুর আগে যেখানে ইসরায়েলি সেনারা অবস্থান করছেন, সেদিকে শিরিন ও অন্য সাংবাদিকদের হেঁটে যেতে দেখা যায়। সেনারা হঠাৎ গুলি ছোড়া শুরু করলে তাঁরা পালাতে শুরু করেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শিরিনকে সড়কে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
যে বন্দুকের গুলিতে শিরিন নিহত হয়েছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সম্ভবত সেটি শনাক্ত করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে তারা। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ফিলিস্তিনকে বুলেটটি হস্তান্তর করতে বলছে। আস্থাহীনতার অতীত অভিজ্ঞতার কারণে তারা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে বুলেট হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা তাদের নিজস্ব তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
শিরিন হত্যাকাণ্ড তদন্তের পরিকল্পনা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর নেই বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলি বাহিনীকর্তৃক সাংবাদিক হত্যার ঘটনা নতুন কিছু নয়। নিকট অতীতে এমন আরো বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড ঘটেছিল যেখানে সাংবাদিকদেরই চিহ্নিত করে হত্যা করা হয়েছিল।
এদিকে গত শুক্রবার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি পুলিশ কর্মকর্তারা জেরুজালেমে শিরিনের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের আগে শোকমিছিলে ‘শোকার্তদের লাঠিপেটা করেছিলেন ও লাথি মেরেছিলেন’। পাশাপাশি ‘প্যালবেয়ারদের (কফিন বহনকারী) একরকম কফিন ফেলতে বাধ্য করেছিলেন’ তাঁরা।
নারী সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ তাঁর নিবেদিত কর্মজীবনে নিজেকে ফিলিস্তিনি মানবতার সঙ্গে অঙ্গীভূত করেছিলেন, শক্তিশালী পক্ষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সত্য বলে গেছেন। পরিণামে দখলদার শক্তি (ইসরায়েলি বাহিনী) মাথায় গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁর কণ্ঠকে থামিয়ে দিয়েছে।